কর যোগ করে সোনা ১ লক্ষ টাকার সীমা ছাড়িয়েছিল ক’দিন আগেই। এ বার জিএসটি ছাড়াই সেই মাইলফলক পার করল হলুদ ধাতুটির দাম। ফলে সোনার দাম কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ক্রেতা-বিক্রেতা সব মহলেই। কারণ, দামের আঁচে বাজারমুখো হতে পারছেন না সাধারণ ক্রেতা। আবার গ্রাহকের অভাবে মাথায় হাত কারিগর এবং গয়না ব্যবসায়ীদের।
শনিবার কলকাতায় ১০ গ্রাম খুচরো পাকা সোনা (২৪ ক্যারাট) ৬০০ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,০০,৩০০ টাকায়। যা নতুন নজির। জিএসটি ধরে দর ১,০৩,৩০৯ টাকা। ১০ গ্রাম গয়নার সোনা (২২ ক্যারাট) ছিল ৯৫,৩৫০ টাকা। কর নিয়ে ৯৮,২১০.৫ টাকা। পাশাপাশি কেজিতে রুপোর বাটের দাম পৌঁছেছে ১,০৬,৯৫০ টাকায়। খুচরো রুপো ১,০৭,০৫০ টাকা। জিএসটি ধরলে দুই দামই পেরিয়েছে ১,১০,০০০ টাকা।
বাজার মহল বলছে, চলতি বছরে সাড়ে পাঁচ মাসেই ১০ গ্রাম পাকা সোনার দাম বেড়েছে ২৩,৫৫০ টাকা। গয়নার সোনা ২২,৪০০ টাকা। অন্য দিকে, এই সময়ে রুপোর বাটের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০,৭০০ টাকা। ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত সংঘর্ষ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, শুল্ক যুদ্ধ ঘিরে আশঙ্কাই যার কারণ। এই পরিস্থিতিতে এ বার ইজ়রায়েল-ইরানের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কায় বিশ্ব বাজারে আরও বেশি অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তাতে লগ্নিকারীরা প্রতিবারের মতোই শেয়ার, ঋণপত্র (বন্ড) বা মুদ্রার বাজার থেকে তহবিল তুলে এনে সুরক্ষিত লগ্নি হিসেবে সোনায় ঢালছেন। যা ঠেলে তুলছে তার দামকে।
সোনার দাম যত বাড়ছে, ততই তলানিতে নামেছে গয়নার বিক্রিবাটা। বহু দোকানদার জানাচ্ছেন, বিক্রি কমেছে প্রায় ৯০%। অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়েছে ছোট বিপণিগুলি। পাণ্ডুয়ার ছোট দোকানের মালিক গোপাল দে বলেন, “দাম ৭০,০০০-৭৫,০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রিবাটা ছিল। এখন প্রায় নেই। এই আকাশছোঁয়া দামে গ্রামে কে গয়না কিনবে! এ রকম চললে সংসার চালাব কী করে, সেটাই এখন বড় চিন্তা।’’
সেনকো গোল্ডের এমডি শুভঙ্কর সেনও বলছেন, ‘‘ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা চললে সোনার দাম বৃদ্ধির গতি কমার সম্ভাবনা কম। এর জেরে তেলের দাম বাড়ছে। যা মূল্যবৃদ্ধিকে টেনে তুলতে পারে। তা হলে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ স্থির রাখতে বা বাড়াতে পারে। তাই সোনার দাম কবে কমবে, তা বলা কঠিন। তবে এটা বলা যায়, দর আরও বাড়ার সম্ভাবনাই বেশি। এতে যাঁদের বাড়িতে বিয়ে রয়েছে, তাঁদের সমস্যা হবে বেশি।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)