Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

বিপদে বন্ধুর খোঁজ

কর বাঁচাতে তাড়াহুড়োয় কেনা হোক বা অনেক ভেবেচিন্তে। সেই জীবন বিমা প্রকল্প পকেটে রেখে লাভ কী, বিপদের বৃষ্টিতে যা ছাতা হবে না পরিবারের মাথায়? টাকা ঢালার আগে তাই ক্লেমের খবর নেওয়ার পরামর্শ দিলেন আদিল শেট্টিকথা হয়েছিল বিমার অঙ্ক কেমন হওয়া উচিত, কোন কোন বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি, তা নিয়েও। আর এ বার আলোচনার বিষয় বিমার ‘ক্লেম’।

শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৬:১০
Share: Save:

জীবন বিমা প্রকল্প বাছাইয়ের সময়ে কী কী মাথায় রাখা জরুরি, তা নিয়ে গত সপ্তাহেই বিস্তারিত কথা বলেছি আমরা। কথা হয়েছিল বিমার অঙ্ক কেমন হওয়া উচিত, কোন কোন বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি, তা নিয়েও। আর এ বার আলোচনার বিষয় বিমার ‘ক্লেম’। যে বিষয়টি গোড়াতেই গুরুত্ব না দেওয়ার কারণে প্রয়োজনের সময়ে বিমার টাকা হাতেই পায় না বহু পরিবার। অথচ কয়েকটি ছোট্ট কথা মাথায় রাখলেই সেই পরিস্থিতি এড়ানো যায়।

কেন জরুরি?

আমরা অনেকেই ভাবি, বিপদের মুখে পরিবারের রক্ষাকবচ হিসেবে জীবন বিমা কিনে রাখা মানেই দায়িত্ব শেষ। কিন্তু শুধু প্রকল্প কিনলে কিংবা প্রিমিয়াম দিলেই তো হবে না। নিশ্চিত করতে হবে যাতে প্রয়োজনের সময়ে পরিবারের সদস্যরা তা হাতে পান।

তাই প্রকল্প কেনার সময়েই জানতে হবে, সেই ক্লেমের টাকা পাওয়ার পদ্ধতি। তার যাবতীয় খুঁটিনাটি। শুধু নিজে জানলে চলবে না। তা জানিয়ে রাখতে হবে পরিবারের সদস্যদেরও।

সবাই জানেন?

অনেক সময়ই পরিবারের কর্তা টাকা-পয়সার দিকটি দেখেন বলে, বাকিরা আর তা নিয়ে মাথা ঘামান না। বিশেষত বাড়ির মহিলারা। কিন্তু তাঁর অবর্তমানে সেই না জানাই সমস্যা তৈরি করতে পারে। এ নিয়ে তাই শুরু থেকেই সতর্ক থাকুন।

কষ্ট করে প্রমিয়াম দেওয়া তো এই কারণেই, যাতে বিপদের দিনে পরিবারকে আতান্তরে পড়তে না হয়। সেই পরিস্থিতিই যদি তৈরি হবে, তবে আর সুরক্ষার জন্য বিমা কেনা কেন? বিপদের দিনে মুখই দেখা যাবে না, এমন বন্ধু কেউ চায় কি?

আগে খবর নিন

কিছু কথা আগের সপ্তাহে আলোচনা হলেও আবার বলা জরুরি। যেমন—

টাকা মেটানোর ইতিহাস

কোনও বছরে বিমার টাকা দাবি করে শতকরা কত জন গ্রাহক তা পাচ্ছেন, সেই অনুপাতই হল ক্লেম সেট্‌লমেন্ট রেশিও। সংস্থা বাছার আগে সেই অনুপাত দেখতে চাওয়া ভাল।

টাকা পেতে কত দিন?

সংস্থার কাছে বিমার টাকা দাবি করার পরে তা হাতে পেতে গড়ে কত দিন লাগছে, সে দিকে চোখ রাখুন। যত কম সময়, তত ভাল।

গোড়ার শর্ত

অনেক ক্ষেত্রে এমন হয় যে, আপনি মনে করলেন বিমা করার সময়ে ঠিক কাগজ জমা দিয়েছেন। কিন্তু দেখা গেল, ক্লেম বাতিল। এর কারণ নানা
কিছু হতে পারে। যেমন, হয়তো তথ্যে ভুল রয়েছে বা কোনও কাগজ দিতে ভুলে গিয়েছিলেন। সাধারণত সংস্থার তা নজরে পড়ার কথা। কিন্তু তাদের চোখ এড়ালে তো ভুগতে হবে আপনাকেই। তাই যখন ফর্ম ভর্তি করবেন, তখন যাতে ভুল না থাকে, তা খুঁটিয়ে দেখা জরুরি। তাই—

দেখে ফর্ম ভরুন

• বিমা সংক্রান্ত ফর্ম ভর্তির সময়ে নিজে হাতে তা করুন। এজেন্ট বা অন্য কারও উপরে ভরসা করবেন না।

• নিজে সড়গড় না হলে, এজেন্টকে বলুন আপনার সামনে বসে ফর্ম ভর্তি করতে। যাতে কোনও ভুল হলে, সঙ্গে সঙ্গে ধরতে পারেন।

• পলিসির কাগজ হাতে পাওয়ার পরে তা খুঁটিয়ে পড়ুন। ভুল থাকলে ১৫ দিনের মধ্যে তা বদলানোর বা ঠিক করার সুযোগ পাওয়া যায়। এই সময়টাকে বলে ‘ফ্রি-লুক পিরিয়ড’।

সঠিক নথি দিন

• পলিসি কেনার সময়ে ঠিকানা ও পরিচয়ের সঠিক প্রমাণপত্র দিন। অনেক সময়ে এই সব নথি ঠিক না থাকায় ক্লেম বাতিল হয়।

• টাকা ক্লেম করার সময়ে যে সমস্ত কাগজ ভর্তি করতে হয়, সেগুলিতেও যাতে ভুল না থাকে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরি।

নিয়মিত প্রিমিয়াম দিন

চেষ্টা করুন নির্দিষ্ট দিনের আগেই প্রিমিয়াম জমা দিতে। কারণ, তা ঠিকঠাক না দেওয়ার জন্য বিমার টাকা সমস্যা হতে পারে। তা এড়াতে সময়ে ও নিয়মিত প্রিমিয়াম দিন।

নমিনি ঠিক করুন

পলিসি কেনার সময়েই নমিনির নাম দিন। না হলে, বিমাকারীর মৃত্যু হলে ক্লেমের সময়ে উত্তরাধিকারীকে সাকসেশন সার্টিফিকেট জোগাড়ের জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে হবে। ক্লেম জমা ও টাকা পেতে অযথা দেরি হবে।

ক্লেম কী ভাবে?

এক একটি ক্ষেত্রে এক-এক ভাবে ক্লেমের টাকা দাবি করতে হয়। দেখা যাক, কোন ধরনের ক্লেমের জন্য কী কী কাগজ জমা দিতে হবে।

বিমাকারীর মৃত্যু হলে

বিমাকারীর মৃত্যুর পরে সেই টাকা ক্লেম করার সময়ে কিছু কথা মাথায় রাখা জরুরি। যেমন—

সংস্থাকে জানান

• ক্লেমের জন্য বিমা সংস্থাকে লিখিত ভাবে জানাতে হবে গ্রাহকের মৃত্যুর কথা। এর মধ্যে থাকবে পলিসি নম্বর, বিমাকারীর নাম, মৃত্যুর তারিখ, মৃত্যুর স্থান এবং তার কারণ-সহ নানা তথ্য।

• এ জন্য ফর্ম সংস্থার শাখা থেকে পাওয়া যায়। ওয়েবসাইট থেকেও ডাউনলোড করা সম্ভব।

দিন নথিপত্র

ক্লেমের ফর্মের সঙ্গেই দিতে হবে বিভিন্ন নথি। এর মধ্যে থাকবে—

• বিমাকারীর বয়সের প্রমাণপত্র

• পলিসির কাগজ

• ডেথ সার্টিফিকেট ইত্যাদি

সংস্থা সব কাগজ খুঁটিয়ে দেখে নমিনিকে জানাবে। যদি বাড়তি কাগজ লাগে, তা-ও চেয়ে নেবে।

কম দিনে মৃত্যু

সাধারণত পলিসি কেনার তিন বছরের মধ্যে বিমাকারীর মৃত্যু হলে, ক্লেমের সময়ে কিছু বাড়তি নথি দিতে হয়। এর মধ্যে থাকবে—

• গ্রাহক হাসপাতালে মারা গেলে, সেখানকার সার্টিফিকেট

• শ্মশান বা কবরখানার সার্টিফিকেট

• বিমাকারী চাকরি করলে, নিয়োগকারী সংস্থার সার্টিফিকেট

• রোগভোগের পরে মৃত্যু হলে, সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের সার্টিফিকেট ইত্যাদি

দুর্ঘটনায় মৃত্যু

• বিমান বা গাড়ি দুর্ঘটনায় বিমাকারীর মৃত্যু হলে উপরের নথির সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সার্টিফিকেট লাগবে। যেখানে লেখা থাকবে, ওই দুর্ঘটনার সময়ে তিনি বিমান বা গাড়িতে উপস্থিত ছিলেন।

• দুর্ঘটনা বা খুনের ক্ষেত্রে পুলিশ ও ময়না তদন্তের রিপোর্ট লাগতে পারে।

মেয়াদ শেষে টাকা

এ তো গেল নমিনিকে কী কী করতে হবে, সেই আলোচনা। এ বার কথা বলব, প্রকল্পের মেয়াদ শেষে টাকা পেতে কী করতে হবে, তা নিয়ে—

সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ

সাধারণত মেয়াদ শেষের এক মাস আগে বিমা সংস্থা গ্রাহককে ফর্ম পাঠায়। সেখানে লেখা থাকে ক্লেমের জন্য কী কী কাগজ জমা দিতে হবে।

জমা দিন কাগজ

মেয়াদ শেষের অন্তত এক-দু’সপ্তাহ আগে কাগজ জমা দিন। কোনও অসুবিধা থাকলে, তা শুধরে নেওয়ার সুযোগ থাকবে। এর জন্য—

• সংস্থার পাঠানো ফর্ম ভর্তি করুন।

• সঙ্গে দিন পলিসির কাগজ, পরিচয় ও ঠিকানার ব্যাঙ্ক ম্যান্ডেট ইত্যাদি।

তথ্য যাচাই

• জমা দেওয়া কাগজ খতিয়ে দেখবে সংস্থা। সব ঠিক থাকলে, মেয়াদ শেষে টাকা হাতে পাবেন। এতে থাকবে সাম অ্যাশিওর্ড ও বোনাসের (সংস্থা ঘোষণা করলে) টাকা।

• মেয়াদ শেষের পরে ও পলিসির টাকা পাওয়ার আগে বিমাকারী মারা গেলে নমিনি টাকা পাবেন।

রাইডারের টাকা

জীবন বিমার সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের বাড়তি সুবিধা (রাইডার) মেলে। সাধারণত কঠিন রোগ, দুর্ঘটনায় মৃত্যু বা শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধী হলে, তা মেলে। এ ছাড়াও হাসপাতালে ভর্তির সময়ে নগদ টাকা হাতে পাওয়া, প্রিমিয়ামে ছাড়ের মতো নানা সুবিধাও পাওয়া যায়। সে জন্য কী কী কাগজ লাগবে, তা এক নজরে দেখে নিন—

দুর্ঘটনায় মৃত্যু

বিমাকারীর মৃত্যু হলে, কী কী কাগজ জমা দিতে হবে, তা আগেই বলেছি। রাইডার নেওয়া থাকলে, তার সঙ্গেই তা জানিয়ে দিতে হবে। বিমার টাকার সঙ্গেই ওই টাকা পাবেন নমিনি।

অন্যান্য রাইডারের ক্ষেত্রে লাগবে—

কঠিন রোগে

• রোগের যাবতীয় পরীক্ষার রিপোর্ট

• ডাক্তারের প্রেস্ক্রিপশন

• হাসপাতাল থেকে ছাড়ার সময়ে দেওয়া ডিসচার্জ রিপোর্ট ইত্যাদি

হাসপাতালে ভর্তির নগদ

• চিকিৎসার ও রোগের পরীক্ষার রিপোর্ট এবং বিল

• ডাক্তারের প্রেস্ক্রিপশন

• ডিসচার্জ কার্ড প্রভৃতি

দুর্ঘটনায় শরীরের ক্ষতি

• ডাক্তারের সার্টিফিকেট

• শরীরের আহত অংশের ছবি

• মেডিক্যাল বিল

• চিকিৎসার অন্যান্য কাগজপত্র

অর্থাৎ...

পরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যেমন আপনার দায়িত্ব, তেমনই তাঁদের বাড়তি ঝামেলা থেকে মুক্ত রাখাও আপনার কাজ। তাই সেই বিষয়টি গোড়াতেই গুছিয়ে রাখলে মন্দ কী?

লেখক: ব্যাঙ্কবাজার ডট কমের সিইও

(মতামত ব্যক্তিগত)

পরামর্শের জন্য লিখুন:

‘বিষয়’, ব্যবসা বিভাগ,

আনন্দবাজার পত্রিকা,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা, পিন-৭০০০০১।

ই-মেল: bishoy@abp.in

ঠিকানা ও ফোন নম্বর জানাতে ভুলবেন না

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Life Insurance claim
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE