ল্যান্ডলাইন না-থাকলেও এ বার মিলবে বিএসএনএল-এর ব্রডব্যান্ড পরিষেবা। বেসরকারি সংস্থার মতোই কেব্ল অপারেটরের মাধ্যমে গ্রাহকের দরজায় ওই পরিষেবা পৌঁছে দেবে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি।
নানা ছাড় বা বাড়তি সুবিধা দিলেও বিএসএনএলের ব্রডব্যান্ড পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ বিস্তর। তিতিবিরক্ত ব্রডব্যান্ড গ্রাহকদের অনেকেই সংস্থার পরিষেবা ছেড়েছেন। এ বার তাই ব্যবসা ধরে রাখতে আর পাঁচটি বেসরকারি ইন্টারনেট পরিষেবা সংস্থার মতোই বিএসএনএল-ও বিকল্প পথের সন্ধানে। সেই সূত্রেই কেব্ল অপারেটরদের মাধ্যমেও ইন্টারনেট পরিষেবা দেওয়ার ভাবনা তাদের। অবশ্য, সংস্থার ল্যান্ডলাইন ভিত্তিক ব্রডব্যান্ড পরিষেবাও চালু থাকবে।
এখনও পর্যন্ত ল্যান্ডলাইন থাকলেই বিএসএনএল-এর ব্রডব্যান্ড পরিষেবা নেওয়া যায়। ক্যালকাটা টেলিফোন্স-এ এখন প্রায় ১.৫ লক্ষ ব্রডব্যান্ড গ্রাহক রয়েছেন। কিন্তু গ্রাহকদের অনেকেরই অভিযোগ, কেব্ল কেটে গিয়ে বা অন্য কোনও বিপত্তির জেরে মাঝে মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায় পরিষেবা। অভিযোগ জানিয়েও সহজে সুরাহা হয় না। অনেক সময়ে ইন্টারনেটের গতি শ্লথ হয়ে যাওয়ায় কাজের সময়ে ভুগতে হয়। এর ফলে নতুন গ্রাহক সংযোগ নিলেও পুরনোরা ছেড়ে যাওয়ায় কার্যত খুব একটা লাভ হয় না বিএসএনএল-এর। কিন্তু প্রতিযোগিতার বাজারে ইন্টারনেট পরিষেবার সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎকে উপেক্ষা করে থাকা আর সহজ নয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটির পক্ষে।
তাই নিজেদের পরিকাঠামোর পাশাপাশি কেব্ল টিভি-র পরিকাঠামোকেও ব্যবহার করতে চাইছে তারা, যাতে আরও একটি বিকল্প ব্যবস্থার সুযোগ গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে বিএসএনএলের সংযোগ ছেড়ে যাওয়ার প্রবণতা কমবে বলেই তারা মনে করছে। প্রসঙ্গত, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা বা ‘মাল্টি সার্ভিস অপারেটর’ (এমএসও) বিএসএনএলের মতোই তাদের নিজস্ব পরিকাঠামোয় কেব্ল-অপারেটরদের মাধ্যমে ইন্টারনেট পরিষেবা দেয়।
ক্যালকাটা টেলিফোন্সের জেনারেল ম্যানেজার (বিক্রি ও বিপণন) অসীম কুমার সিংহ জানান, কেব্ল টিভি পরিষেবার পরিকাঠামোর মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড দেওয়ার জন্য আগ্রহী সংস্থার কাছে আবেদন চাইছেন তাঁরা। সংস্থা বাছাই হলে বিএসএনএল তাদের কাছে পরিষেবা পৌঁছে দেবে। তারপর গ্রাহকের দরজায় তা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সংস্থার। মোট আয়ের ৬৫ শতাংশ নেবে বিএসএনএল। বাকিটা পাবে অন্য সংস্থাটি। গোড়ায় এই পরিষেবা চালুর জন্য রাজারহাট এলাকাকেই বেছে নিচ্ছেন তাঁরা।
কিন্তু কেনই বা অন্যের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটিকে? এর কারণ মূলত দু’টি। প্রথমত, সংস্থার নিজের পরিকাঠামোয় কোথাও কেব্ল কেটে গেলে তা সারাতে অনেক সময়েই দেরি হয়। পাশাপাশি, তা বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে থাকায় সমস্যা বাড়ে। কর্তাদের দাবি, তাঁদের ইন্টারনেট পরিষেবার গতি অনেক ভাল হওয়া সত্ত্বেও এ জন্য গ্রাহকদের বিরক্তি বাড়ছে। দ্বিতীয়ত, রাজারহাটের মতো অনেক জায়গাতেই এখনও সে ভাবে জনবসতি মাথাচাড়া দেয়নি। ফলে সেখানে কেব্ল নিয়ে যাওয়ার খরচ ব্যবসায়িক ভাবে লাভজনক না-ও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কেব্ল-টিভি পরিষেবার পরিকাঠামোকে ব্যবহার করতে পারলে দুই সমস্যাই মিটবে।
সংস্থা-কর্তাদের বক্তব্য, কেব্ল-অপারটরেরা অনেক ছোট এলাকায় পরিষেবা দেয়। এবং সেই সংযোগ সাধারণত মাটির নীচের বদলে উপর দিয়েই যায়। ফলে এলাকায় স্থানীয় ভাবে কোনও বিভ্রাট হলে তা সহজে সংশ্লিষ্ট কেব্ল-অপারেটরের পক্ষেই মেরামত করা সম্ভব। পাশাপাশি বিস্তীর্ণ এলাকায় কেব্ল পাতার খরচও আপাতত বিএসএনএল-কে বইতে হবে না। সব মিলিয়ে বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এ বার নতুন পথে পা রাখতে চলেছে এই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy