চিন ফেলল, জাপান তুলল। হ্যাঁ, ঠিক এমনটাই হয়েছে শেয়ার বাজারে। চিনের অর্থনীতিতে দুর্বলতা প্রকাশ পাওয়ার পর থেকে বাজার পড়েছে বিশ্ব জুড়েই। জাপানের আর্থিক অবস্থাও খুব একটা ভাল না। অর্থনীতিতে প্রাণ ফেরাতে জাপান এমন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে জেগে উঠেছে শেয়ার বাজার। ভারতে কোম্পানি ফলাফল প্রকাশ এখন মধ্যগগনে। লগ্নিকারীদের এখন ফলাফল ছাড়া লক্ষ রাখতে হবে ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সুদের গতিবিধির উপর। রঘুরাম রাজন এই দফায় আগামী ২ ফেব্রুয়ারি ঋণনীতি ফিরে দেতে বসে সুদ কমানোর পথে হাঁটেন কি না, তা-ই এখন দেখার।
প্রথম সূর্যের দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ক সুদকে শূন্যেরও নীচে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থাৎ ন্যূনতম পরিমাণ টাকার বেশি অর্থ ব্যাঙ্কে গচ্ছিত রাখলে সুদ পাওয়ার বদলে আপনাকে সুদ গুনতে হবে। আর এই শর্তেই জেগে উঠেছে ভারতীয় শেয়ার বাজার। আশা, জাপানে সুদ কমায় বেশি আয়ের আশায় সে দেশ থেকে তহবিল ভারতের মতো দ্রুত উন্নয়নশীল দেশে প্রবাহিত হবে। এই খবরে ঝিমিয়ে থাকা শেয়ার বাজার হঠাৎই বেশ চাঙ্গা হয়ে ওঠে। শুক্রবার সেনসেক্স এক ঝটকায় ওঠে ৪০১ পয়েন্ট। গোটা সপ্তাহের বিচারে নতুন বছরে এই প্রথম বাজার উঠল। সপ্তাহ শেষে সেনসেক্স পৌঁছেছে ২৪,৮৭১ অঙ্কে। নিফ্টির অবস্থান ছিল ৭,৫৬৪ অঙ্ক (+১৩৯)। শেয়ার বাজার চাঙ্গা হওয়ায় ডলারের তুলনায় টাকার দামও বেড়েছে। ডলারের দাম ৪৫ পয়সা নেমে পৌঁছেছে ৬৭.৭৮ টাকায়। সপ্তাহ শেষে খাঁটি সোনার দর থেকেছে ২৭ হাজারের উপরে (২৭,০৭০ টাকা)। সব মিলিয়ে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে লগ্নিকারীদের মনে। তবে এটা মনে করলে ভুল হবে যে, দুর্যোগ কেটে গিয়েছে। মেঘলা আকাশে এক ঝলক সূর্য দেখা গিয়েছে মাত্র। মেঘ কাটতে এখনও সময় লাগবে।
গত সপ্তাহে প্রকাশিত হয়েছে কয়েকটি বড় সংস্থার আর্থিক ফলাফল। মোটের উপরে এখনও পর্যন্ত প্রকাশিত ফলাফলে মন্দের দিকটাই হয়তো বেশি। এক নজরে দেখে নেব গত সপ্তাহে প্রকাশিত কয়েকটি ফলাফল।
গৃহঋণ সংস্থা এইচডিএফসি-র ত্রৈমাসিক লাভ ১১% বেড়ে পৌঁছেছে ২,৪১৯ কোটি টাকায়। রাষ্ট্রায়ত্ত পাওয়ার গ্রিডের লাভ ১,২২৯ কোটি টাকা থেকে ৩১% বেড়ে উঠে এসেছে ১,৬১৩ কোটি টাকায়। লাভ কমেছে সরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানি এনটিপিসি-র। কোম্পানির নিট মুনাফা প্রায় ১৯% কমে নেমে এসেছে ২,৪৯৩ কোটি টাকায়। আশার কথা, বিক্রি, অর্ডার বুকিং এবং লাভ সবই বেড়েছে অগ্রণী নির্মাণ এবং মূলধনী পণ্য সংস্থা লার্সেন অ্যান্ড টুব্রোর (এলঅ্যান্ডটি)। শেষ তিন মাসে কোম্পানির বিক্রি ১,৭৯৮ কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে ২৫,৩৮৭ কোটি টাকা। ১৯.৪২% বেড়ে লাভ পৌঁছেছে ১,০৩৫ কোটি টাকায়। এই তিন মাসে নতুন বরাত প্রাপ্তির পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ৩৮,৫২৮ কোটি টাকা। চলতি আর্থিক বছরের প্রথম ৯ মাসে মোট বরাত এসেছে ৯৩,৫২৪ কোটি টাকার। সব মিলিয়ে এলঅ্যান্ডটি গোষ্ঠীর হাতে এখন বরাতের পরিমাণ ২,৫৬,৪৫৮ কোটি টাকার। বর্তমান পরিস্থিতিতে মন্দ নয়। এই ফলাফলে ঝিমিয়ে পড়া এলঅ্যান্ডটি শেয়ার কিছুটা চাঙ্গা হবে বলে আশা করা যায়। এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের নিট লাভ ২০% বেড়ে পৌঁছেছে ৩,৩৫৭ কোটি টাকায়। পাশাপাশি বেড়েছে খারাপ ঋণের পরিমাণও। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় লাভ কমেছে আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক এবং ভারতী এয়ারটেল-এর। দেশের বৃহত্তম গাড়ি নির্মাতা মারুতি সুজুকি-র নিট লাভ ২৭% বেড়ে পৌঁছেছে ১,০১৯ কোটি টাকায়। গত তিন মাসে কোম্পানি বিক্রি করেছে ৩.৭৪ লক্ষ (+১৫%) গাড়ি। টাকার অঙ্কে বিক্রি ২০% বেড়ে স্পর্শ করেছে ১৪,৭৬৮ কোটি টাকা।
এইচডিএফসি, এলঅ্যান্ডটি, মারুতি এবং এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের উন্নত ফলাফল অর্থনীতি সম্পর্কে আশা জাগায়। ফলাফল দেখে এখন অল্প অল্প করে লগ্নি শুরু করা যেতে পারে। এ নিয়ে কয়েক বার দেখা গেল, কমতে কমতে সেনসেক্স যখনই ২৪ হাজার বা তার নীচে নামে— তখনই বাজারে একটি প্রতিরোধ সৃষ্টি হয় এবং ওই জায়গা থেকে বাজার আবার উঠতে শুরু করে। এ বারও তাই হয়েছে। এই কথা মাথায় রেখে উপযুক্ত সময়ে শেয়ার কিনতে হবে।
করমুক্ত বন্ড ইস্যুতে গত সপ্তাহে ভাল সাড়া পেয়েছে সরকারি সংস্থা হা়ডকো। দ্বিগুণ আবেদন জমা পড়েছে খুচরো লগ্নিকারীদের ৪০ শতাংশ সংরক্ষিত বন্ডের জন্য। ১৫ বছর মেয়াদে এই শ্রেণির লগ্নিকারীরা সুদ পাবেন বার্ষিক ৭.৬৪ শতাংশ হারে। অন্যান্য লগ্নিতে আকর্ষণ কমে আসায় করমুক্ত বন্ড ইস্যুগুলি মোটা টাকা শুষে নিচ্ছে বাজার থেকে। শেয়ার বাজারের জন্য এটা আদৌ সুখবর নয়।