Advertisement
E-Paper

কুবের উবাচ

আমাকে ছুঁয়ে গেল পিয়ালির বাবা রথীনবাবুর চিঠি। তিনি মাথা তুলে বাঁচার শিক্ষা দিয়েছেন মেয়েকে। আর এ বার শেখাচ্ছেন সঞ্চয়ের হাত ধরে পায়ের তলার মাটি পোক্ত করার মন্ত্র। মেয়ের কৃতিত্বে গর্বিত বাবার আর্থিক সুরক্ষা সংক্রান্ত উদ্বেগও অবশ্য স্পষ্ট চিঠিতে। রথীনবাবু চান পিয়ালি বিয়ে করে থিতু হোক। আবার কেরিয়ার তৈরির পথে তাঁকে একা ছেড়েও দিয়েছেন।

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৬ ০৩:০৩
শৈবাল বিশ্বাস

শৈবাল বিশ্বাস

• পিয়ালি (২৬) • বাবা (৬২) • মা (৫৪)

পাঁচতারা হোটেলের ম্যানেজার | | আর্থিক দায়বদ্ধতা তেমন নেই | | ফ্ল্যাট ও গাড়ির টাকা জমাতে চান | | লক্ষ্য, অবসর জীবনের জন্য বড়সড় তহবিল | | বছরে এক বার বেড়াতে যেতে আগ্রহী

নিট আয় (মাসে)।।৪৮,০০০।।খরচ (মাসে)।।ব্যক্তিগত ১৪,০০০।।সঞ্চয় (মাসে) পিপিএফ ১০,০০০ | | | জীবনবিমা ২,১৬৬ | | | এসআইপি ২,০০০ | | | রেকারিং ডিপোজিট ১০,০০০ | | | সেভিংস অ্যাকাউন্ট ৫,০০০

সম্পদ।।পিপিএফ ৫০,০০০ | | রেকারিং ডিপোজিট ৮০,০০০ | | ফিক্সড ডিপোজিট ৩০,০০,০০০ | | এসআইপি ১০,০০০ | | পিএফ ৮০,০০০ | | ফ্ল্যাট ২৫,০০,০০০

আমাকে ছুঁয়ে গেল পিয়ালির বাবা রথীনবাবুর চিঠি। তিনি মাথা তুলে বাঁচার শিক্ষা দিয়েছেন মেয়েকে। আর এ বার শেখাচ্ছেন সঞ্চয়ের হাত ধরে পায়ের তলার মাটি পোক্ত করার মন্ত্র। মেয়ের কৃতিত্বে গর্বিত বাবার আর্থিক সুরক্ষা সংক্রান্ত উদ্বেগও অবশ্য স্পষ্ট চিঠিতে। রথীনবাবু চান পিয়ালি বিয়ে করে থিতু হোক। আবার কেরিয়ার তৈরির পথে তাঁকে একা ছেড়েও দিয়েছেন। তবে মেয়ে যাতে রোজগারের টাকা অপচয় না- করে ঠিকঠাক জমায়, সে দিকে কড়া নজর রথীনবাবুর। হাতে ধরে ছকে দিয়েছেন আর্থিক পরিকল্পনা। আজ আমার কাজ তাতে একটু সঙ্গত করা। যাতে পিয়ালির ভবিষ্যৎ সচ্ছল আর সুরক্ষিত হয়। কিছুটা নিশ্চিন্ত হতে পারেন রথীনবাবুও।

হাতে বাড়তি

দু’হাজার টাকা পিএফ কাটার পরে পিয়ালি মাসে হাতে পান ৪৮ হাজার। এর মধ্যে ১৪ হাজার টাকা যায় ব্যক্তিগত খরচে। লগ্নি-পরিকল্পনার জন্য থাকে ৩৪ হাজার। আমার মতে—

পরিবারের কেউ যখন আর্থিক ভাবে পিয়ালির উপর নির্ভরশীল নয়, তখন জীবনবিমা প্রকল্পে অযথা টাকা আটকে রাখা কেন? তার বদলে বরং পিয়ালি নিজের জন্য শারীরিক অক্ষমতাজনিত বিমা প্রকল্প কিনে রাখতে পারেন। তাতে দুর্ঘটনা বা অসুস্থতার কারণে ভবিষ্যতে কাজ করতে না-পারলেও, খানিকটা আর্থিক নিরাপত্তা মিলবে।

রেকারিং ডিপোজিটে অনেকটা টাকা রাখা হচ্ছে। কিন্তু এতে সুদ কম। তার উপর ওই সঞ্চয় করযোগ্য। ফলে খুব বেশি টাকা সেখানে রাখার মানে হয় না। বরং স্বল্প মেয়াদের ঋণপত্র ভিত্তিক মিউচুয়াল ফান্ডে (ডেট ফান্ড) এসআইপি করা যেতে পারে। এতে রেকারিং ডিপোজিটের মতোই মাসে মাসে জমানোর প্রক্রিয়া চালু থাকবে। আবার রিটার্নও তুলনায় বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা।

বয়স কম। রোজগার ভাল। তেমন দায়-দায়িত্ব নেই। পিয়ালির পক্ষে শেয়ারে লগ্নি করার আদর্শ সময় এটাই। এই লগ্নিতে ঝুঁকি আছে। কিন্তু তেমনই শেয়ার কিনে লম্বা মেয়াদের জন্য ধরে রাখলে এক দিকে যেমন মার খাওয়ার সম্ভাবনা কমে, তেমনই তার রিটার্ন অন্য প্রায় সব ধরনের লগ্নি মাধ্যমকেই হারানোর ক্ষমতা রাখে। শুধু শুরুতে একটু দেখেশুনে শেয়ার বাছতে হবে। আর এখন পিয়ালির খানিকটা ঝুঁকি নিতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। সুতরাং অবশ্যই ভাল কিছু সংস্থার শেয়ার কিনে রাখা উচিত।

সরাসরি শেয়ার কিনতে মন খুঁতখুঁত করলে এসআইপি করা যেতে পারে। শেয়ার ভিত্তিক ফান্ডে এসআইপি অল্প-অল্প করে বড় সঞ্চয় তৈরির মোক্ষম অস্ত্র। সব চেয়ে ভাল হয় ডাইভার্সিফায়েড ফান্ডের ইউনিট কিনলে। যে ফান্ড বিভিন্ন ধরনের শিল্পের একাধিক সংস্থার শেয়ার কেনে। এতে একটি শিল্প কোনও কারণে মার খেলে অন্য শিল্পের আওতায় থাকা সংস্থার লাভ দিয়ে লোকসান সাধারণত পুষিয়ে যায়। তা ছাড়া, এসআইপি-র প্রতিটি কিস্তি এক বছর পার করলেই করমুক্ত।

পিপিএফে যেমন টাকা রাখা হচ্ছে, তেমনই চালিয়ে যাওয়া ভাল। এই প্রকল্পে সুদ কিছুটা কমেছে। কিন্তু এখনও তা আকর্ষণীয়। তার উপর আয়কর আইনের ৮০সি ধারায় কর বাঁচানো যায়। ফলে লম্বা মেয়াদে পিপিএফ এখনও সঞ্চয়ের ভাল জায়গা।

আয় যত বেশি হয়, কর বাঁচানোর তাগিদও তত বাড়ে। পিয়ালির কিছু কর সাশ্রয়কারী লগ্নি রয়েছে। যেমন, পিপিএফ, পিএফ ইত্যাদি। কিছু টাকা ইকুইটি লিঙ্কড সেভিংস স্কিমেও (ইএলএসএস) বরাদ্দ করতে পারেন। ৮০সি ধারার আওতায় কর বাঁচানো যায় এই লগ্নিতে। তিন বছরের জন্য লগ্নির টাকা অবশ্য তোলা যাবে না।

এই সমস্ত লগ্নি ও সঞ্চয়ের পরে হাতে থাকা টাকা সেভিংস অ্যাকাউন্টে রাখা যেতে পারে। যাতে আচমকা দরকার পড়লে, পাওয়া যায়।

লক্ষ্যভেদ

পিয়ালির অনেক স্বপ্ন। ফ্ল্যাট, গাড়ি, বাড়ি, বেড়াতে যাওয়া, অবসরের সঞ্চয়— কত কিছু। এত ইচ্ছে পূরণ করতে ছকে বেঁধে লগ্নি করা জরুরি:—

অবসর। জিনিসপত্রের দাম যে ভাবে বাড়ছে, তাতে অবসর জীবনের জন্য মোটা তহবিল তৈরি করতে না পারলে জীবনযাপনে স্বাচ্ছন্দ্য বজায় রাখা অসম্ভব। কিন্তু সেই তহবিল কতটা হওয়া উচিত?

পিয়ালি যদি ৫৫ বছরে অবসর নেন, তবে তাঁর হাতে আর ২৯ বছর রয়েছে। সচ্ছল, নিশ্চিন্ত জীবনযাপনের জন্য এখনকার মূল্য অনুযায়ী তাঁর মাসে ৫০ হাজার টাকা বেতন যথেষ্ট মনে হয়। ফলে ২৯ বছর পরে ৬% মূল্যবৃদ্ধি ধরে মাসে প্রয়োজন হবে ২ লক্ষ ৭১ হাজার টাকা। বছরে লাগবে ৩২ লক্ষ ৫২ হাজার। সে ক্ষেত্রে অবসরের তহবিল ৫ কোটি ৪২ লক্ষ টাকার মতো হলে তবেই ৬% সুদ ধরে (গড় সুদের হার কমেছে এবং ভবিষ্যতে আরও কমতে পারে) ওই টাকা জোগাড় করা সম্ভব হবে।

তহবিলের পরিমাণ শুনতে বেশি মনে হলেও, পিয়ালি মোটামুটি ভাবে এখনকার লগ্নি পরিকল্পনা অনুযায়ী চললেই ওই অঙ্কের কাছাকাছি পৌঁছে যাবেন (সঙ্গের সারণি দেখুন)।

তা ছাড়া, আগামী দিনে পিয়ালির কেরিয়ার আরও উঁচুতে উড়ান নেবে। বেতন বাড়বে। ফলে তখন অবসর জীবনের জন্য তহবিল জমানোও আরও কিছুটা সোজা হয়ে যাবে।

বাড়ি, গাড়ি কেনা। এই মুহূর্তে কেরিয়ারে মন দিয়ে বাড়ি কেনার পরিকল্পনা কিছু দিন পিছিয়ে দিলেই ভাল। ঋণ নিয়ে গাড়ি কেনার ক্ষেত্রেও আমি বলব একটু ধৈর্য ধরতে। কারণ, কিছু দিন পরে বেতন বাড়লে, লগ্নি বা সঞ্চয়ের খাতে হাত না-দিয়েই ঋণের কিস্তি বইতে পারবেন।

বেড়াতে যাওয়া। সেভিংস অ্যাকাউন্টে যে-টাকাটা পড়ে আছে, তা দিয়ে দিব্যি কোথাও ঘুরে আসা যাবে। এ ছাড়া, বোনাস, ইনসেন্টিভ— এ সবও আছে। বাড়তি অন্যান্য প্রয়োজনেও আপাতত সেভিংস অ্যাকাউন্টই ভরসা হতে পারে।

স্বাস্থ্যে আরও নজর

পিয়ালির ভাল স্বাস্থ্যবিমা আছে। তাঁর সংস্থার করে দেওয়া বিমাটির বাইরে আলাদা ভাবে রয়েছে বাবা, মা, মেয়ের একসঙ্গে। প্রিমিয়াম রথীনবাবুই দেন। তবে আমার মতে পিয়ালি নিজের জন্য আলাদা একটি ৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্যবিমা করুন। বাবা-মায়ের সঙ্গে করা পলিসি থেকে বেরিয়ে আসুন। এতে তিন জনেরই চিকিৎসা খরচের জোগান নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকা যাবে।

শেষে বলব, এক মেয়ে বলে ভবিষ্যতে বাবা-মায়ের সব কিছুই পাবেন পিয়ালি। তবে আমার বিশ্বাস, একটু হিসেব কষে এগোলে, সে সব ছা়ড়াও পায়ের নীচের জমি মজবুত করে নিতে পিয়ালির অসুবিধা হবে না।

অনুরোধ মেনে নাম পরিবর্তিত মতামত ব্যক্তিগত

(ছবি প্রতীকী)

bank invetment insurence income
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy