Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Inflation

Price Hike: ডলার-তেলে চড়ছে খরচ, বাড়ছে উদ্বেগ

জ্বালানি সঙ্কট এবং খরচ নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য কয়েকটি দেশ একাধিক কঠিন পদক্ষেপ করলেও ভারতে তেমন কিছু দেখা যায়নি।

অমিতাভ গুহ সরকার
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২২ ০৬:১৪
Share: Save:

এক দিকে জ্বালানির চড়া দাম। অন্য দিকে নাগাড়ে বাড়তে থাকা ডলার— এই জোড়া চাপ বড় উদ্বেগের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে বিশ্বের বহু অর্থনীতিকে। সঙ্কট শ্রীলঙ্কার মতো গভীর না হলেও পাকিস্তান-সহ ডজনখানেক দেশ খানিকটা সেই পথেই হাঁটছে। রাশিয়া থেকে তেল ও গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়ায় বা বন্ধ হওয়ায় জ্বালানির সঙ্কটে ভুগছে ইউরোপ। ভারতের নীতি নির্ধারকদেরও কপালে চিন্তার ভাঁজ। কারণ, ডলারের তুলনায় টাকার দাম মাথা নামাচ্ছে। ফলে চড়া তেলের জমানায় বাড়ছে জ্বালানি আমদানির খরচ। আর ভারত সেই সমস্ত দেশের তালিকায় পড়ে যেখানে অশোধিত তেল ও কয়লা আমদানি করতে অনেকটাই খালি হয়ে যায় বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার।

জ্বালানি সঙ্কট এবং খরচ নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য কয়েকটি দেশ একাধিক কঠিন পদক্ষেপ করলেও ভারতে তেমন কিছু দেখা যায়নি। বাংলাদেশ যেমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিজ়েলচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলিকে বন্ধ রাখার। বিভিন্ন অঞ্চলে প্রত্যেক দিন এক-দু’ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রচুর গ্যাস ওডিজ়েল লাগে। সেই খাতে খরচ কমানোই উদ্দেশ্য। ভারতে আপাতত এমন পদক্ষেপের অবশ্য বাস্তবতা নেই। কেন্দ্র বরং চাইছে এই পরিস্থিতিতে রাশিয়া থেকে সস্তায় অশোধিত তেল কেনা বাড়াতে। আসলে শুধু জ্বালানি কেন, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পার করেও বহু পণ্য এবং কাঁচামালের ক্ষেত্রেই ভারত আমদানি নির্ভর।

ভারতের বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার ক্রমশই কমছে মূলত আমদানিকৃত জ্বালানির দাম মেটাতে। গত অক্টোবরে এই ভান্ডার ছিল ৬৪,০০০ কোটি ডলার। গত ১৫ জুলাই শেষ হওয়া সপ্তাহে তা নেমে এসেছে ৫৭,২৭১.২ কোটিতে। এক দিকে জ্বালানি আমদানি এবং অন্য দিকে শেয়ার বাজার থেকে বিদেশি লগ্নি বেরিয়ে যাওয়ায় টাকার নিরিখে বেড়ে চলেছে ডলারের দাম। তা যাতে লাগামছাড়া না হয়, তার জন্য মাঝেমধ্যেই ভান্ডার থেকে ডলার বিক্রি করছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। এতে আরও সঙ্কুচিত হচ্ছে বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার।

ডলারের দাম এখন ঘোরাফেরা করছে ৮০ টাকার আশেপাশে। গত জানুয়ারিতে আমেরিকার মুদ্রাটির দর ছিল ৭৪ টাকা। অর্থাৎ, সাত মাসে টাকার দাম কমেছে ৭.৫%। তবে শুধু ভারতে নয়, ডলারের দাম বৃদ্ধির ফলে মুদ্রার দাম পড়েছে অনেক দেশেই। ইউরো এবং ডলার এখন প্রায় সমান। বাংলাদেশে ১ ডলারের দাম ৯৪ টাকা, পাকিস্তানে ২২৫ রুপি, শ্রীলঙ্কায় ৩৬০ রুপি, চিনে ৬.৭৫ ইউয়ান এবং জাপানে ১৩৮ ইয়েন। ভারতের ডলারের দাম বৃদ্ধির অর্থ সব ধরনের আমদানি খরচ মাথা তোলা। বিদেশে পড়া ও বেড়াতে যাওয়ার খরচ বাড়া। চড়া মূল্যবৃদ্ধিকে বাগে আনতে ২৭-২৮ জুলাই আমেরিকায় আর এক প্রস্থ সুদ বৃদ্ধির সম্ভাবনা প্রবল। তা হলে ভারতে আরও বাড়তে পারে ডলারের দাম। সুদের হার বাড়াতে হতে পারে ভারতকেও। দুই দেশে সুদ বাড়লে শেয়ার বাজার ফের দুর্বল হতে পারে।

অথচ ক্রমাগত পতনের পর সম্প্রতি টানা ছ’দিনে ২৩১১ পয়েন্ট বেড়ে সেনসেক্স থিতু হয়েছে ৫৬,০৭২ পয়েন্টে। ৬৭০ পয়েন্ট বেড়ে নিফ্‌টি ১৬,৭১৯। বিক্রি বন্ধ করে বিদেশি লগ্নিকারীরা ক্রেতা হিসেবে ফেরায় বাজার শক্তি ফিরে পেয়েছে। এই উত্থানে কিছুটা প্রাণ এসেছে মিউচুয়াল ফান্ডগুলিতেও। কিন্তু সুদ ফের বাড়লে সূচকের গতিপথ কী হয়, সে দিকেই এখন আগ্রহ সংশ্লিষ্ট মহলের।

(মতামত ব্যক্তিগত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Inflation Indian Economy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE