Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
কাজে কোপ, প্রশ্নে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’

চিনা পণ্যের বানে শরশয্যা শিল্পের

রিপোর্টে দাবি, সস্তার চিনা পণ্য রুখতে শাস্তি শুল্ক রয়েছে। কিন্তু তা কার্যকর করায় ঘাটতি অনেক। তা এড়াতে চিন যেমন ছলচাতুরির আশ্রয় নিচ্ছে, তেমনই গা-ছাড়া মনোভাব আছে কেন্দ্রেরও। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাও চিনের পণ্য আমদানি করছে! 

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৮ ০২:৫০
Share: Save:

সস্তার চিনা পণ্য যে ভারতের বাজার ছেয়ে ফেলেছে, তা অজানা নয়। তাতে আজ অনেক দিনই নাভিশ্বাস শিল্পের। ঝাঁপ বন্ধ হচ্ছে বহু ছোট-মাঝারি সংস্থার। কাজ খোয়াচ্ছেন অনেকে। কিন্তু সব কিছু সত্ত্বেও যে মোদী সরকার চোখ বুজে, তা এ বার চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল বাণিজ্য মন্ত্রকের সংসদীয় কমিটি। সেই মোদী সরকার, চিনের সঙ্গে টক্কর দিয়ে ভারতকে বিশ্বের কারখানা করতে মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্পের ঢাক বাজায় যারা।

নরেন্দ্র মোদীর প্রতিশ্রুতি ছিল, বছরে দু’কোটি নতুন চাকরি। কিন্তু কমিটির রিপোর্ট বলছে, চিনা পণ্যের দাপটে অনেক কারখানার ঝাঁপ বন্ধের জেরে কাজ হারাচ্ছেন অনেকে। এত দিন বস্ত্রের মতো যে সব শিল্পে বহু চাকরি হয়েছে এবং ভবিষ্যতে যে সৌরবিদ্যুৎ শিল্পে অন্যতম বেশি চাকরির সম্ভাবনা, তারা উভয়েই চিনা পণ্যের প্যাঁচে কুপোকাত।

রিপোর্টে দাবি, সস্তার চিনা পণ্য রুখতে শাস্তি শুল্ক রয়েছে। কিন্তু তা কার্যকর করায় ঘাটতি অনেক। তা এড়াতে চিন যেমন ছলচাতুরির আশ্রয় নিচ্ছে, তেমনই গা-ছাড়া মনোভাব আছে কেন্দ্রেরও। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাও চিনের পণ্য আমদানি করছে!

কমিটির প্রধান অকালি দলের সাংসদ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দ্রকুমার গুজরালের পুত্র নরেশ গুজরাল। তাঁর দল আবার বিজেপির শরিক। অথচ সেই কমিটির রিপোর্টেই উঠে এসেছে ছোট-মাঝারি শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ছবি। যাকে সব সময় সুরাহা দেওয়ার কথা বলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। শুধু সৌরবিদ্যুৎ শিল্পেই ২০০৬ থেকে এখনও পর্যন্ত ২ লক্ষ মানুষ রোজগার হারিয়েছেন। কিন্তু কেন্দ্র নিশ্চুপ।

ঝোড়ো আক্রমণ

• ২০১৩-১৪ সালে (মনমোহন সরকারের শেষ বছর) ভারতের আমদানিতে চিনের ভাগ ১১.৬%। ২০১৭-১৮ সালে তা ১৬.৬%।
• তখন প্রতি বছর চিন থেকে আমদানি বাড়ছিল ৯% হারে। এখন তার পরিমাণ ২০%।
• চিনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি ৬,৩০০ কোটি ডলার (৪.২৮ লক্ষ কোটি টাকা)। মোট ঘাটতির ৪০%।

কুপোকাত শিল্প

• চিনা পণ্যে বাজার ছেয়ে গিয়েছে অনেক দিনই। আঘাত এতটাই যে, ঝাঁপ বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছে অনেকে।
• সস্তার চিনা পণ্যের সঙ্গে টক্কর দিতে না পেরে মুখ থুবড়ে পড়েছে ওষুধ, বস্ত্র, সৌরবিদ্যুৎ, খেলনার মতো বিভিন্ন শিল্প। দীপাবলির আলো থেকে দোলের রং— চিনা আক্রমণ থেকে বাদ যাচ্ছে না কোনও কিছুই।
• জীবনদায়ী ওষুধে চিনের উপর নির্ভরতা ৯০%। জাতীয় সোলার মিশনে লক্ষ্য ছিল, দেশে সৌর প্যানেল তৈরি। সেখানেও ৯০% চিনের কব্জায়। খেলনার বাজারেরও ৮৫%-৯০% পড়শি মুলুকের দখলে।
• ভারত সাইকেল তৈরিতে বিশ্বে দ্বিতীয়। তবু বাড়ছে চিনা সাইকেল আমদানি। ২০১৭ সালেই ৫৮%।
অভিযোগ বিস্তর
• আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আইনকে বুড়ো আঙুল দেখায় চিনা সংস্থা।
• কেন্দ্র শাস্তিমূলক শুল্ক বসালেও, তা হেলায় ফাঁকি। চোরা পাচারও।
• এ নিয়ে অভিযোগ জানাতে দফারফা ছোট-মাঝারি শিল্পের।
• বহু চিনা পণ্যের মান খারাপ। ক্ষতিকর শরীর ও পরিবেশের পক্ষে। এঁটে ওঠা যাচ্ছে না দামের লড়াইয়ে।
• এই সমস্যা তীব্র খেলনার বাজারে। আসছে এমন খেলনাও, যা অন্য দেশে ঢোকার অনুমতি নেই।
• শুল্ক কম দিতে অনেক সময়ে বিলে কম দাম। বিল ভুয়ো স‌ংস্থার নামে। কখনও আবার পণ্য আসছে অন্য দেশ ঘুরেও। শুধু এ জন্য বিভিন্ন অনুন্নত দেশে কারখানা খুলছে চিন।

উঠছে প্রশ্ন

মেক ইন ইন্ডিয়ার এত প্রচার। অথচ চালু দেশীয় শিল্পই কুপোকাত চিনা পণ্যের আক্রমণে!
শিল্প এ ভাবে ধাক্কা খাওয়ায় কমেছে কর আদায়। অনেক ক্ষেত্রে ঝাঁপ বন্ধ। ভারতে কারখানা তৈরি তবে নিছকই প্রচার?
কথা ছিল, বছরে দু’কোটি কাজ তৈরির। সেখানে চিনা পণ্যের জেরে সৌর শিল্পেই কাজ খুইয়েছেন দু’লক্ষ জন। সব জেনেও কেন্দ্র চুপ কেন?

ঝোড়ো আক্রমণ

n ২০১৩-১৪ সালে (মনমোহন সরকারের শেষ বছর) ভারতের আমদানিতে চিনের ভাগ ১১.৬%। ২০১৭-১৮ সালে তা ১৬.৬%।
n তখন প্রতি বছর চিন থেকে আমদানি বাড়ছিল ৯% হারে। এখন তার পরিমাণ ২০%।
n চিনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি ৬,৩০০ কোটি ডলার (৪.২৮ লক্ষ কোটি টাকা)। মোট ঘাটতির ৪০%।

কুপোকাত শিল্প
চিনা পণ্যে বাজার ছেয়ে গিয়েছে অনেক দিনই। আঘাত এতটাই যে, ঝাঁপ বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছে অনেকে।
সস্তার চিনা পণ্যের সঙ্গে টক্কর দিতে না পেরে মুখ থুবড়ে পড়েছে ওষুধ, বস্ত্র, সৌরবিদ্যুৎ, খেলনার মতো বিভিন্ন শিল্প। দীপাবলির আলো থেকে দোলের রং— চিনা আক্রমণ থেকে বাদ যাচ্ছে না কোনও কিছুই।
জীবনদায়ী ওষুধে চিনের উপর নির্ভরতা ৯০%। জাতীয় সোলার মিশনে লক্ষ্য ছিল, দেশে সৌর প্যানেল তৈরি। সেখানেও ৯০% চিনের কব্জায়। খেলনার বাজারেরও ৮৫%-৯০% পড়শি মুলুকের দখলে।
ভারত সাইকেল তৈরিতে বিশ্বে দ্বিতীয়। তবু বাড়ছে চিনা সাইকেল আমদানি। ২০১৭ সালেই ৫৮%।
অভিযোগ বিস্তর
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আইনকে বুড়ো আঙুল দেখায় চিনা সংস্থা।
কেন্দ্র শাস্তিমূলক শুল্ক বসালেও, তা হেলায় ফাঁকি। চোরা পাচারও।
এ নিয়ে অভিযোগ জানাতে দফারফা ছোট-মাঝারি শিল্পের।
বহু চিনা পণ্যের মান খারাপ। ক্ষতিকর শরীর ও পরিবেশের পক্ষে। এঁটে ওঠা যাচ্ছে না দামের লড়াইয়ে।
এই সমস্যা তীব্র খেলনার বাজারে। আসছে এমন খেলনাও, যা অন্য দেশে ঢোকার অনুমতি নেই।
শুল্ক কম দিতে অনেক সময়ে বিলে কম দাম। বিল ভুয়ো স‌ংস্থার নামে। কখনও আবার পণ্য আসছে অন্য দেশ ঘুরেও। শুধু এ জন্য বিভিন্ন অনুন্নত দেশে কারখানা খুলছে চিন।

উঠছে প্রশ্ন

• মেক ইন ইন্ডিয়ার এত প্রচার। অথচ চালু দেশীয় শিল্পই কুপোকাত চিনা পণ্যের আক্রমণে!
• শিল্প এ ভাবে ধাক্কা খাওয়ায় কমেছে কর আদায়। অনেক ক্ষেত্রে ঝাঁপ বন্ধ। ভারতে কারখানা তৈরি তবে নিছকই প্রচার?
• কথা ছিল, বছরে দু’কোটি কাজ তৈরির। সেখানে চিনা পণ্যের জেরে সৌর শিল্পেই কাজ খুইয়েছেন দু’লক্ষ জন। সব জেনেও কেন্দ্র চুপ কেন?

কলকাতায় সৌর যন্ত্র নির্মাতা অনুপম বড়ালের দাবি, সস্তা বলে ক্রেতারা চিনা পণ্যের দিকে ঝুঁকছেন। যেমন, সৌরলন্ঠন। কিন্তু তার মান ভাল নয়। ফলে তা দ্রুত খারাপ হচ্ছে। তাঁর আশঙ্কা, ‘‘এতে অনেক ক্রেতাই ওই প্রযুক্তির উপরেই আস্থা হারাচ্ছেন। ভবিষ্যতে ব্যবসাই না বন্ধ হয়ে যায়।’’ একই সুর কলকাতার এক এলইডি আলো ও যন্ত্রাংশ নির্মাতার গলায়। তিনি বলেন, ‘‘চিন গুণমানের তোয়াক্কা করে না। তাই আমরা দরের টক্করে পারি না। ব্যবসা হারাতে হচ্ছে সেই কারণেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

China Chinese products Industry
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE