Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
সেজ তকমার শেষ চেষ্টা

ভোট-বাক্সে নজর ইনফোসিসেরও

আর ৪৮ ঘণ্টা। শিল্পমহল থেকে শেয়ার বাজার— এই মুহূর্তে প্রায় সকলেরই নজর ১৫ তারিখে ইনফোসিসের বার্ষিক ফলাফল ঘোষণার দিকে। আবার সেই ইনফোসিসের উৎসুক চোখ এ রাজ্যের বিধানসভা ভোটে।

গার্গী গুহঠাকুরতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৩৬
Share: Save:

আর ৪৮ ঘণ্টা। শিল্পমহল থেকে শেয়ার বাজার— এই মুহূর্তে প্রায় সকলেরই নজর ১৫ তারিখে ইনফোসিসের বার্ষিক ফলাফল ঘোষণার দিকে। আবার সেই ইনফোসিসের উৎসুক চোখ এ রাজ্যের বিধানসভা ভোটে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, রাজ্যে নতুন সরকার গঠনের পরে এখানে নিজেদের ক্যাম্পাস গড়ার কার্যত শেষ চেষ্টা করবে তারা। আর্জি জানাবে সেজ (বিশেষ আর্থিক অঞ্চল) তকমার জন্য। পেলে ভাল, নইলে জমি ফিরিয়ে টাকা ফেরত চাইবে প্রথম সারির তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাটি।

এ বিষয়ে সংস্থার মুখপাত্রকে ই- মেল করা হলে, উত্তর পাওয়া যায়নি। আর্থিক ফলাফল প্রকাশের ঠিক আগে এ রকম সংবেদনশীল বিষয়ে কোনও সংস্থার পক্ষে প্রতিক্রিয়া দেওয়াও শক্ত। তবে সেজ-তকমা ছাড়া যে এ রাজ্যে প্রকল্প গড়া যাবে না, সেই অবস্থান থেকে সরে না-আসার কথা বারবারই স্পষ্ট করে দিয়েছে তারা।

ইনফোসিস এ রাজ্যে জমি কেনার পরে কেটে গিয়েছে ছ’-ছ’টি আর্থিক বছর। এই দীর্ঘ সময়ে রাজারহাটে প্রস্তাবিত ক্যাম্পাসের জন্য নেওয়া ৫০ একর সংস্থার ঘরে সম্পদ হিসেবে আছে শুধুমাত্র খাতায়-কলমে। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প সূত্রের খবর, অকারণে ওই বোঝা আর টেনে বেড়াতে রাজি নয় সংস্থাটি।

বিশেষত যেখানে বছর দেড়েক আগে হাল ধরা কর্ণধার বিশাল সিক্কার নেতৃত্বে নিজেদের কার্যত ঢেলে সাজছে ইনফোসিস। পাল্টাচ্ছে ব্যবসার ধরন। হাত পাকাচ্ছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর পরিষেবায়। আরও আগ্রাসী হচ্ছে বিপণন ও দর কষাকষির কৌশলে। ২০২০ সালের মধ্যে ব্যবসা ও মুনাফার অঙ্ককে নতুন স্তরে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য বাঁধার পাশাপাশি চেষ্টা করছে পুরনো সোনার দিন ফিরিয়ে আনতে। যখন তাদের আর্থিক ফলাফল ঘোষণাই শেয়ার বাজারের সুর বেঁধে দিত। ইঙ্গিত পাওয়া যেত, কোনও ত্রৈমাসিকে অন্য তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির ফল কেমন হবে। সংশ্লিষ্ট শিল্পের অনেকেই বলছেন, এই ইনফোসিসের পক্ষে কোথাও সেজ-তকমার অপেক্ষায় বছরের পর বছর বসে থাকা বেশ কষ্টকল্পনা। তার থেকে বরং জমি ফিরিয়ে দামের ৭৫ কোটি ফেরত চাইবে তারা।

বছরে ৪৭,৩০০ কোটি টাকার ব্যবসা করা ইনফোসিসের এ রাজ্যে বিনিয়োগে বাধা অবশ্য প্রথম থেকেই। ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে কলকাতায় এসে ক্যাম্পাস গড়তে লগ্নির কথা জানিয়েছিলেন অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাক্তন কর্ণধার এন আর নারায়ণমূর্তি। প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল ৫০০ কোটি লগ্নি ও সেই সূত্রে ৫,০০০ জনের কর্মসংস্থানের। ২০০৬ সালে প্রকল্পের জন্য তদানীন্তন বাম সরকারের কাছে ১০০ একর জমি চায় সংস্থা। কিন্তু সে ক্ষেত্রে সমস্যা হয় দাম নিয়ে। অবশেষে ২০১০ সালের শেষ নাগাদ ৭৫ কোটির বিনিময়ে ৫০ একর জমি দেওয়া হয় ইনফোসিসকে।

কিন্তু তারপরে ফের নতুন জট। গোড়া থেকেই নিজেদের সেজ-বিরোধী অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছিল তৃণমূল সরকার। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বারবার বলেছেন সেজ-তকমা না-দেওয়ার কথা। তারই জেরে ২০১১ সালের এপ্রিলে ইনফোসিস জানায় কলকাতার প্রকল্প আপাতত স্থগিত রাখার কথা। ২০১২ সালে তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বেঙ্গালুরু গিয়ে সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করলেও বরফ গলেনি।

এর পরেও প্রকল্প বাঁচানোর চেষ্টা করে ইনফোসিস। ২০১৫-র গোড়ায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন সংস্থার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রামদাস কামাথ। জানান, ক্যাম্পাস তৈরিতে আগ্রহের কথা। আর্জি জানান সেজ-তকমার জন্য। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, তার পরেই মুখ্যমন্ত্রী কার্যত আলোচনা থামিয়ে দেন। কামাথের মুখের উপরেই তিনি বলেন, এ বিষয়ে আর কোনও কথা হবে না। এর পরে সংস্থাও আর কথা বাড়ায়নি।

সেই হিসেবে এ রাজ্যে প্রকল্প গড়তে তাদেরও আশার শেষ সলতে হয়তো নতুন সরকারই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

SEZ Assembly Election 2016 Infosys
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE