ঋণ খেলাপের সমস্যায় ধুঁকছে ব্যাঙ্কিং শিল্প। পাহাড়প্রমাণ অনুৎপাদক সম্পদের বোঝা চেপে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ঘাড়ে। এর সমাধান খুঁজতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হাত শক্ত করল কেন্দ্র। সময়ে শোধ হয়নি বা তা হওয়া কঠিন, এমন ধারের টাকা দ্রুত ফেরত পাওয়ার পথ প্রশস্ত করতে শীর্ষ ব্যাঙ্কের হাতে দেওয়া হল বাড়তি ক্ষমতা। এ জন্য প্রশাসনিক নির্দেশের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধন করল মোদী সরকার। বৃহস্পতিবার রাতে তাতে সই-ও করেছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির অনুৎপাদক সম্পদ ৬ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির কথায়, ‘‘এ অবস্থা চলতে পারে না।’’ সেই কারণেই শীর্ষ ব্যাঙ্কের হাত শক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। নতুন নিয়মে, ঋণ খেলাপ রুখতে ব্যাঙ্কগুলিকে চটজলদি দেউলিয়া আইন প্রয়োগের নির্দেশ দিতে পারবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। যাতে ঋণ খেলাপির সম্পত্তি বেচে, অলাভজনক শাখা বন্ধ করে, তার খরচ কমিয়ে কিংবা তেমন ব্যবসা ঢেলে সেজে যতটা সম্ভব ধারের টাকা দ্রুত উসুল করা যায়।
ঋণ খেলাপের সমস্যা়
অনুৎপাদক সম্পদ
সেপ্টেম্বর,২০১৬ মার্চ, ২০১৭* মার্চ, ২০১৮*
• বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক ৯.১% ৯.৮% ১০.১%
• রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ১১.৮% ১২.৫% ১২.৯%
•
ঋণ খেলাপ সবচেয়ে বেশি ইস্পাত, নির্মাণ ও ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে
•
এখন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির অনুৎপাদক সম্পদ ৬ লক্ষ কোটি
* আনুমানিক হিসেব
সমাধানে দাওয়াই
•
অনুৎপাদক সম্পদে রাশ টানতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হাতে বাড়তি ক্ষমতা
•
তার মাধ্যমে ব্যাঙ্কগুলিকে চটজলদি দেউলিয়া আইন প্রয়োগের নির্দেশ দেওয়ার স্বাধীনতা
•
সময়ে শোধ হওয়া শক্ত এমন
ঋণের ক্ষেত্রেও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা
•
দেউলিয়া আইন প্রয়োগের আগে সিদ্ধান্ত খতিয়ে দেখতে কমিটি
•
ঋণ খেলাপি সংস্থার সম্পদ বেচে, অলাভজনক শাখা বন্ধ করে, খরচ কমিয়ে টাকা ফেরতের বন্দোবস্ত
অনুৎপাদক সম্পদে রাশ টানতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হাতে বাড়তি ক্ষমতা
•
তার মাধ্যমে ব্যাঙ্কগুলিকে চটজলদি দেউলিয়া আইন প্রয়োগের নির্দেশ দেওয়ার স্বাধীনতা
•
সময়ে শোধ হওয়া শক্ত এমন
ঋণের ক্ষেত্রেও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা
•
দেউলিয়া আইন প্রয়োগের আগে সিদ্ধান্ত খতিয়ে দেখতে কমিটি
•
ঋণ খেলাপি সংস্থার সম্পদ বেচে, অলাভজনক শাখা বন্ধ করে, খরচ কমিয়ে টাকা ফেরতের বন্দোবস্ত
তথ্যসূত্র: রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ফিনান্সিয়াল স্টেবিলিটি রিপোর্ট (২০১৬) ও পিটিআই
অনেক সময় এ ধরনের ঋণের টাকার কিছুটা অন্তত ফেরত পেতে তার সুদ কমাতে হয়। কিছু ক্ষেত্রে তা বিক্রি করার প্রয়োজন পড়ে ঋণ ঢেলে সাজার (অ্যাসেট রিকনস্ট্রাকশন) সংস্থার কাছে। কিন্তু সে সব করতে গিয়ে পাছে দুর্নীতির কালি লাগে, তাই পিছু হঠতে বাধ্য হন ব্যাঙ্কের অফিসাররা। নতুন নিয়মে তাঁদের সাহস জোগানোর ব্যবস্থাও হয়েছে। বলা হয়েছে গোড়ায় তাঁদের সিদ্ধান্ত খতিয়ে দেখতে বিশেষ কমিটি গঠনের কথা। যাতে সিদ্ধান্তে ভুলের দায় অফিসারদের উপর না বর্তায়।
কেন্দ্রের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ এবং ট্রেড ইউনিয়নগুলি। স্টেট ব্যাঙ্কের কর্ণধার অরুন্ধতী ভট্টাচার্য বলেন, কেন্দ্র যে অনুৎপাদক সম্পদের সমস্যা নিকেশে দায়বদ্ধ, তা এই পদক্ষেপ থেকে স্পষ্ট। ওই ব্যাঙ্কেরই কলকাতা সার্কেলের সিজিএম পার্থপ্রতিম সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘অনুৎপাদক সম্পদ আদায়ে কড়া পদক্ষেপ করতে অফিসাররা আর দ্বিধা করবেন না।’’ অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় দাস বলেন, ‘‘অনিচ্ছাকৃত ভুল সিদ্ধান্তের জন্য অফিসাররা অতীতে শাস্তির মুখে পড়েছেন। নতুন ব্যবস্থায় তাঁদের সুরক্ষা বাড়বে।’’
তবে বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলছেন, এর মানে এই নয় যে, কাল থেকেই ঋণ খেলাপের সমস্যা উধাও হয়ে যাবে। তা সময়সাপেক্ষ। ব্যাঙ্কের সমস্ত খুঁটিনাটিতে শীর্ষ ব্যাঙ্কের নাক গলানোর রাস্তা এতে খুলে দেওয়া হল কি না, তা নিয়েও সংশয়ী তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy