পরপর দু’বছর বৃষ্টি নেই। সেচের খাল জলশূন্য। জমি শুকিয়ে কাঠ। চলতি আর্থিক বছরে মহারাষ্ট্রে আখের উৎপাদন তাই ৪০% কমে যাওয়ার মুখে। আর সেই কারণে চিনির চাহিদা মেটাতে এ বার সম্ভবত আমদানির উপর নির্ভর করতে হবে ভারতকে। গত চার বছরে এই প্রথম।
চিনির দর মাত্রাছাড়া হওয়ার আশঙ্কায় ইতিমধ্যেই কোমর বেঁধেছে মোদী সরকার। বড় ব্যবসায়ী, ঠান্ডা পানীয় নির্মাতা, কেক-পেস্ট্রি তৈরির সংস্থার মতো চিনির মোটা খদ্দেররা যাতে তা বেশি জমা করতে না-পারে, তা দেখতে রাজ্যগুলিকে ওই মজুতের সীমা বাঁধার স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। এ দিন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে।
মহারাষ্ট্রের আখচাষিরা বলছেন, যেখানে পানীয় জলের জন্যই সরকারের পাঠানো রেলগাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে, সেখানে কাঠফাটা জমিতে ভাল আখ ফলানো কার্যত অসম্ভব। বিশেষত যেখানে ওই চাষে বিপুল জল লাগে। পশ্চিম ভারতে চিনিকলগুলির সংগঠন ওয়েস্টার্ন ইন্ডিয়া সুগার মিলস অ্যাসোসিয়েশনের ধারণা, জলের অভাবে মহারাষ্ট্রে আখ উৎপাদন নামতে পারে ৫০ লক্ষ টনেরও নীচে। সংশ্লিষ্ট শিল্পের আশঙ্কা, সে ক্ষেত্রে সাত বছরে এই প্রথম দেশে চাহিদার তুলনায় কম হবে চিনির উৎপাদন। ঘাটতি মেটাতে চেয়ে থাকতে হবে ব্রাজিল, পাকিস্তান বা তাইল্যান্ড থেকে আসা চিনির দিকে।
এক বছরের মাথায় যেন আমূল বদলে গিয়েছে ছবিটা। আগের এপ্রিলে আখচাষিদের প্রাপ্য মেটানোর জন্য চিনিকলগুলিকে সুবিধা দিতে বাড়ানো হয়েছিল চিনির আমদানি শুল্ক। ২৫% থেকে বাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ৪০ শতাংশে। কিন্তু এখন বম্বে সুগার মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসএমএ) প্রেসিডেন্ট অশোক জৈন বলছেন, চিনি আমদানি করতেই হবে ভারতকে। তাঁর মতে, খরার দরুন মহারাষ্ট্রে ধাক্কা খেয়েছে আখ চাষ। তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে এখন চিনি রফতানি বন্ধে হওয়া উচিত।
বিশ্বে চিনির চাহিদা ভারতেই সব থেকে বেশি। তাই সেখানে জোগানে ঘাটতি হলে, বিশ্ব বাজারেও দর দ্রুত বাড়ার আশঙ্কা। ফলে তখন আমদানির চিনি বেশি দামে ঢুকবে এ দেশে। তাই অনেকে মনে করেন, আমদানি শুল্ক ৪০% থেকে নামিয়ে আনার কথা এখনই ভাবতে হবে। বিএসএমএ বিনা শুল্কে আমদানিও পক্ষপাতী।
সংশ্লিষ্ট মহলের একটি অংশের অভিযোগ, সমস্যার শিকড় আরও গভীরে। তাঁদের প্রশ্ন, জলকষ্ট যে-রাজ্যে লেগেই আছে, সেখানে বিপুল জল খরচে আখ চাষের যৌক্তিকতা কোথায়? পরিসংখ্যানও জানাচ্ছে, মহারাষ্ট্রে ৪% জমিতে আখ চাষ হয়। অথচ সেচের জলের দুই-তৃতীয়াংশই যায় তার খেতে। অভিযোগ, চিনিকলের মালিক ও বড় আখচাষিদের একটি অংশ রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় এ নিয়ে তেমন প্রশ্ন ওঠে না।
তীব্র জলকষ্টে এ বার আইপিএলের খেলা মহারাষ্ট্র থেকে সরাতে নির্দেশ দিল শীর্ষ আদালত। যুক্তি, ক্রিকেট পিচ পরিচর্যায় বিপুল জল লাগে। খরার রাজ্যে আখের খেতও একই রকম বেমানান বলে অনেকের দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy