Advertisement
E-Paper

বাজার নিয়ে আতঙ্কে ভেঙে পড়লে হবে না

ঠিক সুনামি নয়, শেয়ার বাজারে এখন চলছে ছোট বড় ভূমিকম্প। যেমনটা নেপালে হয়েছিল। একটার পর একটা ‘আফটার শক’। ধস নামছে মাঝেমধ্যেই। খানিকটা মেরামতি হওয়ার আগেই আবার ধস। বড় লোকসান হওয়ার পরেও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন ইকুইটি রাজত্বের অধিবাসীরা।

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০১:৫৬

ঠিক সুনামি নয়, শেয়ার বাজারে এখন চলছে ছোট বড় ভূমিকম্প। যেমনটা নেপালে হয়েছিল। একটার পর একটা ‘আফটার শক’। ধস নামছে মাঝেমধ্যেই। খানিকটা মেরামতি হওয়ার আগেই আবার ধস। বড় লোকসান হওয়ার পরেও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন ইকুইটি রাজত্বের অধিবাসীরা। ত্রাণ তেমন আসছে না। বরং ক্রমাগত ডলার প্রস্থান করায় ফাটল আরও বড় হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সুদ বাড়তে পারে এই আশঙ্কা যেন ঘুম কেড়ে নিয়েছে লগ্নিকারীদের। মার্কিন মুলুকে সুদ বাড়লে মোটা আকারের লগ্নি সরে যেতে পারে এ দেশ থেকে, এই ভয় যেন পেয়ে বসেছে বাজারকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের তরফে উৎসাহ জাগাতে নানা কথা বলা হলেও মনে রাখতে হবে বিদেশি আর্থিক সংস্থার লগ্নি বাজারের বড় স্তম্ভগুলির অন্যতম। আমেরিকায় আর্থিক উন্নতির ইঙ্গিত এবং চিনা অর্থনীতির পতন— এই দুই বিপরীতমুখী শক্তি এরই মধ্যে বাজারকে টেনে নামিয়েছে বেশ খানিকটা।

প্রশ্ন হল এর পর কী? বাজার কি তলানিতে ঠেকেছে? নাকি তা আরও নামতে পারে? বিশ্ব জুড়ে যে-পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তাতে মনে হয় না অবস্থা দ্রুত শুধরে যাবে। নিরাশাবাদীরা মনে করছেন সেনসেক্স ২২,০০০ পর্যন্ত নামতে পারে। চলতি বছরে যে-সূচক ৩০ হাজার ছুঁয়েছিল, তার ২২ হাজারে নেমে আসার অর্থ লগ্নিকারীদের প্রায় ২৭ শতাংশ সম্পদ খোয়ানো। আশাবাদীরা অবশ্য মনে করছেন, এত আশঙ্কার কোনও কারণ নেই। বরং যে-কারণগুলির উপর এঁরা ভরসা রাখছেন, সেগুলি দেখে নেওয়া যাক এক নজরে:

ভারতীয় অর্থনীতি বেশ মজবুত। বৃদ্ধির হার ৭ থেকে ৭.৫ শতাংশ ছুঁতে পারে।

অদূর ভবিষ্যতে সুদ কমার সম্ভাবনা বেশ জোরালো। কারণ মূল্যবৃদ্ধি এখন নিয়ন্ত্রিত।

আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক যদি সুদ না-বাড়ায় তবে সেনসেক্স এক লাফে ৫০০-১০০০ পয়েন্ট বাড়তে পারে।

বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের অস্বাভাবিক মূল্য পতন।

যথেষ্ট পরিমাণে বিদেশি মুদ্রার মজুত ভাণ্ডার। গত সপ্তাহ শেষে তার মূল্য ছিল ৩৫,১৯২ কোটি ডলার (কম-বেশি ২৩.৩৬ লক্ষ কোটি টাকা)।

চিন থেকে লগ্নি বেরিয়ে ভারতে ঢোকার সম্ভাবনা।

তবে বাজারের হাল ফেরার পক্ষে যতই যুক্তি দেখানো হোক, মনে রাখতে হবে ২০০৮ সালের মন্দার মতো এ বারের সমস্যাটাও আন্তর্জাতিক। সে বার বিশ্ব জুড়ে বাজার পড়েছিল মার্কিন অর্থনীতির পতনে। এ বার পতনের কারণ আমেরিকার উত্থান এবং চিনের পতন। অর্থাৎ সমস্যা দ্রুত মেটার নয়।

অবশ্য ২০০৮ সালের পতনে আম থেকে আমসি হয়ে যাওয়া বাজার কিন্তু পরের ৭ বছরে ৩ গুণেরও বেশি বাড়ে। অর্থাৎ আতঙ্কে ভেঙে পড়ার কারণ এখনও ঘটেনি। যাঁরা অপেক্ষা করতে পারবেন, তাঁদের কাছে বর্তমান সূচক অনুযায়ী লোকসান একটি পরিসংখ্যানগত (নোশনাল) হিসাব মাত্র। যাঁরা অপেক্ষা করতে পারবেন না, তাঁদের ক্ষতি অবশ্যই বেদনাময় হবে। যাঁদের হাতে লগ্নিযোগ্য তহবিল আছে, তাঁরা ঝুঁকে পড়া বাজারে বেশ কম দামে অল্প অল্প করে ভাল শেয়ার সংগ্রহ করতে পারেন।

হাতে খারাপ শেয়ার থাকলে তা বেচে দিয়ে এই সুযোগে ভাল শেয়ার কেনার কথা ভাবা যেতে পারে। শেয়ার বাজারের গতিবিধি অনুযায়ী উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে ইকুইটি ফান্ডের লগ্নিকারীদেরও। তুলনামূলক ভাবে চিন্তা অনেক কম ঋণপত্র নির্ভর মিউচুয়াল ফান্ডের লগ্নিকারীদের মনে। সুদ কমলে বরং এই ধরনের ইউনিটের ন্যাভ বাড়ার সম্ভাবনা থাকবে।

যাঁরা না-আছেন ইকুইটিতে, না-আছেন ঋণপত্রে, তাঁদের অবস্থাও মোটে ভাল নয়। সুদ কমছে সর্বত্র। আরও কমার আশঙ্কা আগামী দিনে। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সরকারি পরিসংখ্যান যাই বলুক, সাধারণ রোজগেরেদের বাজারে কিন্তু আগুন। ঢেঁড়স, বেগুন, পেঁয়াজ, পটল— কেউ ছেড়ে কথা বলছে না। আগের মতো এখন আর বলা যাবে না ‘ডাল ভাত খেয়ে দিন কেটে যাবে’। ডাল খাওয়া যেন ধীরে ধীরে এক ধরনের বিলাসিতার পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। মাছের কথা না-বলাই ভাল। রুপোলি ইলিশ এখন রুপোর মতোই দামি। কেউ কেউ ঠাট্টা করে বলছেন, চিন থেকে আমদানি করা বহু জিনিসই তো বেশ সস্তা। ‘চিনে ইলিশ পাওয়া যায় না?’

amitabha guha sarkar sensex upheavel sensex expert suggest sharemarket panic share market panic sensex frustration
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy