ক্রেতা-বিক্রেতাদের চিন্তা বাড়িয়ে পুজোর সপ্তাহান্তে আরও চড়ল সোনার দাম। শুক্রবারের তুলনায় শনিবার কলকাতায় তা মাথা তুলল ৭৫০ টাকা। রুপো বাড়ল কেজিতে ২৭৫০ টাকা। এর জেরে ধনতেরস ও দেওয়ালিতে বিক্রি আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় স্বর্ণশিল্প মহল। ইতিমধ্যেই চাহিদা তলানিতে নেমেছে। ক্রেতাদের দেখা মিলছে না। বিশেষত দুশ্চিন্তায় কারিগরেরা। তাঁদের দাবি, ব্যবসায়ীরা বরাত পেলে অধিকাংশ কারিগর কাজপান। পুজোয় সিংহভাগেরই কাজ ছিল না। এই অবস্থায় রুজি-রুটি হারাচ্ছেন অনেকে। তাই ফের কেন্দ্রের কাছে সোনার গয়না কিনতে মাসিক কিস্তি চালুর দাবি তুলছে শিল্পমহল।
এ দিন শহরে খুচরো পাকা সোনা (১০ গ্রাম ২৪ ক্যারাট) পৌঁছেছে ১,১৮,৫৫০ টাকায়। জিএসটি নিয়ে ১,২২,১০৬.৫ টাকা। গয়নার সোনা (১০ গ্রাম ২২ ক্যারাট) ১,১২,৭০০ টাকা। কর ধরে ১,১৬,০৮১ টাকা। দুইদরই তৈরি করেছে নতুন নজির। ১ জানুয়ারি থেকে খুচরো পাকা সোনা ও সোনার গয়না বেড়েছে যথাক্রমে ৪১,৪০০ টাকা ও ৩৯,৪০০ টাকা। শনিবার রেকর্ড গড়ে কর বাদে কেজিতেরুপোর বাট ১,৪৯,২০০ টাকা হয়েছে। খুচরোর দাম আরও ১০০ টাকা বেশি। কর নিয়ে দুই দর যথাক্রমে ১,৫৩,৬৭৬ ও ১,৫৩,৭৭৯ টাকা। বছরের শুরু থেকে দাম বেড়েছে ৬২,৯৫০ টাকা।
আমেরিকায় বাজেট পাশ নিয়ে রফা হয়নি শুক্রবারও। ফলে অন্তত শনি ও রবিবার সেখানে সরকারি কাজকর্ম বন্ধ, অর্থাৎ শাটডাউন চলবে। এক দিনের শাটডাউনেই বিশ্ব বাজারে সোনার দর চড়ে যাওয়ায় শুক্রবার ভারতে দাম ৩০০০ টাকা বেড়েছিল। এর পরেও কাজকর্ম বন্ধ থাকলে দর আরও চড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
মধ্যমগ্রামের গয়নার কারিগর আশিস পাল বলছেন, ‘‘২০ বছর ধরে গয়নার কাজ করছি। কিন্তু এত খারাপ পুজো আগে কখনও কাটাইনি। ৮০% কাজই চলে গিয়েছে। পরিবারে পুজোর সময়ে যে আনন্দ থাকে, তা এ বার ছিল না। কোনও রকমে শুধু বাচ্চাদের জামা কিনে দিতে পেরেছি। দিন দিন অবস্থা খারাপ হচ্ছে। অন্য কিছু যে করব, সে জন্য যে পুঁজি হাতে নেই।’’ একই কথা বলছেন আগরপাড়ার কারিগর দীপক ধর। তাঁর বক্তব্য, ‘‘১৩বছর বয়সে কাজ শিখতে শুরু করে ১৯৯৭ থেকে পেশা হিসেবে নিয়েছি। এ বার পুজোয় পরিবারের চাহিদা মেটাতে পারিনি। বাচ্চার পড়ার টাকা জোগাড়ে হিমশিম খাচ্ছি।’’
বিক্রি তলানি ছোঁয়ায় স্বস্তিতে নেই বিপণিগুলি। রাখালচন্দ্র দে জুয়েলার্সের কর্ণধার নবীনচন্দ্র বলছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ হাতে তৈরি গয়নার জন্য বিখ্যাত। অথচ এখন শিল্প ও শিল্পী, উভয়েই সমস্যায়। এপ্রিলে অক্ষয় তৃতীয়ার পর থেকেই অবস্থা খারাপ হয়েছে। এখন তো অনেকে সোনার পাশাপাশি অন্য ব্যবসা করছেন। কেন্দ্র সোনার গয়না কিনতে কিস্তি চালু না করলে অনেকেই আর টিকে থাকতে পারবেন না।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)