Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ভুঁড়ি কমাতে কর দাওয়াই কেরলের

ভুঁড়ি কমুক। তার দৌলতে ফুলেফেঁপে উঠুক রাজকোষও। এই অঙ্ক কষেই বাজেটে ব্র্যান্ডেড রেস্তোরাঁর বার্গার, পাস্তা, পিৎজার মতো মেদ বাড়ানোর খাবারে (জাঙ্ক ফুড) ১৪.৫% কর চাপাল কেরল।

সংবাদ সংস্থা
তিরুঅনন্তপুরম শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৬ ০৩:৫২
Share: Save:

ভুঁড়ি কমুক। তার দৌলতে ফুলেফেঁপে উঠুক রাজকোষও। এই অঙ্ক কষেই বাজেটে ব্র্যান্ডেড রেস্তোরাঁর বার্গার, পাস্তা, পিৎজার মতো মেদ বাড়ানোর খাবারে (জাঙ্ক ফুড) ১৪.৫% কর চাপাল কেরল। অর্থমন্ত্রী টি এম টমাস আইজ্যাকের দাবি, শুধু এই ‘ফ্যাট ট্যাক্স’ থেকেই ১০ কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব ঘরে আসবে তাঁদের। যা টেনে তুলতে সাহায্য করবে সঙ্কটের গলা জলে ডুবে থাকা অর্থনীতিকে।

অতিরিক্ত মুটিয়ে যাওয়া বা ‘ওবেসিটি’ নিয়ে চিন্তার ভাঁজ এখন সারা দুনিয়ার কপালে। যন্ত্রনির্ভর জীবনে কায়িক শ্রম কমছে। বদলেছে খাদ্যাভাসও। একটা বড় অংশ গিয়েছে বার্গার, পিৎজা, পাস্তার মতো জাঙ্কফুডের দখলে। এতে হৃদরোগ ও কিডনির অসুখ বাড়ছে। ভারী শরীরের ওজন বয়ে অল্প বয়সেই জবাব দিচ্ছে হাঁটু। তাই সে দিক থেকে কেরলের এই পদক্ষেপ যুক্তিযুক্ত বলে সওয়াল করছেন অনেকে। তুলনা টানছেন বিহারের। যেখানে সিঙারা, খাস্তা কচুরির মতো ওজন বাড়ানোর খাবারে কর বসিয়েছে নীতিশ কুমারের সরকার।

করের দাওয়াইয়ে কোমরের মাপ কমানোর চিন্তা আগেই করেছে স্বাস্থ্য সচেতন উন্নত দুনিয়া। ২০১১ সালে বেশি চর্বিযুক্ত মাখন, দুধ, চিজ, পিৎজা, মাংস ইত্যাদিতে ‘ফ্যাট ট্যাক্স’ চাপায় ডেনমার্ক। কিন্তু ২০১২ সালে সেই কর ফিরিয়েও নেয় তারা। যুক্তি ছিল, কর চাপিয়েও দেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাস বদলায়নি। বরং রুজি-রোজগারে টান পড়ছে ওই সমস্ত শিল্পে যুক্ত কর্মীদের।

অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন, ‘ফ্যাট ট্যাক্স’ আসলে স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখার অজুহাতে রাজকোষ ভরার ছুতো। তাঁদের যুক্তি, কর বসিয়েই যদি বার্গারের বিক্রি কমতো, তবে প্রতি বছর কর বাড়ার পরে এ দেশে সিগারেটের বিক্রি তো এত দিনে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। তা ছাড়া, এক জন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক কী খাবে-না-খাবে, তা নিয়ে সরকার কেন নাক গলাবে, রয়েছে সেই প্রশ্নও।

উল্টো যুক্তিও আছে। অর্থনীতি- বিদদের একাংশ মনে করেন, মানুষের স্বভাবই হল, নিজের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসেব কষে সিদ্ধান্ত নেওয়া। ওই হিসেব অনেক ক্ষেত্রে ঠিক করে দেয় তাঁদের চাহিদাও। যে কারণে ভর্তুকির ভাতায় সস্তায় জিনিস পেলে তা ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ে। আবার অনেক পণ্যের চাহিদায় লাগাম টানে করের চাবুক। এই পক্ষের যুক্তি, যে সব চর্বিযুক্ত খাবার শরীরের পক্ষে এত ক্ষতিকর, কর বসানোয় যদি তা পাতে কম পড়ে, তবে মন্দ কী? স্বাস্থ্যরক্ষার অস্ত্র হিসেবে করকে এ ভাবে ব্যবহার করতেই শরীরের প্রতি পাউন্ড বাড়তি ওজনে ফি বসানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন মার্কিন শরীরতত্ত্ববিদ এ জে কার্লসন। কোমরের মাপ বাড়লে সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা স্থানীয় প্রশাসনকে জরিমানার নিদান দিয়েছে জাপান।

‘ঈশ্বরের আপন দেশে’ কর দাওয়াইয়ে কোমর সরু হবে কি না, তা অবশ্য বলবে সময়ই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kerela Burger Pizza
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE