প্রতীকী ছবি।
আতিমারির মধ্যে গত অর্থবর্ষের প্রায় পুরোটা জুড়েই রুজি-রোজগার হারিয়েছেন বহু মানুষ। অত্যাবশ্যক পণ্য ও চিকিৎসার মতো জরুরি পরিষেবায় খরচ করতে গিয়ে টান পড়েছে গৃহস্থের সঞ্চয়ে। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কই জানাচ্ছে, ২০২০-২১ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে ব্যাঙ্কে জমার হার ছিল জিডিপি-র ৭.৭%, তৃতীয় ত্রৈমাসিকে তা নেমেছে ৩ শতাংশে। অথচ এর ঠিক উল্টো ছবি দেখা গিয়েছে মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে। এই শিল্পের সংগঠন অ্যাম্ফি জানাচ্ছে, করোনার মধ্যেও গত বছরে সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান (এসআইপি) পদ্ধতিতে ফান্ডে এসেছে ৯৬,০৮০ কোটি টাকা। তার উপরে ২০১৬ সালের এপ্রিলে ৫.৮৮ লক্ষ ফান্ড অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল, মে মাসে সেই অঙ্ক ১৫.৪৮ লক্ষ।
মোদী সরকার বরাবরই বলছে মানুষকে শেয়ারে লগ্নি করতে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সেই ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা সকলের নেই। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় ব্যাঙ্ক বা স্বল্প সঞ্চয়ে সুদ যে ভাবে কমেছে, তাতে আমজনতার একাংশ কিছুটা বেশি রিটার্নের আশায় সেই ঝুঁকি নিতে বাধ্য হচ্ছেন। আর সেখানেই ফান্ডে এসআইপি-তে ঝুঁকি থাকলেও তা শেয়ারের চেয়ে কম। একলপ্তে বেশি টাকা রাখতে হয় না। রেকারিং ডিপোজ়িটের মতো মাসে মাসে লগ্নি করা যায়। অ্যাকাউন্ট চালু রাখা যায় মাসে ৫০০ টাকা দিয়েও। এই সব বৈশিষ্ট্যই এসআইপি-কে জনপ্রিয় করে তুলেছে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা।
অ্যাম্ফির চিফ এগ্জ়িকিউটিভ অফিসার এন এস ভেঙ্কটেশেরও বক্তব্য, ব্যাঙ্কে সুদ যেখানে দাঁড়িয়ে, তার থেকে মূল্যবৃদ্ধির হার বাদ দিলে দেখা যাবে অনেক ক্ষেত্রেই প্রকৃত অর্থে সুদ থেকে আয় শূন্য। তার চেয়ে ঝুঁকি বেশি থাকলেও, শেয়ার নির্ভর ফান্ডে রিটার্ন কিছুটা বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পাশাপাশি, এই ধরনের ফান্ডে করের হিসেব করার সময়ে ইন্ডেক্সিং-এর (মূল্যবৃদ্ধি বাদ দিয়ে মুনাফার হিসেব, এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত করছাড়) সুবিধা মেলে। ফলে আগ্রহী হচ্ছেন মানুষ।
প্রিন্সিপাল আর্থিক উপদেষ্টা সঞ্জীব সান্যাল সম্প্রতি বলেছিলেন, কেন্দ্রের মতে করোনার সমস্যা মিটলে বৃদ্ধিতে যে গতি আসবে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়াতে হবে বেসরকারি লগ্নি। সে জন্য শেয়ার ও ঋণপত্রই হবে তুলনায় কম খরচে পুঁজি জোগাড়ের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। তবে অনেকে বলছেন, শীর্ষ ব্যাঙ্কের বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং শিল্প ও মানুষের ঋণ বিমুখ মানসিকতার জেরে এখন ব্যাঙ্কগুলির হাতে বিপুল নগদ রয়েছে ঠিকই। কিন্তু অর্থনীতি ছন্দে ফিরলে ধারের জন্য ব্যাঙ্কের কাছে যেতে হবে শিল্পকে। তখনও ব্যাঙ্ক জমা এ ভাবেই কমতে থাকলে শিল্পের ঋণের জন্য টাকায় টান পড়বে। সেই ঘাটতি শুধু শেয়ার দিয়ে মিটবে কি না, সেই সন্দেহ থাকছেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy