Advertisement
E-Paper

খুদে হরফের জালেই বন্দি বিমার টাকা

এক মধ্যবয়সী মহিলা আবার স্নায়ুরোগের দামি ইঞ্জেকশন নিয়ে বাড়ি চলে যাওয়ার পরে জানতে পেরেছিলেন, ‘ডে কেয়ারে’ চিকিৎসা হওয়ায় ইঞ্জেকশনের টাকা পাবেন না। অন্তত এক রাত হাসপাতালে থাকতে হত।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৮ ০৩:১৩
বিমা সংস্থার নিয়মের কাগজপত্র খুঁটিয়ে না পড়ার মাসুল দিতে হয় গ্রাহকেই।

বিমা সংস্থার নিয়মের কাগজপত্র খুঁটিয়ে না পড়ার মাসুল দিতে হয় গ্রাহকেই।

চিকিৎসা বিমা করানোর সময়ে এজেন্টের আশ্বাস ছিল, ছানির অস্ত্রোপচার? ও তো জলভাত। বিমার টাকা পেয়ে যাবেন হেসেখেলে। কিন্তু বছর খানেক পরে ছানি কাটানোর সময়ে জানা গেল, বিমা করানোর অন্তত দু’বছর পরে ওই অপারেশনে টাকা পাবেন গ্রাহক। হাত কামড়ানো ছাড়া কিছু করার ছিল না। সঙ্গী আফশোস। বিমা সংস্থার নিয়মের কাগজপত্র খুঁটিয়ে না পড়ার!

এক মধ্যবয়সী মহিলা আবার স্নায়ুরোগের দামি ইঞ্জেকশন নিয়ে বাড়ি চলে যাওয়ার পরে জানতে পেরেছিলেন, ‘ডে কেয়ারে’ চিকিৎসা হওয়ায় ইঞ্জেকশনের টাকা পাবেন না। অন্তত এক রাত হাসপাতালে থাকতে হত। এ ঘটনা ঘটছে কেমোথেরাপির মতো জটিল চিকিৎসাতেও!

মুশকিল হল, এই সমস্ত কিছুই বিমার কাগজে খুদে হরফে লেখা থাকে। কিন্তু চোখ এড়িয়ে যায়। অনেকে আবার পাতা উল্টেও দেখেন না। তাই বিমা করেও শেষে চিকিৎসা করানোর সময়ে পকেট থেকে টাকা গোনার ঘটনা হামেশাই ঘটে।

করণীয়

পলিসি নথিটি অবশ্যই খুঁটিয়ে পড়ুন। একান্তই না পারলে, দেখুন অন্তত নীচের বিষয়গুলি—

• কোন কোন রোগে স্বাস্থ্য বিমার টাকা মিলবে না?

• কোন রোগে বা কোন ক্ষেত্রে কত পর্যন্ত কভারেজ? সর্বোচ্চ কত বেড ভাড়ার ঘরে থাকতে পারেন?

• বিমা সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া রয়েছে কোন কোন হাসপাতালের? থার্ড পার্টি অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের (টিপিএ) নাম কী?

• ক্যাশলেস (চিকিৎসার টাকা সরাসরি মিটিয়ে দেবে বিমা সংস্থাই) পরিষেবার সুবিধা মিলবে কোথায়?
১ জুলাই থেকে নিয়মে কিন্তু আরও কড়াকড়ি হয়েছে।

• কোথায় যেতে হবে রিইম্বার্সমেন্ট পদ্ধতিতে? অর্থাৎ, আগে গাঁটের কড়ি খরচ করতে হলেও, পরে সেই টাকার মোটা অংশ ফেরাবে বিমা সংস্থা।

• সব অসুখে চিকিৎসার পুরো টাকা পাওয়া যাবে? নাকি কিছু দিতে হবে পকেট থেকেও?

• কোন-কোন রোগে ডে-কেয়ার চিকিৎসায় বিমা মিলবে?

• বিমা করার পরে কত দিন পর্যন্ত ক্লেম করা যাবে না? বিমা বিনা ক্লেমে কত দিনের পুরনো হলে, অধিকাংশ রোগের চিকিৎসার টাকা পেতে অসুবিধা হবে না? কোন রোগে প্রথম দিন থেকে টাকা মিলবে, কোনটিতে নয়?

অনেক সময়ে বিমার টাকা পাওয়ায় বাধা হয় হালে চালু হওয়া নিয়ম সম্পর্কে না জানা। যেমন, একটি রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থা সম্প্রতি জানিয়েছে, মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার নিয়ম ও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে তারা এমন কোনও ল্যাবরেটরি রিপোর্ট গ্রাহ্য করবে না, যেখানে প্যাথোলজিতে স্নাতকোত্তর (এমডি) চিকিৎসকের সই নেই। কিন্তু অনেক গ্রাহক এখনও ওই নিয়ম সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন। ওই বিমা সংস্থারই এক কর্তার কথায়, অনেকের ক্লেম আটকে যেতে পারে এই কারণে।

রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থাগুলির প্রেফার্ড প্রোভাইডার নেটওয়ার্ক (পিপিএন) কমিটির অন্যতম সদস্য সৌরভ কারিওয়ালা বলেন, ‘‘যত টাকার
পলিসি, ততটাই কভারেজ তো মেলে না। কোন ক্ষেত্রে কত মিলবে, তা নথিতে লেখা থাকে। কিন্তু অধিকাংশ জনই তা পড়ার ধৈর্য দেখান না।’’ অনেকের অভিযোগ, ‘‘নথির ভাষা এত জটিল ও কথার এত আইনি মারপ্যাঁচ থাকে যে, মানে বোঝা কঠিন। সমস্যা হয় ক্লেমের সময়ে।’’

একটি রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থায় দেড় লক্ষ টাকার চিকিৎসা বিমা রয়েছে বেলগাছিয়ার বৃদ্ধ বাসিন্দা আদিত্যপ্রসাদ রায়ের। এপ্রিলে বাঁ চোখের ছানি কাটাতে গিয়ে বিল হয় ৪৭ হাজার টাকা। বিমা সংস্থা অনুমোদন করে ২২ হাজার টাকা। অথচ তার আগে একই হাসপাতালে ডান চোখের ছানি অপারেশনে ৪৫ হাজার টাকা বিলের মধ্যে পেয়েছিলেন ৪০ হাজার টাকার কিছুটা বেশি। এ নিয়ে তাঁর লড়াই গড়িয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় পর্যন্ত। জানা গিয়েছে, দ্বিতীয় অস্ত্রোপচারের সময় ওই বিমা সংস্থা টাকা দিয়েছে ‘কাস্টমারি ক্লজ রেট’-এর নিয়ম মেনে। বিমা সংস্থার সঙ্গে প্যাকেজের চুক্তিতে নেই, এমন ‘নন পিপিএন’ হাসপাতালে খরচ ঠিক করতে ওই এলাকার ‘পিপিএন’ হাসপাতালগুলির প্যাকেজ রেটের গড় করে খরচ ঠিক করা হয়। সংস্থার দাবি, ওটিই কম টাকা পাওয়ার কারণ। নিয়ম পড়া থাকলে, সমস্যা হত না।

চিকিৎসা বিমা আন্দোলনের কর্মী চন্দন ঘোষাল জানাচ্ছেন আরও নানা সমস্যার কথা। যেমন, পলিসির অঙ্ক অনুসারে হাসপাতালের কত টাকার ঘরে থাকা যাবে, তা ঠিক করা থাকে। কিন্তু বোঝার ভুলে অনেকে প্রাপ্যের থেকে বেশি দামের ঘরে ভর্তি হন। তার জন্য খেসারত গুনতে হয় তাঁকে।

আবার কারও হয়তো হাসপাতালে দু’হাজার টাকার ঘর পাওয়ার কথা। কিন্তু ভর্তির মুহূর্তে তা খালি না থাকায় পাঁচ হাজারি ঘরে থাকতে হল। তখন বিলের প্রতিটি পর্যায় থেকে ওই বাড়তি
টাকা বাদ দেয় বিমা সংস্থা। এই সব বিপদ এড়াতেই তাই খুদে হরফ মন দিয়ে পড়তে বলছে বিমা সংস্থাগুলি।

Medical Insurance Insurance Policy Health Insurance
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy