রাশিয়া থেকে লাগাতার অপরিশোধিত তেল আমদানি করে চলেছে ভারত। চলতি বছরের মে মাসে দৈনিক তার অঙ্ক ছিল ১৯ লক্ষ ৬০ হাজার ব্যারেল। গত ১০ মাসের নিরিখে যা সর্বোচ্চ। মস্কোর থেকে সস্তা দরে কাঁচা তেল কেনার সুবিধা পাওয়ায় নয়াদিল্লি এর আমদানি বাড়িয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
বিশ্বের তেল আমদানিকারী দেশগুলির মধ্যে ভারত তৃতীয় বৃহত্তম। এ বছরের মে মাসে দৈনিক ৫১ লক্ষ ব্যারেল তেল কেনে নয়াদিল্লি। এর সিংহভাগই এসেছে রাশিয়ার থেকে। সূত্রের খবর, এই সময়সীমার মধ্যে দিনে যত পরিমাণ তেল ভারত কিনেছে, তার ৩৭-৩৮ শতাংশ দিয়েছে মস্কো। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইরাক। মে মাসে দৈনিক ১২ লক্ষ ব্যারেল কাঁচা তেল নয়াদিল্লিকে সরবরাহ করে পশ্চিম এশিয়ার এই আরব মুলুক।
ভারতকে ‘তরল সোনা’ বিক্রির নিরিখে তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে রয়েছে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহী। মে মাসে পশ্চিম এশিয়ার এই দু’টি দেশ নয়াদিল্লিতে প্রতিদিন তেল পাঠিয়েছে যথাক্রমে ৬ লক্ষ ৫১ হাজার এবং ৪ লক্ষ ৯০ হাজার ব্যারেল। এই সময়সীমার মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের থেকে দিনে ২ লক্ষ ৮০ হাজার ব্যারেল খনিজ তেল কিনেছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার।
‘তরল সোনা’ আমদানির ক্ষেত্রে নয়াদিল্লির এ-হেন ‘বৈচিত্রময়’ অবস্থান নিয়ে চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করেছে কেপলার রিফাইনিং অ্যান্ড মডেলিংয়ের প্রধান গবেষক সুমিত রিটোলিয়া। তাঁর কথায়, ‘‘আন্তর্জাতিক চাপ থাকা সত্ত্বেও রুশ খনিজ তেলের উপর ভরসা রেখেছে ভারত। কারণ, এটা দামে বেশ সস্তা। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলির থেকে একেবারেই মুখ ফিরিয়ে থাকছে না মোদী সরকার। এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতের ‘মাস্টারস্ট্রোক’ হতে পারে।’’
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনের সঙ্গে পুরোদস্তুর যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। লড়াই শুরু হতেই মস্কোর উপর বিপুল পরিমাণে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেয় আমেরিকা-সহ পশ্চিমি বিশ্ব। এর পরই ব্যাপক সস্তা দরে ভারতকে তেল বিক্রির প্রস্তাব দেয় ক্রেমলিন। সঙ্গে সঙ্গেই তা গ্রহণ করেছিল মোদী সরকার। ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পূর্ব ইউরোপের দেশটির থেকে তেল আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি করতে থাকে নয়াদিল্লি।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে ভারতের রুশ তেল আমদানির পরিমাণ ছিল এক শতাংশেরও কম। কিন্তু, বর্তমানে সেটা বেড়ে ৪০ থেকে ৪৪ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে। আগামী দিনে এই অঙ্ক আরও বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্তে একেবারেই খুশি নয় যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমি দুনিয়া।