বাজেট পাশ নিয়ে সমঝোতা না হওয়ায় আমেরিকায় বুধবার থেকে বন্ধ হয়ে গিয়েছে সরকারি কাজকর্ম (শাটডাউন)। ফলে অর্থনীতি ঘিরে অনিশ্চয়তায় বিশ্ব বাজারে সোনার দাম পৌঁছে গিয়েছে রেকর্ড উচ্চতায়। এর প্রভাব যে দেশের বাজারে পড়বে, সেটা বলছিলেন বিশেষজ্ঞেরা। সেই আশঙ্কা সত্যি করে পুজোর চার দিনের ছুটি কাটিয়ে শুক্রবার বাজার খুলতেই এক ধাক্কায় ২৯৫০ টাকা বেড়ে গেল ২৪ ক্যারাট ১০ গ্রাম খুচরো পাকা সোনার দাম। জিএসটি ধরে ছাড়াল ১.২ লক্ষ টাকা। পিছিয়ে রইল না গয়নার সোনাও (২২ ক্যারাট ১০ গ্রাম), তা মাথা তুলল ২৮০০ টাকা। পৌঁছে গেল ১.১৫ লক্ষে। সাধারণ রোজগেরে ক্রেতার স্বস্তি কেড়ে ২৬৫০ টাকা উঠল রুপোও। ফলে কেজিতে তা পেরিয়ে গেল ১.৫ লক্ষের মাইলফলক। সব দরই তৈরি করল নতুন নজির।
এই পরিস্থিতিতে এ বছর ধনতেরসের বাজার আদৌ জমবে কি না, সেই আশঙ্কা মাথা তুলতে শুরু করেছে সব মহলে। এক দিকে যেমন ক্রেতারা বাজারে পা বাড়াতে চাইছেন না, তেমনই বিক্রি ও বরাত হারানোর চিন্তায় দিন গুনছেন গয়না ব্যবসায়ী ও কারিগরেরা। এমনকি তেলের দামের পরিবর্তে বর্তমানে যে সোনার দামই অর্থনীতির অস্থিরতার মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা মানছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কও। এ দিন শীর্ষ ব্যাঙ্কের গভর্নর সঞ্জয় মলহোত্রের বক্তব্য, ‘‘দশকের শুরুতে ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা তেলের দামকে ঠেলে তুলত, কিন্তু এখন তা একটা সীমার মধ্যেই ঘুরছে। ...বরং তেলের দামের সেই অস্থিরতা এখন সোনায় দেখা যাচ্ছে। হয়তো সেটাই বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তার মাপকাঠিতে পরিণত হয়েছে।’’
অঙ্কুরহাটি জেম অ্যান্ড জুয়েলারি ম্যানুফ্যাকচারিং পার্কের সভাপতি অশোক বেঙ্গানি বলছেন, ‘‘এক দিনেই সোনার দাম এতটা বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ আমেরিকায় শাটডাউন ঘোষণা। এর ফলে ব্যবসা বন্ধ থাকায় সোনার সরবরাহ কমেছে। অন্য দিকে অর্থনীতির অনিশ্চয়তায় বাড়ছে তাতে লগ্নি। তার উপরে দেশে উৎসবের মরসুমে সোনার চাহিদা গিয়েছে বেড়ে। যা ধাতুটির দামকে ঠেলে তুলছে।’’ অল ইন্ডিয়া জেম অ্যান্ড জুয়েলারি ডোমেস্টিক কাউন্সিলের ডিরেক্টর সমর দে-রও বক্তব্য, ‘‘ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আমেরিকার শুল্ক নীতির সমস্যা তো ছিলই। তার উপরে এক দিন আমেরিকায় সরকারি কাজ বন্ধ থাকাতেই সরবরাহ ধাক্কা খাওয়ায় পাকা সোনা এক লাফে প্রায় ৩০০০ টাকা বেড়েছে। ফলে শাটডাউন চললে দাম কোথায় দাঁড়াবে বলা যাচ্ছে না।’’
এই পরিস্থিতিতে ধনতেরস ও দেওয়ালির বাজার নিয়ে চিন্তায় গয়না ব্যবসায়ীরা। সেনকো গোল্ড অ্যান্ড ডায়মন্ডসের এমডি শুভঙ্কর সেন বলছেন, ‘‘১৮ অক্টোবর ধনতেরস, ২০ তারিখ দেওয়ালি। নভেম্বর থেকে শুরু বিয়ের মরসুম। চড়া দামেও যাতে ক্রেতারা দোকানমুখো হন, সে জন্য নানা প্রকল্প চালু করতে শুরু করেছে বিভিন্ন সংস্থা। কিছু ক্ষেত্রে দাম ওঠাপড়ার ঝুঁকি নিয়েও সেই পথে হাঁটছে তারা।’’ সোনার চড়া দামে পুরনো গয়না বদলে নতুন তৈরির প্রবণতা বেড়েছে বলে জানিয়ে তাঁর দাবি, মোট বিক্রির প্রায় ৪০ শতাংশই হচ্ছে এই পথে। হিরের গয়নায় ৯ ক্যারাটের সোনার ব্যবহার শুরু হয়েছে। আপাতত সোনা কোথায় যায়, সে দিকেই তাকিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতারা।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)