বিশ্ব বাজারে তল পাচ্ছে না তেলের দাম। প্রতি ব্যারেলের দর নেমেছে ২৭ ডলারেরও নীচে। যার জেরে দুনিয়া জুড়ে শেয়ার বাজার টালমাটাল। আকাশে ফের আশঙ্কার মেঘ। অথচ ওই তলানিতে ঠেকা তেলের দামই ঘুরে দাঁড়ানোর রাস্তা প্রশস্ত করে দিচ্ছে হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের (এইচ পি এল) সামনে। হাতবদলের আগে যে-রুগ্ণ সংস্থার বিআইএফআরে যাওয়ার জোগাড় হয়েছিল, কাঁচামালের খরচ কমে যাওয়ায় এখন ধারের কিস্তি মিটিয়েও লাভের মুখ দেখছে তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, কর দেওয়ার আগে দিনে মুনাফার অঙ্ক দাঁড়াচ্ছে এক কোটি টাকা। মাসে ত্রিশ কোটি।
পেট্রোকেমের ব্যবসার মূল কাঁচামাল ন্যাপথা। যা পাওয়া যায় অশোধিত তেল শোধনের সময়ে। এখন বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দর ১৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে নীচে নামায় তার সঙ্গে কমেছে ন্যাপথার দামও। ফলে কমেছে উৎপাদন খরচ। অথচ উল্টো দিকে, পেট্রোপণ্যের (যা এইচপিএল তৈরি করে) চাহিদায় ভাটা না-পড়ায়, তার দাম সে ভাবে কমেনি। আর তাই মুনাফার মুখ দেখে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাচ্ছে সংস্থাটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, সুদ ও কর চোকানোর আগে মাসে গড়ে সংস্থার মুনাফা হচ্ছে ১২০ কোটি টাকা। ৫০ কোটি যাচ্ছে সুদ মেটাতে। তারপরে মেশিনের রক্ষণাবেক্ষণ সমেত অন্যান্য খাতে টাকা দেওয়ার শেষে প্রাক্-কর লাভ থাকছে মাসে ৩০-৩২ কোটি টাকা। দিনে এক কোটি।
মূলত চারটি জিনিস তৈরি করে পেট্রোকেম। এগুলি হল: পলিপ্রপিলিন, পলিইথিলিন, বেঞ্জিন, বুটাডিন। কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় ন্যাপথা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, তার খরচ প্রায় অর্ধেক হয়েছে। ২০১৩ সালে ৫০ হাজার টন ন্যাপথা আমদানির খরচ ছিল ৩০০ কোটি টাকা। সেখানে এখন তা ১০০-১৫০ কোটির বেশি হওয়া উচিত নয় বলে সংস্থার এক প্রাক্তন কর্তার দাবি। কিন্তু ন্যাপথার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পলিমার বা অন্যান্য পেট্রোপণ্যের দাম সে ভাবে কমেনি। প্লাস্টিক পণ্য নির্মাতাদের সংগঠন ইন্ডিয়ান প্লাস্টিক ফেডারেশনের দাবি, পলিমারের দাম কমেছে কিলোগ্রামে এক-দু’টাকা। এই ফারাকের সুবিধাই লাভ হয়ে ঢুকছে এইচপিএলের ঝুলিতে। উল্লেখ্য, চলতি বছরের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে রেকর্ড লাভ করেছে পেট্রোপণ্যের ব্যবসা করা রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজও।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পেট্রোপণ্যের ব্যবসা বাণিজ্যিক ভাবে লাভজনক হচ্ছে কি না, তা বোঝার একটি সমীকরণ রয়েছে। বিশ্ব বাজারের নিয়ম অনুযায়ী, লাভ দেখতে প্রতি টন ন্যাপথা এবং পলিমারের (মূলত প্লাস্টিক পণ্য তৈরির উপাদান) দামের মধ্যে ৫০০ থেকে ৫৫০ ডলার ফারাক থাকা জরুরি। একই ভাবে, ন্যাপথা ও প্রায় সব ধরনের পেট্রোপণ্যের (বেঞ্জিন, বুটাডিন, পলিপ্রপিলিন, পলিইথিলিন ইত্যাদি) গড় দামের ফারাক হতে হবে টনে ২২০ ডলার। সংস্থা সূত্রে খবর, কাঁচামালের দর কমায় দু’টি মাপকাঠি এখন বজায় রাখতে পারছে তারা।
অবশ্য সংস্থা সূত্রে দাবি, শুধু উৎপাদন খরচ কমা নয়, লাভজনক হওয়ার পিছনে অবদান রয়েছে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধিরও। এক সময়ে টাকার অভাবে ন্যাপথা ক্র্যাকারের উৎপাদন ক্ষমতা পুরো সদ্ব্যবহারের ধারেকাছেও যেতে পারত না এইচপিএল। এখন ৯৭% ব্যবহৃত হচ্ছে বলে কর্তৃপক্ষের দাবি।
পূর্ণ ক্ষমতায় উৎপাদনের জন্য প্রতি ঘণ্টায় ন্যাপথা লাগে ২০০ টন। পুরো দিনে ৪,৮০০ টন। যার ৫০-৬০% (৩,০০০ টন) পলিপ্রপিলিন ও পলিইথিলিন তৈরিতে লাগে। বাকিটা ন্যাপথা খরচ হয় মোটর স্পিরিট, বেঞ্জিন, বুটা়ডিন-সহ অন্যান্য পেট্রোপণ্য উৎপাদনে। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, গুণমান ভাল হওয়ায় বরাবরই বাজারে পেট্রোকেমের পণ্যের চাহিদা ভাল। যে- কারণে ছ’মাস কারখানা বন্ধ রাখার পরে গত ফেব্রুয়ারিতে ফের উৎপাদন শুরু হলেও বাজার ফিরে পেতে অসুবিধা হয়নি। তাই জিনিস তৈরির পরেও তা বিক্রি না-হয়ে পড়ে থাকার সমস্যা নেই।
দীর্ঘ আইনি জট কাটিয়ে সম্প্রতি মীমাংসা হয়েছে মালিকানা-সমস্যার। তারপরে কাঁচামালের পড়তি দাম আর মোটামুটি ভাবে নিশ্চিত চাহিদা থাকা বাজারের জোড়া সুবিধা তারা ঘুরে দাঁড়াতে কী ভাবে কাজে লাগায়, সে দিকেই এখন নজর সকলের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy