Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
রূপায়ণ নিয়েই প্রশ্ন
Pure drinking water

পরিস্রুত জল বণ্টনে বাড়তি গুরুত্ব বাজেটে

কেন স্বস্তির কারণ নেই, তা কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের রিপোর্টেই পরিষ্কার।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দেবাশিস ঘড়াই
শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৯:২৫
Share: Save:

২০১৮-’১৯ আর্থিক বর্ষের বাজেট পেশ করতে গিয়ে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি দেশের ১১৫টি জেলাকে বেছে নিয়েছিলেন। যেখানে অন্যান্য পরিকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি জেলার প্রতিটি বাড়িতে পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহে যতটা গুরুত্ব দেওয়া দরকার ছিল, ততটা সে বার বটেই, তার আগের বাজেটেও তেমন ছিল না।


সোমবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বাজেটে দেশের ৪৩৭৮টি পুরসভার ২.৮৬ কোটি ট্যাপ-সংযুক্ত ‘হাউসহোল্ড’-এ (এক ঠিকানায় বসবাসকারী) পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহের কথা ঘোষণা করেন। যে ঘোষণাকে স্বাগত জানাচ্ছেন পরিবেশবিদেরা। কারণ, বাজেটে ‘ইউনির্ভাসাল কভারেজ অব ওয়াটার সাপ্লাই’-এর উল্লেখ এবং সে কারণে ‘জল জীবন মিশন (শহর)’ প্রকল্পের ঘোষণা পরিস্রুত পানীয় জলের গুরুত্বকেই ফের তুলে ধরেছে।


যদিও ‘জল জীবন মিশন’ প্রকল্পের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের কর্তাদের একাংশের দাবি,, ‘হাউসহোল্ড’-এর তুলনায় ট্যাপ-সংযোগের মাধ্যমে পানীয় জল সরবরাহের নিরিখে দেশে তালিকায় একেবারে নীচে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্যের মোট হাউসহোল্ডের মাত্র ৫.৭৭ শতাংশে ট্যাপ-সংযোগ রয়েছে। রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রের পাল্টা, “কেন্দ্রীয় প্রকল্প শুরু হওয়ার আগেই আমরা রাজ্যের ৬০% বাড়িতে নলবাহিত বা ট্যাপ-সংযোগের মাধ্যমে পানীয় জল দিয়েছি। এ সব ভুল তথ্য দিয়ে কেন্দ্র বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।’’
তবে পরিবেশবিদেরা জানাচ্ছেন, পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ ও কেন্দ্রের ‘অমরুত’ প্রকল্পের অধীনে ৫০০টি শহরে তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আগামী পাঁচ বছরে ২ লক্ষ ৮৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করলেও জল অপচয়ের বিষয়ে কিছু বলেননি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ওয়াটার রিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগের অধ্যাপক তথা ‘স্কুল অব এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ’-এর অধিকর্তা পঙ্কজকুমার রায়ের বক্তব্য, “দেশে প্রতি দিন যে পরিমাণ জল নষ্ট হয়, আগে তাতে লাগাম পরানো দরকার। এ ব্যাপারে অভিন্ন নীতির প্রয়োজন রয়েছে।”


রাজ্য আর্সেনিক টাস্ক ফোর্সের সদস্য দেবেন্দ্রনাথ গুহ মজুমদার আবার বলছেন, “পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই, বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং উত্তর ভারতের অনেক জায়গার ভূগর্ভস্থ জলে আর্সেনিক-ফ্লোরাইড প্রবণতা বাড়ছে। ফলে পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ খুবই প্রয়োজন।”


আন্তর্জাতিক গবেষক সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বের ১৭টি প্রবল জলসঙ্কটপূর্ণ দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১৩তম! কারণ, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১৮ শতাংশ এ দেশের নাগরিক হলেও পরিষ্কার জলসম্পদের পরিমাণ মাত্র ৪ শতাংশ! তাই এক পরিবেশবিদের সতর্কবার্তা, “প্রতি বছর বাজেটেই পরিস্রুত পানীয় জল নিয়ে কিছু বলা হয়। প্রস্তাবিত প্রকল্প বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত স্বস্তির কারণ নেই।”


কেন স্বস্তির কারণ নেই, তা কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের রিপোর্টেই পরিষ্কার। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৯৫১ সালে যেখানে বছরে মাথাপিছু পরিস্রুত জলের পরিমাণ ছিল ৫১৭৭ কিউবিক মিটার, ২০১১ ও ২০১৯ সালে তা নেমে দাঁড়ায় যথাক্রমে ১৫৪৫ এবং ১৩৬৮ কিউবিক মিটারে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, “হিসেব বলছে, ২০২৫ সালে বছরে বছরে মাথাপিছু পরিস্রুত জলের পরিমাণ কমে দাঁড়াবে ১২৯৩ কিউবিক মিটার। এবং ২০৫০ সালে তা আরও কমে দাঁড়াবে ১১৪০ কিউবিক মিটারে! ফলে পরিস্থিতি যে উদ্বেগজনক সে ব্যাপারে সংশয় নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nirmala Sitharaman Pure drinking water Budget 2021
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE