জিএসটির হার কমার পরে ঠিক যখন পুজো বাজার চাঙ্গা হওয়ার মুখে, তখনই সোমবারের রাতভর মেঘভাঙা বৃষ্টি কলকাতার বড় বাজারগুলির কোমর কার্যত ভেঙে দিয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীমহলের। তারা জানাচ্ছে, প্রায় প্রতিটি বাজারে ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি ছাড়িয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের হিসাব অনুযায়ী, সামগ্রিক ভাবে শুধু কলকাতার তিন-চারটে বড় বাজারের লোকসানই ২০-২২ কোটি টাকা পেরিয়ে গিয়েছে।
নিউ মার্কেট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দেবু ভট্টাচার্য জানান, পুজোর মুখে জিএসটি কমায় লাভের আশায় বসেছিলেন ব্যবসায়ীরা। উল্টে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হল। তাঁর কথায়, ‘‘নিউ মার্কেটে পোশাক, প্রসাধনী, গৃহস্থালির পণ্য— সব দোকানেরই প্রচুর জিনিস নষ্ট হয়েছে। বুধবার সারা দিনেও ক্ষতির হিসাব শেষ হয়নি।’’ দেবুর দাবি, “নিউ মার্কেটের যা অবস্থা, তাতে পুরসভা নজর না দিলে শতাব্দী প্রাচীন বাজারটি বন্ধ করতে হবে।” উল্টোডাঙায় জমা জলে দোকানগুলি অনেক টাকার ব্যবসা খুইয়েছে। জুতো বিক্রেতা অজন্তার এক আধিকারিক জানান, কমপক্ষে কয়েক লক্ষ টাকার সামগ্রী আর বিক্রি হবে না। বিধাননগর, বেহালা, হাতিবাগানের দোকানেও বিপুল অঙ্কের পণ্য নষ্ট হয়েছে। তবে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা উল্টোডাঙার।’’
গড়িয়াহাট ইন্দিরা হকার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দেবরাজ ঘোষের দাবি, প্রায় সব হকারেরই জিনিস নষ্ট হয়েছে। ক্ষতি ছাড়াতে পারে বেশ কয়েক কোটি টাকা। বাসন্তদেবী কলেজের সামনের শাড়ি বিক্রেতা গোপাল রায়ের লক্ষাধিক টাকা জলে গিয়েছে। ‘হাতিবাগান বাজার মার্চেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের’ সম্পাদক অমল কুমার দাস বলেন, ‘‘টানা দু’বছর ব্যবসা খারাপ হল। বৃষ্টির ফলে গত বারের চেয়েও খারাপ হতে পারে।’’ সেখানকার রাধারাণী বস্ত্রালয়, টুকটুকির মতো বড় বিপণির কয়েক কোটি টাকার জিনিস নষ্ট হয়েছে। তাদের মতে, পুজোর ভিড় এমনিতেই অধরা ছিল। দুর্যোগ কোমর ভেঙে দিয়েছে।
বুধবার হাতিবাগানে বাজার করতে এসে পাইকপাড়ার জয়ন্ত রায় বলেন, “জিএসটি কমার অপেক্ষায় ছিলাম। বৃষ্টি দেখে মনে হচ্ছিল এ বার পুজোর কেনাকাটা করাই হবে না। আজ এসেছি, একটু ফাঁকা। কিন্তু বাজারের অবস্থা দেখে খারাপ লাগছে।” নিউ মার্কেট বা গড়িয়াহাট, ব্যবসায়ীদের একই কথা, ‘‘কাজে মন দিতে পারছি না। দিনভর হিসাব করছি কত পণ্য নষ্ট হল আর প্রমাদ গুনছি সপ্তাহান্তে আসন্ন নিম্নচাপ নিয়ে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)