E-Paper

আশার বাজারে অপেক্ষা সুদ কমার, নজর বিশ্বেও

শেয়ার বাজার বেশ কিছু দিন ধরে চাঙ্গা থাকায় প্রথমবার শেয়ার ছেড়ে তহবিল সংগ্রহ করতে (আইপিও বা প্রথম শেয়ার ইসু) নামছে একের পর এক সংস্থা। ইতিমধ্যেই ভাল লাভের সন্ধান দিয়েছে অনেক আইপিও।

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২৪ ০৪:৫৩

—প্রতীকী চিত্র।

আমেরিকা মন্দার কবলে পড়তে পারে, এই আশঙ্কায় বিশ্ব জুড়ে শেয়ার বাজারে ধস নেমেছিল ৫ অগস্ট। সে দিন সেনসেক্স খুইয়েছিল ২২২২ পয়েন্ট। গত শুক্রবার ওই সূচকই ১৩৩১ উঠেছে আমেরিকার অর্থনীতিতে প্রাণ ফেরার ইঙ্গিতে এবং সুদ কমার আশায়। সম্প্রতি তলিয়ে যাওয়া জাপানের শেয়ার সূচক নিক্কেই সে দিন লাফায় ১৩৩৬ পয়েন্ট (৩.৬৪%)। বিশ্বের প্রায় সব শেয়ার বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়, যখন জানা যায় আমেরিকায় খুচরো বিক্রিবাটা বেশ ভাল রকম বেড়েছে। তার উপর অর্থনীতিতে একটু মন্দাভাব দেখা দেওয়ায় বাজার আশা করছে, সেপ্টেম্বরের বৈঠকে সে দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারাল রিজ়ার্ভ অন্ততপক্ষে ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমাবে। এই আশায় আরও জ্বালানি জুগিয়েছে জুলাইয়ে খুচরো মূল্যবৃদ্ধি। গত মাসে সেখানে তা বেড়েছে ০.২% হারে। ১২ মাসের হার ২.৯%, যা ২০২১ সালের মার্চের পরে সব থেকে কম।

যদিও ভারতের বাজারকে শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক ঘটনা ঠেলে তুলেছে ভাবলে ভুল হবে। জ্বালানির জোগান ছিল দেশের ভেতর থেকেও। যে কারণে সেনসেক্স ফের ঢুকেছে ৮০ হাজারের ঘরে। সর্বোচ্চ শিখর থেকে তা মাত্র ১৪০০ পয়েন্ট পিছনে। বর্তমানে অবস্থা যা, তাতে ভবিষ্যৎ নিয়েও আশায় বুক বাঁধছেন লগ্নিকারীরা। তাই মাঝারি মেয়াদে সূচক আরও কিছুটা বেড়ে নতুন নজির গড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণগুলি হল—

  • জুলাইয়ে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার নেমেছে ৪ শতাংশের নীচে (৩.৫৪%)। মূল্যবৃদ্ধিকে ওই ৪ শতাংশে বাঁধারই লক্ষ্য স্থির করেছিল রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। মাথা নামিয়েছে পাইকারি বাজারে দাম বৃদ্ধির হারও (২.০৪%)।
  • দেশের নানা প্রান্তে ভাল মতো বৃষ্টি হতে থাকায় আশা, কৃষি ফলন ভাল হবে। যা খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক হবে।
  • অগস্টেও যদি খুচরো মূল্যবৃদ্ধি ৪ শতাংশের নীচে থাকে, তা হলে অক্টোবরের ঋণনীতি বৈঠকে (৭-৯ অক্টোবর) আরবিআই সুদ কমাতে পারে বলে আশা করা যায়।
  • গত শুক্রবার ভারতের বাজারে ক্রেতার ভূমিকায় ফিরেছে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি। আশার বাতাবরণ তৈরি হওয়ায় অনুমান করা হচ্ছে, আগামী দিনে তারা মোটা টাকা ঢালতে পারে এ দেশে।
  • জুলাইয়ে শেয়ার ভিত্তিক মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি কমলেও, তার পরিমাণ ছিল ৩৭ হাজার কোটি টাকার উপরে (৩৭,১১৩ কোটি টাকা)।
  • বর্ষা ভাল হওয়ায় আশা, গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। চাহিদা বাড়বে বিভিন্ন পণ্যের। এর প্রতিফলন কিছুটা দেখা যেতে পারে জুলাই-সেপ্টেম্বরে দেশের কর্পোরেট সংস্থাগুলির আর্থিক ফলে। পাশাপাশি সুদ কমতে শুরু করলে সূচকের পালে হাওয়া জোরালো হবে। সবক’টি শর্ত বিচার করে এ বারের দেওয়ালিতে বাজার চাঙ্গা থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।
  • লগ্নির পরিবেশ এখন বেশ অনুকূল মনে হলেও, তা দ্রুত খারাপের দিকে যেতে পারে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়তে শুরু করলে। তাই বাজারের নজর থাকবে ইজ়রায়েল-হামাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতির দিকে। বিশেষ করে ইরান-ইজ়রায়েলের মধ্যে যুদ্ধের আবহ তৈরি হয় কি না, তার উপর।

শেয়ার বাজার বেশ কিছু দিন ধরে চাঙ্গা থাকায় প্রথমবার শেয়ার ছেড়ে তহবিল সংগ্রহ করতে (আইপিও বা প্রথম শেয়ার ইসু) নামছে একের পর এক সংস্থা। ইতিমধ্যেই ভাল লাভের সন্ধান দিয়েছে অনেক আইপিও। বেশ কয়েকটি আসছে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি মাপের সংস্থা থেকেও। এর ফলে নতুন শিল্প গড়ে উঠছে। বাড়ছে কর্মসংস্থান। সম্প্রতি বাজারে শেয়ার ছেড়েছে ওলা ইলেকট্রিক, এমকিয়োর ফার্মা, অ্যালায়েড ব্লেন্ডার্স, গো ডিজিট, সেগাল ইন্ডিয়া, ব্রেনবিজ় সলিউশন্স, আকুমস ড্রাগস ইত্যাদি সংস্থা। ৪০০০ কোটি টাকার আইপিও আনার লক্ষ্যে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সেবির দফতরে কাগজপত্র জমা করেছে জেএসডব্লিউ সিমেন্ট। একগুচ্ছ নতুন সংস্থা নথিবদ্ধ হওয়ায় এবং বাজার চাঙ্গা থাকায় দ্রুত বাড়ছে নথিবদ্ধ সমস্ত শেয়ারের মোট বাজারদর বা মার্কেট ক্যাপিটালাইজ়েশন। বাড়ছে লগ্নিকারীর সংখ্যাও। গত শুক্রবার বিএসই-র মার্কেট ক্যাপ ছিল ৪৫১.৬০ লক্ষ কোটি টাকা। লগ্নিকারীর সংখ্যা ছুঁয়েছে ১৮.৬০ কোটি।

(মতামত ব্যক্তিগত)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

World Economy Indian Economy Share Market Federal Reserve

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy