E-Paper

২৫৪০০ টাকা কমল রুপোর দাম, সোনা কমল ৫৬০০! উত্থানের গতিতেই পতন দুই ধাতুর

গত শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) কলকাতার বাজারে খুচরো পাকা সোনার (১০ গ্রাম, ২৪ ক্যারাট) দাম ছিল ১,৩১,৬০০ টাকা। জিএসটি ধরে হিসাব কষলে ১,৩৫,৫৪৮ টাকা। বুধবার তা ১,২৬,০০০ টাকায় নেমে এসেছে। কর ধরে ১,২৯,৭৮০ টাকা।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২৫ ০৪:৪১

—প্রতীকী চিত্র।

সপ্তাহখানেক আগেও এ যাবৎ সর্বোচ্চ অবস্থানে ছিল দুই মহার্ঘ ধাতু সোনা এবং রুপো। অথচ ধনতেরসের সময় থেকে ধাপে ধাপে পড়ে এখনঅনেকটা নীচে নেমেছে তাদের দাম। এই ক’দিনে সোনা কমেছে ৫৬০০ টাকা। আর রুপো ২৫,৪০০ টাকা!

তবে কি তাদের বাঁধভাঙা দৌড়ে ছেদ পড়ল? এ বার কোন পথে হাঁটবে তারা? বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, গত এক বছর কার্যত বাধাহীন অগ্রগতির পরে এই দুই লগ্নিপণ্যের দামে কিছুটা সংশোধন অবশ্যম্ভাবী ছিল। কারণ, দাম চড়ার পরে হাতের মুনাফা ঘরে তোলার একটা প্রবণতা থাকে লগ্নিকারীদের মধ্যে। বিশেষত উৎসবের মরসুমের শেষের দিকে। ফলে দামের এই পতনকে ধস বলা যাবে না। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের ভিত পাকাপোক্ত হবে। কারও আবার মত, দামের প্রত্যেক পতনে সোনা ও রুপো অল্প অল্প করে কিনে রাখতে পারেন লগ্নিকারীরা। তাতে দীর্ঘমেয়াদে ঠকতে হবে না। ভারত, চিন-সহ বিভিন্ন দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ক টানা সোনার ভান্ডার শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে। ফলে তার সামগ্রিক চাহিদায় ভাটা পড়ার সম্ভাবনা নেই। অর্থবর্ষের প্রথমার্ধে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের স্বর্ণ ভান্ডার ছুঁয়েছে ৮৮০ টন।

গত শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) কলকাতার বাজারে খুচরো পাকা সোনার (১০ গ্রাম, ২৪ ক্যারাট) দাম ছিল ১,৩১,৬০০ টাকা। জিএসটি ধরে হিসাব কষলে ১,৩৫,৫৪৮ টাকা। বুধবার তা ১,২৬,০০০ টাকায় নেমে এসেছে। কর ধরে ১,২৯,৭৮০ টাকা। অর্থাৎ, এইটুকু সময়ের মধ্যে সোনার দাম ৪.২৫% পড়েছে। পাশাপাশি, ওই একই দিনে গয়না সোনার (১০ গ্রাম, ২২ ক্যারাট) দাম ১,২৫,১০০ টাকা ছিল (কর বাদে)। এ দিন তা নেমে এসেছে ১,১৯,৭৫০ টাকায়। রুপোর পতন আরও বেশি। গত বুধবার (১৫ অক্টোবর) কলকাতায় ১ কেজি রুপোর বাটের দাম ছিল ১,৮৩,৩৫০ টাকা (জিএসটি বাদে)। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে তা নেমে এসেছে ১,৫৭,৯৫০ টাকায়। পড়েছে ১৪ শতাংশের বেশি।

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সোনা ও রুপোর দামের পতনের পিছনে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক দুই ক্ষেত্রের একাধিক কারণ কাজ করছে। এ দিন শুধু এক দিনের মধ্যেই বিশ্ব বাজারে আউন্স প্রতি সোনার দাম ৪৩৫০ ডলার থেকে ৪০৪০ ডলারে নেমে এসেছে। এই পতন গত পাঁচ বছরের মধ্যে বৃহত্তম। তার প্রভাব পড়েছে ভারতের বাজারেও। এর পাশাপাশি, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সংঘর্ষ বিরতির ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চাইছেন চিনের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করতে। এরই মধ্যে খবরে প্রকাশ, দিল্লির সঙ্গেও ওয়াশিংটনের বাণিজ্য আলোচনা প্রায় গুটিয়ে এসেছে। ট্রাম্প-শুল্কের হার ৫০% থেকে অনেকটা কমে আসতে পারে বলে জল্পনা। ফলে সব মিলিয়ে প্রবল আশা-অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে চলেছে বাজার। সে কারণে সতর্ক লগ্নিকারীরা।

গিনি এম্পোরিয়ামের ডিরেক্টর তথা অল ইন্ডিয়া জেম অ্যান্ড জুয়েলারি ডোমেস্টিক কাউন্সিলের ডিরেক্টর সমর দে এবং সেনকো গোল্ডের এমডি শুভঙ্কর সেন বলছেন, ‘‘সোনা-রুপোর দামের অস্থিরতা আপাতত জারি থাকবে। প্রতিটি পতনে সাধ্য মতো তা অল্প অল্প কিনে রাখতে পারেন গয়নার ক্রেতা এবং লগ্নিকারীরা।’’ ওয়েস্ট বেঙ্গল বুলিয়ন অ্যান্ড জুয়েলারি মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দীনেশ কাবরার কথায়, ‘‘দুই ধাতুর দামের উত্থান অনেকটাই কৃত্রিম ছিল। ফলে তার সংশোধনও প্রয়োজন ছিল।’’ জেজে গোল্ডের ডিরেক্টর হর্ষদ অজমেরার বক্তব্য, এত দিন রুপোর দামের উত্থানের গতি বেশি ছিল। এখন তার দামও সোনার থেকে দ্রুত গতিতে পড়ছে। মূলত ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং শিল্প ক্ষেত্রের চাহিদার কারণে ধাতুটির দাম বাড়ছিল। নিরাপদ লগ্নি গন্তব্য হিসেবে তাকে কাজে লাগাচ্ছিলেন লগ্নিকারীরা। সঙ্গে ছিল জোগান ও চাহিদার অসামঞ্জস্য। তার ফলেই দাম বাড়ছিল। এখন লগ্নিকারীদের একাংশ মুনাফা ঘরে তুলছেন। তার ফলে কমছে দাম।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Gold Price Silver Price Gold and Silver Price

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy