বাতিল নোট এ বার কেড়ে নিল হিরের জৌলুসও। যার জেরে শুধু ভারতে নয়, গোটা বিশ্বের হিরে ব্যবসারই কার্যত দমবন্ধ হওয়ার জোগাড়।
গুজরাতের বাণিজ্য নগরী সুরতে হিরে কাটা ও পালিশের কাজ প্রায় লাটে ওঠার অবস্থা। অথচ ভারতের পশ্চিম প্রান্তের এই শহরেই সারা বিশ্বের ৮০ শতাংশের মতো হিরে কাটা ও পালিশের কাজ হয়। এবড়ো-খেবড়ো পাথরে তাক লাগানো বিচ্ছুরণ আনতে ছোট্ট খুপরি কারখানা বা ঘরে একটানা ১০-১২ ঘণ্টা কাটান কারিগরেরা। তবে সে ব্যবসা চলে পুরোপুরি নগদে। আর মূল সমস্যা সেটাই। অবশ্য এই সঙ্কট মূলত তৈরি হয়েছে তুলনায় কম দামি হিরের ক্ষেত্রে।
শিল্পমহল সূত্র বলছে, নগদ অধরা। বহু কারিগরই তাই কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন। ব্যবসা তলানিতে ঠেকেছে অলি-গলিতে ছড়িয়ে থাকা হাজার হাজার সেই সব ব্যবসায়ীরও, যাঁরা পালিশ করা হিরে কারিগরদের থেকে নিয়ে বিভিন্ন সংস্থা বা ব্যবসায়ীর কাছে বেচেন।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের রুটি-রুজি হিরে শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে। যার মধ্যে বেশির ভাগই সুরতের। তবে শুধুমাত্র নগদের অভাব নয়, করফাঁকি আটকানো নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কড়া অবস্থানেও ফাঁপরে পড়েছেন এঁদের একাংশ। হিরে শিল্পে জড়িত যে শ্রেণির ব্যবসায়ীরা বেআইনি ভাবে কারবার চালিয়ে মুনাফা কামান বা কর ফাঁকি দেন, তাঁরা। সংশ্লিষ্ট এই ব্যবসায়ী মহলের আক্ষেপ, এখন কর সংক্রান্ত বৈধ কাগজপত্র দেখে তবেই হিরে কেনার ঝোঁক বেড়েছে। সেটা তাদের ঝুলিতে না-থাকার কারণেই মার খাচ্ছে ব্যবসা।
আর, ভারতে নোট বাতিলের হাত ধরে তৈরি হওয়া এই সমস্ত সমস্যার মাশুল গুনতে হচ্ছে সারা বিশ্বের হিরে ব্যবসাকেই। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, ভারতে হিরে কাটা-পালিশের কাজ কিছুটা থমকে থাকায় মূলত নিচু মানের ওই এবড়ো-খেবড়ো পাথরেই ছেয়ে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজার। যার জেরে মার খাচ্ছে পাইকারি বিক্রেতারা।
বিশ্বের অন্যতম সেরা হিরে খননকারী ও গয়না তৈরির সংস্থা ডি বিয়ার্সও তা কবুল করেছে। পাশাপাশি, তারা জানিয়েছে, ভারতে বাজার পড়তির দিকে। তাই হালে কম দামি গয়নায় ব্যবহৃত হিরের চাহিদা ও দামও কমছে। একই সুর কানাডার স্টর্নোওয়ে ডায়মন্ড ও ডোমিনিয়ন ডায়মন্ড-এর।
এ তো গেল পাইকারি বাজারের ছবি। নগদের আকালে খুচরো বাজারের অবস্থা ঠিক কেমন?
হিরে শিল্পের দাবি, নগদের অভাব যে ভারতে সাধারণ মানুষের হিরের গয়না কেনার আকাঙ্ক্ষায় বড়সড় কোপ ফেলেছে সেটা এই মুহূর্তে স্পষ্ট। কারণ, হাতে নগদ কম। শখ করে হিরের গয়না কেনাও তাই আপাতত শিকেয়। গয়না শিল্পের দাবি, শীতে বিয়ের মরসুমের হাত ধরে সাধারণত চাহিদা বাড়ে। কিন্তু এ বার ক্রেতার হাতে টাকা না-থাকায় বিক্রি প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কমেছে।
যদিও ভারতের হিরে কাটা ও পালিশের কাজে ফের গতি এলে পরিস্থিতি বদলাবে বলে আশা করছে সকলেই। কিন্তু কত দিন অপেক্ষা করতে হবে, তা নিয়ে দোলাচল থেকেই যাচ্ছে। এবং সংশ্লিষ্ট মহলের আশঙ্কা, হিরে ব্যবসার এই দুর্দিনে আশু দাঁড়ি পড়ার সম্ভাবনা নেই। ভোগান্তি বহাল থাকবে নতুন বছর শুরুর কয়েক মাসও। অর্থাৎ পার পাবে না ১৪ ফেব্রুয়ারির ভ্যালেন্টাইন্স ডে। উপহার হিসেবে যে-দিন ছোটখাটো হিরের গয়না বিক্রি করে মুনাফা মন্দ হয় না বিক্রেতাদের।
খুব দামি হিরে বা তা বসানো গয়নার ক্রেতাদের অবশ্য দুশ্চিন্তার কারণ নেই বলে জানাচ্ছে শিল্পমহল। কারণ তা কাটা ও পালিশের কাজ করে থাকে ইজরায়েল, বেলজিয়াম ও বড় বড় ভারতীয় সংস্থা। যারা ডিজিটাল লেনদেনেই ভরসা করে বেশি। ফলে নগদের টানে তাদের ব্যবসায় তেমন আঁচ পড়েনি।