বেহাল দশা কাটিয়ে কিছুতেই চড়ছে না শেয়ার বাজার। এই পরিস্থিতিতে স্টকের বদলে সোনাকেই বেশি করে আঁকড়ে ধরছেন লগ্নিকারীরা। তবে সেটা অলঙ্কারে নয়। গত কয়েক বছর ধরেই গোল্ড এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড বা ইটিএফে বিনিয়োগের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা। এ বার এই সংক্রান্ত চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করল অ্যাসোসিয়েশন অফ মিউচুয়াল ফান্ডস ইন ইন্ডিয়া বা অ্যাম্ফি।
মিউচুয়াল ফান্ডের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর সোনার ইটিএফগুলিতে নিট বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ২১৬ শতাংশ। ফলে এতে লগ্নির অঙ্ক ৯,২২৬ কোটি টাকায় গিয়ে পৌঁছেছে। ২০২৩ সালে সোনার ইটিএফে নিট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ২,৯১৯ কোটি টাকা।
স্বর্ণ ইটিএফের মূল লক্ষ্য হল দেশীয় বাজারের হলুদ ধাতুর ভৌত মূল্য নজর করা। একে সোনায় নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগের উপকরণ বলা হয়। লগ্নিকারীরা শেয়ার বাজার থেকে ইকুইটির মতোই এটি কিনতে বা বিক্রি করতে পারেন। চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি সংসদে বাজেট পেশ করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। সেখানে স্বর্ণ ইটিএফের ক্ষেত্রে বড় ঘোষণা করেন তিনি।
বাজেট বক্তৃতায় নির্মলা বলেন, সোনার ইটিএফ থেকে দীর্ঘমেয়াদি মূলধনি লাভ (লং টার্ম ক্যাপিটল গেন্স বা এলটিসিজি) ১২ মাসের জন্য ধরে রাখলে, ইনডেক্সেশন ছাড়াই লগ্নিকারীর ঘাড়ে চাপবে ১২.৫ শতাংশ কর। এর আগে তিন বছরের বেশি সময় ধরে রাখলে সোনার ইটিএফের উপর এলটিসিজিতে কর ধার্য হত ২০ শতাংশ।
ঘোষণা করা হয়েছে যে, সোনার ইটিএফের দীর্ঘমেয়াদি মূলধনি লাভ (এলটিসিজি) মাত্র ১২ মাসের জন্য ধরে রাখলে ইনডেক্সেশন ছাড়াই ১২.৫ শতাংশ হারে কর ধার্য করা হবে। এর আগে, তিন বছরের বেশি সময় ধরে রাখলে সোনার ইটিএফের উপর ইনডেক্সেশন-সহ ২০ শতাংশ হারে কর ধার্য করা হত। করের হার হ্রাস পাওয়ায় এ বছর স্বর্ণ ইটিএফে বিনিয়োগের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত তিন-চার মাস ধরে শেয়ার বাজারের খারাপ ফলের নেপথ্যে একাধিক কারণের কথা বলেছেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা। তাঁদের দাবি, পশ্চিম এশিয়ার সঙ্কট এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক-হুমকির বড় প্রভাব পড়েছে ভারতের বাজারে। ফলে আর্থিক লোকসান এড়াতে লগ্নিকারীরা সোনা কেনায় মন দিয়েছেন। কারণ হলুদ ধাতুতে বিনিয়োগ সব সময়ের জন্যেই কম ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করা হয়েছে।
তবে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, স্বর্ণ ইটিএফে লগ্নি বাড়লেও এ দেশের আমজনতার মধ্যে কমেছে গয়না কেনার প্রবণতা। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে ভারতে স্বর্ণালঙ্কারের চাহিদা ছিল ৬০০ টন। গত বছর সেই সূচক ৫৬৩ টনে নেমে আসে। অর্থাৎ খুচরো বাজারে সাত শতাংশ কমেছে সোনার চাহিদা। ২০২১ সালে ৬১০ টনে দাঁড়িয়েছিল সূচক। আর ২০২৩ সালে গয়নার চাহিদা ৫৭৫ টনে নেমে আসে।