বুধবার বেঙ্গালুরুর বিক্ষোভে পুড়ছে বাস। ছবি: পিটিআই
প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা তোলায় বিধিনিষেধ এনে নতুন নিয়ম চালু করার সিদ্ধান্ত থেকে মঙ্গলবার সরে এল কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার। আগামী ১ মে থেকে নতুন প্রস্তাব চালু হওয়ার কথা ছিল।
শ্রমিক ইউনিয়নগুলির প্রতিবাদ, বিভিন্ন স্থানে কর্মী বিক্ষোভ এবং গত দু’দিন ধরে বেঙ্গালুরুতে উত্তাল প্রতিবাদের মুখে পিছু হটল তারা। এ ব্যাপারে বাজেটের আগে গত ১০ ফেব্রুয়ারি জারি করা বিজ্ঞপ্তিটি তিন মাস মলতুবি রাখার কথা এ দিন প্রথমে জানালেও পরে তা থেকে পুরোপুরি সরে আসার সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রক। প্রসঙ্গত, এর আগে পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড বা পিপিএফের টাকা তোলায় টাকা তোলায় কর বসিয়েও পিছু হটতে হয় কেন্দ্রকে। তবে এপ্রিলের পর থেকে পিএফের ৬০ শতাংশ টাকা তোলায় সুদে কর বসিয়েছে কেন্দ্র।
প্রভিডেন্ট ফান্ডের প্রস্তাবিত নতুন আইনের প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করছিলেন। তা এ দিন চরমে ওঠে বেঙ্গালুরুতে। সেখানে পোশাক শিল্পের কর্মীরা বাসে, গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। কিছু থানা লক্ষ করে ছোড়া হয় ইট-পাটকেল। লাঠি চালায় ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ।
এই বিক্ষোভের মুখে কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী বন্দারু দত্তাত্রেয় জানান, ‘‘বিভিন্ন কর্মী ইউনিয়নের আর্জি মেনেই এই সিদ্ধান্ত তুলে নেওয়া হল। এর আগে পিএফের টাকা তোলায় বিধিনিষেধের প্রস্তাবও ইউনিয়নের দাবি মেনেই নেওয়া হয়েছিল। এ বারও তাদের অনুরোধ শুনেই আমরা তা বাতিল করলাম।’’ পরে শ্রম মন্ত্রক এক বিবৃতিতে জানায়, ‘‘কর্মীরা এখন চলতি নিয়ম অনুসারেই পিএফের পুরো টাকা তুলতে পারবেন। এমনকী, নিয়োগকারীর অবদানের ৩.৬৭ শতাংশ টাকাও তোলা যাবে।’’
প্রসঙ্গত, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল বলেছিলেন, ‘‘আমি এই প্রস্তাব বাতিলের দাবি করছি। আমি নিজে কর্মী ছিলাম। জানি, পিএফ আমাদের একমাত্র সঞ্চয়। তা ঠিক মতো কাজে লাগানোর মতো যথেষ্ট জ্ঞান-বুদ্ধি আমাদের আছে। সরকার এতে হস্তক্ষেপ করবে কেন?’’
নতুন নিয়মটি কী ছিল?
• প্রতিবাদ পোশাক শিল্পের কর্মীদের, উত্তাল বেঙ্গালুরু
• কর্মীদের সমর্থন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরীবালের
• দেশ জুড়ে শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে পুরোপুরি পিছু হটল কেন্দ্র
এত দিন চালু থাকা আইন অনুযায়ী কমপক্ষে ১০ বছর চাকরি করার পরে কেউ অবসর নিলে অথবা অন্য কোনও কারণে চাকরি ছেড়ে দিলে পেনশন তহবিলের টাকা ছাড়া প্রভিডেন্ট ফান্ডে তাঁর জমা টাকার পুরোটাই তুলে নিতে পারতেন। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রক এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানায়, ৫৮ বছর বয়সের আগে কেউ অবসর নিলে অথবা অন্য কোনও কারণে চাকরি ছাড়লে তিনি পিএফে নিয়োগকারীর দেওয়া টাকা তুলতে পারবেন না। ওই টাকা তোলা যাবে ৫৮ বছর বয়স হলে তবেই।
প্রস্তাবিত নতুন আইন মানতে নারাজ ছিল শ্রম ইউনিয়নগুলি। আইএনটিইউসির রাজ্য সভাপতি এবং প্রভিডেন্ট ফান্ড অছি পরিষদের সদস্য রমেন পান্ডে বলেন, ‘‘প্রভিডেন্ট ফান্ডে যে-টাকা নিয়োগকারী কোনও কর্মীর অ্যাকাউন্টে জমা দেন, তা আদতে সেই কর্মীরই অর্জিত টাকা। ওই টাকা আটকে রাখার কোনও হক কেন্দ্রীয় সরকারের নেই।’’ এসইউসির শ্রম সংগঠন এআইইউটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক এবং পিএফের অছি পরিষদের সদস্য শঙ্কর সাহা বলেন, ‘‘প্রভিডেন্ট ফান্ডে যে-টাকা কর্মীর অ্যাকাউন্টে জমা হয়, তার পুরোটারই মালিক সেই কর্মী। তাই ওই টাকা কখন তিনি তুলবেন, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্ণ অধিকার তাঁকে দেওয়া উচিত। তিনি আগে চাকরি ছাড়লেও যদি মনে করেন ৫৮ বছর পর্যন্ত নিয়োগকারীর অংশের টাকা তিনি পিএফে রেখে দেবেন, তা হলে তাঁকে সেই সুযোগ দেওয়া উচিত। তবে তিনি যদি মনে করেন, যখন চাকরি ছাড়বেন, তখনই ওই টাকা তুলে নেবেন, তা হলে তা আটকে রাখার অধিকার সরকারের নেই।’’ পিএফের অছি পরিষদে এআইটিইউসির প্রতিনিধি ডি এল সচদেবেরও অভিযোগ, ‘‘শ্রমমন্ত্রী একতরফা ভাবে সিদ্ধান্ত নেন। অছি পরিষদেরও অনুমোদন নেওয়া হয়নি।’’
প্রভিডেন্ট ফান্ডের নিয়ম অনুযায়ী কোনও কর্মী কমপক্ষে ১০ বছর চাকরি করলে তবেই পিএফের পেনশন পাওয়ার অধিকারী হন। আগে চাকরি ছাড়লেও সাধারণ ভাবে পেনশন কিন্তু তিনি পেতে শুরু করবেন ৫৮ বছর বয়স হলে তবেই।
অবশ্য আগে পেনশন নেওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। তবে সে ক্ষেত্রে প্রথমত কর্মীর বয়স কমপক্ষে ৫০ বছর হতে হবে। দ্বিতীয়ত, তিনি নির্দিষ্ট হারের থেকে কম হারে পেনশন (রিডিউস্ড পেনশন) পাবেন। তাই পুরনো নিয়মের ক্ষেত্রেও কোনও কর্মী ৫৮ বছরের আগে চাকরি ছাড়লে পেনশন তহবিলের টাকা তুলে নিতে পারবেন না। তবে যেহেতু পুরনো ব্যবস্থা বহাল থাকছে, তাই কেউ দু’মাসের বেশি বেকার থাকলে পিএফ তুলে নেওয়ার আর্জি জানাতে পারবেন।
নিয়োগকারীর অংশের কতটা টাকা পিএফ অ্যাকাউন্টে জমা থাকে? দুই একটি ক্ষেত্র ছাড়া সাধরণত কর্মীর বেতনের ১২ শতাংশ এবং নিয়োগকারীর অংশের আরও ১২ শতাংশ প্রভিডেন্ট ফান্ডে আসে। নিয়োগকারীর দেওয়া ১২ শতাংশের মধ্যে ৮.৩৩ শতাংশ চলে যায় পেনশন তহবিলে। বাকি ৩.৬৭ শতাংশ জমা পড়ে কর্মীর পিএফঅ্যাকাউন্টে। পাট, চা শিল্প-সহ অল্প কয়েকটি ক্ষেত্রে ১২ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ করে টাকা জমা দিতে হয়। সে ক্ষেত্রে নিয়োগকরারীর দেওয়া অংশ থেকে পেনশন তহবিলের ৮.৩৩ শতাংশ বাদ দিয়ে বাকি ১.৬৭ শতাংশ টাকা জমা পড়ে কর্মীর পিএফ অ্যাকাউন্টে।
তবে সমস্ত ক্ষেত্রেই মাসে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতনের উপরই পিএফের টাকা কাটা হয়।
তবে নতুন আইন চালু হলে চাকরি শেষে পি এফের টাকা না-তুললেও তার উপর সুদ পেতেন পিএফ সদস্যরা। বর্তমান আইন অনুযায়ী চাকরি শেষের পর পিএফের টাকা না-তুললে তিন বছর পর্যন্ত ওই টাকায় সুদ গোনা হবে, তার পর নয়। এ দিকে বাড়ি/ফ্ল্যাট করা বা কেনা, কঠিন অসুখের চিকিৎসা, মেয়ের বিয়ে এবং সন্তানের পেশাদারি শিক্ষার ক্ষেত্রে পেনশন তহবিল ছাড়া পিএফের পুরো টাকাই যাতে তুলে নেওয়া যায়, সেই মর্মে এক প্রস্তাব এনেছে শ্রম মন্ত্রক। বিষয়টি এখন কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রকের বিবেচনাধীন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy