E-Paper

লগ্নির বাজারে প্রকল্পের সমুদ্র! কী ভাবে বেছে নেবেন সঠিক বিকল্প, রইল হদিস

বাড়ি-গাড়ির মতো স্থাবর সম্পদ কেনা উচিত কী ভাবে? ঋণ নিয়ে নাকি সঞ্চয় করে? টাকা জমানো মানে এখন সীমাহীন ত্যাগ। আর ভোগ অনেক পরে।

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৬:৩৫

—প্রতীকী চিত্র।

লগ্নির বাজারে প্রকল্প তো অনেক। আবার এক একটি প্রকল্পের বিকল্পও একাধিক। ফলে অনেক সময়েই মানুষ বুঝে উঠতে পারেন না, তাঁর জন্য কোনটা ঠিক। কয়েকটি দিক ঝালিয়ে নিলে ভাবনাচিন্তাটা সহজ হতে পারে।

বাড়ি-গাড়ির মতো স্থাবর সম্পদ কেনা উচিত কী ভাবে? ঋণ নিয়ে নাকি সঞ্চয় করে? টাকা জমানো মানে এখন সীমাহীন ত্যাগ। আর ভোগ অনেক পরে। সমস্যা হল, জমায় সুদ কমে আসায় যত দিনে তহবিল জমবে, তত দিনে অভিষ্ট পণ্যটির দাম লাগামছাড়া হয়ে গিয়েছে। অন্য দিকে, ঋণ মানে ত্যাগ-ভোগ সবই এখন। জমার পাশাপাশি ঋণেও সুদ অনেক কমেছে। অদূর ভবিষ্যতে আরও কমতে পারে। সে কারণে ভাড়াবাড়িতে বসবাস করা মানুষ এখন কমে আসা কিস্তিতে ফ্ল্যাট কেনার কথা ভাবতেই পারেন। ভাড়ার টাকায় কিস্তি মেটানো গেলে মন্দ কী?

এ বার আসি ব্যাঙ্ক জমা বনাম মিউচুয়াল ফান্ডে। ব্যাঙ্কের সুদ কমেছে। আরও কমতে পারে। যাঁদের উঁচু হারে কর দিতে হয়, তাঁরা কর কাটার পরে হাতে পান আরও কম। এই অংশের মানুষের জন্য ফান্ডে লগ্নি যথাযথ। তবে যাঁদের নিয়মিত ও নিশ্চিত আয় প্রয়োজন তাঁরা ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরে টাকা রাখতেই পারেন। যাঁরা করের আওতায় পড়েন না, তাঁদের ক্ষেত্রে পুরো সুদ ঘরে আসবে। মূল বিবেচ্য যাঁদের সুরক্ষা, তাঁরাও ফান্ডের রাস্তায় পা বাড়াবেন না। আর ফান্ডে ঠিক বিকল্প কোনটা, আয় নাকি বৃদ্ধি? যাঁরা করের আওতায় পড়েন না, তাঁরা আয়ের পথ বাছতে পারেন। যাঁরা বেশি কর দেন বা বড় মেয়াদে সম্পদ সৃষ্টি করতে চান, তাঁরা ঝুঁকতে পারেন বৃদ্ধির বিকল্পে।

মিউচুয়াল ফান্ড নাকি শেয়ার? ঝুঁকি আছে দুটোতেই। ফান্ডে তুলনায় কম। এখানে পুঁজি ছড়িয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন খাতে। আবার বাজার সম্পর্কে জ্ঞান ও ঝুঁকি নেওয়ার সামর্থ থাকলে শেয়ারে সরাসরি লগ্নির কথা ভাবা যেতে পারে। অন্য দিকে, এসআইপি পথে ফান্ডে লগ্নি করে লম্বা মেয়াদে কম ঝুঁকিতে বড় সম্পদ গড়া যেতে পারে।

আয়করে নতুন কাঠামো নাকি পুরনো কাঠামো? নতুনে বার্ষিক ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে কর গুনতে হবে না। যদিও তাতে অনেক ছাড়ই নেই। অন্য দিকে পুরনো কাঠামোয় কর দিতে হয় না ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। সেখানে আবার একগুচ্ছ ছাড়। মোটা ছাড় পাওয়ার থাকলে অঙ্ক কষে দেখতে হবে কোনটা বেশি লাভজনক। সেই মতো কাঠামো বাছতে হবে।

পিপিএফ নাকি এনপিএস? যাঁদের প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিএফ) অথবা পেনশনের ব্যবস্থা নেই, তাঁদের জন্য লম্বা মেয়াদে টাকা জমিয়ে বড় তহবিল গড়ার পক্ষে এই দু’টিই ভাল প্রকল্প। দুই ক্ষেত্রেই কর ছাড়ের সুবিধা রয়েছে। এনপিএসের একটি বিকল্পে তহবিলের একাংশ শেয়ারে খাটে। যে কারণে সেখানে আয় কিছুটা বেশি হতে পারে। আবার কেউ ইচ্ছা করলে দু’জায়গাতেই টাকা জমাতে পারেন।

সোনা-রুপোর মতো ধাতুতে লগ্নির জনপ্রিয়তা বেড়েছে। দু’টির দামই গত এক বছরে বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। বিশ্ব পরিস্থিতি অস্থির থাকলে দাম তো নামবেই না, বরং আরও উঠতে পারে। শিল্পে রুপোর বড় চাহিদা রয়েছে। মোট তহবিলের ১০%-১৫% সোনা ও রুপোয় লগ্নির পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হতে চলেছে তামাও। তবে লগ্নির জন্য প্রকৃত ধাতু না কিনে ইটিএফ কেনা ভাল। গোল্ড অ্যান্ড সিলভার ফান্ড রয়েছে। কেনা যেতে পারে মাল্টি অ্যাসেটস ফান্ডও। এতে থাকে দেশ-বিদেশের শেয়ার, ঋণপত্র, সোনা, রুপো ইত্যাদি। বাজারের পরিস্থিতি অনুযায়ী লগ্নি করা যেতে পারে লার্জ, মিড, স্মল অথবা মাল্টিক্যাপ ফান্ডে। নিজে সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে বিনিয়োগ পরামর্শদাতার সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।

সব শেষে সেভিংস ব্যাঙ্ক ও লিকুইড ফান্ড। বড় ব্যাঙ্কগুলিতে এখন মাত্র ২.৫% সুদ পাওয়া যায়। লিকুইড ফান্ডে আয় হতে পারে ৬ শতাংশের আশেপাশে। অর্থাৎ, বড় টাকা অযথা সেভিংসে ফেলে না রাখাই ভাল।

(মতামত ব্যক্তিগত)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Invest Deposit

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy