অশোক ব্রহ্মের মেয়ের বিয়ে সামনেই। অশোকবাবু হিসাব কষে দেখেছেন, ৫০ গ্রাম সোনা কিনে মজুরি এবং জিএসটি গুনে গয়না বানাতে খরচ হয়ে যাবে প্রায় পৌনে পাঁচ লক্ষ টাকা। সে ক্ষমতা তাঁর নেই। অতএব একটু অন্য ভাবে ভাবতে শুরু করলেন তিনি। শেষে সিদ্ধান্ত নিলেন, পরিবারের পুরনো সোনা দিয়েই মেয়েকে গয়না গড়িয়ে দেবেন। তিনি বলছেন, ‘‘দেখলাম, এতে আমার ৯০,০০০ টাকার কাছাকাছি খরচ হবে। বিয়ের অনুষ্ঠানটা হয়তো আর একটু ভাল ভাবে করতে পারব।’’
শুধু অশোকবাবু নন, সোনার চড়া দামের বাজারে পুরনো গয়না ভেঙে নতুন গয়না তৈরি করাচ্ছেন বহু মানুষ। গয়না ব্যবসায়ীদের অভিজ্ঞতা অন্তত তেমনই। তাঁরা জানাচ্ছেন, অনেকে নতুন সোনার সঙ্গে পুরনো সোনা মিশিয়েও গয়না বানাচ্ছেন। যাঁর যেমন আর্থিক অবস্থা। মোটের উপর, গয়না গড়তে পুরনো সোনার ব্যবহার আগের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, সোনা আমদানির নিরিখে ভারত বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম। ২০২৩ সালে ৭৪৪ টন হলুদ ধাতু আমদানি হয়েছিল। এ বছর চড়া দামের জন্য গয়নার ধাতু হিসেবে তার চাহিদা কমেছে। সঙ্গে রয়েছে পুরনো সোনার ব্যবহার। সব মিলিয়ে এ বছর সেই আমদানি এক-পঞ্চমাংশ কমতে পারে।
গত সোমবার কলকাতায় প্রতি ১০ গ্রাম (২৪ ক্যারাট) খুচরো পাকা সোনার দাম ৭৫,৭০০ টাকায় পৌঁছয়। জিএসটি ধরলে আরও বেশি। এই দামই এখনও পর্যন্ত রেকর্ড। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ভূ-রাজনৈতিক সমস্যার কারণে লগ্নিকারীদের সোনার উপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে। লগ্নিপণ্য হিসেবে বাড়ছে তার চাহিদা। এর ফলে বিশ্ব বাজারে ধাতুটির দাম বাড়ছে। দেশের বাজারেও তা মাথা তুলছে। গত তিন-চার দিনে শেয়ার বাজার আবার শক্তিশালী হওয়ায় সোনার দাম অবশ্য ফের কিছুটা কমেছে। শনিবার কলকাতায় তা ছিল ৭২,৮০০ টাকা। তবে সেটাও খুব কম নয় বলে দাবি
স্বর্ণ মহলের।
জেম অ্যান্ড জুয়েলারি এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিলের পূর্বাঞ্চলের চেয়ারম্যান পঙ্কজ পারেখ বলছেন, ‘‘সার্বিক ভাবে গয়না কম তৈরি করছেন মানুষ। ২২ ক্যারাটের বদলে ১৮ থেকে ২০ ক্যারাটের সোনা দিয়ে গয়না তৈরির ঝোঁকও বেড়েছে। সর্বোপরি ঘরের পুরনো সোনা দিয়ে নতুন কেনাও বেড়েছে। পুরনো সোনা বিক্রি করছেন অনেকেই।’’ তিনি জানান, ২২ ক্যারাটের এক কেজি ওজনের গয়না গড়তে ৯২০ গ্রাম পাকা সোনা লাগে। ১৮ ক্যারাট দিয়ে গড়তে সেখানে লাগে ৭৫০ গ্রাম। ১৭% কম। ফলে সোনার আমদানি কমছে। সোনা ব্যবসায়ী এবং জে জে গোল্ডের ডিরেক্টর হর্ষদ অজমেঢ়ার দাবি, ‘‘আগে গয়না গড়তে ১৫%-২০% পুরনো সোনা ব্যবহার হত। এখন তা বেড়ে ৩০-৩৫ শতাংশে পৌঁছেছে।’’ ন্যাশনাল জেম অ্যান্ড জুয়েলারি ডোমেস্টিক কাউন্সিলের ডিরেক্টর সমর দে-র কথায়, ‘‘গয়না তৈরিতে পুরনো ও ঘরে মজুত সোনার ব্যবহার বেড়েছে। বিশেষ করে বিয়ে এবং পারিবারিক অনুষ্ঠানে। অনেকে ঘরে থাকা ৪০% সোনার সঙ্গে ৬০% নতুন সোনা মিশিয়ে গয়না গড়াচ্ছেন। ফলে নতুনের চাহিদা কমেছে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)