অভিযোগ উঠেছিল, রাষ্ট্রায়ত্ত জীবন বিমা নিগমে (এলআইসি) জমা সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত টাকা মোদী সরকার আদানিদের মতো ‘বন্ধু’ শিল্প গোষ্ঠীকে সাহায্য করতে কাজে লাগিয়েছে। যা দেশবাসীর স্বার্থ বিরোধী। বৃহস্পতিবার লোকসভায় এলআইসি-র এই লগ্নি সংক্রান্ত প্রশ্নের লিখিত উত্তরে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানালেন, শিল্পপতি গৌতম আদানির সংস্থাগুলিতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি ৪৮,২৮৪.৬২ কোটি টাকা ঢেলেছে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত আদানির নগদের ঘাটতি দূর করতে সরকার চুপিসারে এলআইসি মারফত তাঁর জন্য ৩৯০ কোটি ডলার (প্রায় ৩৬,০০০ কোটি টাকা) পুঁজির ব্যবস্থা করেছে বলে মাস দুয়েক আগে খবর বেরোয়। তার পরে সংসদে এ দিন এই তথ্য প্রকাশ তাৎপর্যপূর্ণ।
লোকসভায় তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র এবং কংগ্রেসের মহম্মদ জাভেদের তোলা প্রশ্নের উত্তরে নির্মলা লিখিত ভাবে জানান, গত ৩০ সেপ্টেম্বরের হিসাব অনুসারে এলআইসি আদানিদের একাধিক সংস্থায় মোট ৪৮২৮৪.৬২ কোটি টাকা ঢেলেছে। এর মধ্যে ৩৮,৬৫৮.৮৫ কোটি দিয়ে কেনা হয়েছে তাদের শেয়ার। বাকি ৯৬২৫.৭৭ কোটি টাকা দিয়ে ঋণপত্র। যার ৫০০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকনমিক জ়োনের ঋণপত্র কিনতে।
ওই দুই সাংসদের আরও প্রশ্ন ছিল, বেসরকারি সংস্থায় এলআইসির মতো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার লগ্নির ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় আর্থিক পরিষেবা বিভাগের কোনও আপত্তি ছিল কি না। অথবা শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সেবি এবং রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছিল কি না। কিংবা এই লগ্নির ক্ষেত্রে সরকারের কোনও পরামর্শ বা নির্দেশিকা ছিল কি? নির্মলা দাবি করেন, ওই সিদ্ধান্তে সরকারের কোনও ভূমিকা নেই। তাঁরা পরামর্শ বা নির্দেশ, কিছুই দেননি। এটা একান্ত ভাবে ছিল জীবন বিমা নিগমের সিদ্ধান্ত। লগ্নির ঝুঁকি খতিয়ে দেখার পাশাপাশি তারা সেবি, বিমা নিয়ন্ত্রক আইআরডিএ এবং রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের লগ্নি সংক্রান্ত সমস্ত নিয়ম মেনেই এগিয়েছিল।
অভিযোগ
অক্টোবরের গোড়ায় আমেরিকার সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়: আদানি গোষ্ঠী যখন নগদের সমস্যায় জর্জরিত, তখন তাকে সেই সঙ্কট থেকে বার করতে আনতেই এলআইসি-র পুঁজি কাজে লাগানো হয়েছে।
মোদী সরকার রীতিমতো পরিকল্পনামাফিক সেই টাকা তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করে গৌতম আদানির সংস্থার হাতে।
কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক, কেন্দ্রীয় আর্থিক পরিষেবা বিভাগ, এলআইসি এবং নীতি আয়োগের যৌথ উদ্যোগের ফসল ওই কৌশল।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)