ন্যূনতম বিকল্প কর (ম্যাট) নিয়ে বিদেশি লগ্নি সংস্থাগুলির মনে তীব্র আশঙ্কা, রফতানি তলানিতে নেমে আসা, ডলারে ভারতীয় টাকার বড় পতন, বৃষ্টিপাত কম হওয়া নিয়ে আবহাওয়া দফতরের আগাম আশঙ্কা এবং তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির খারাপ ফল প্রকাশ— একসঙ্গে এতগুলি প্রতিকূল খবর পেলে যা হতে পারে তা-ই হয়েছে ভারতীয় শেয়ার বাজারে।
বাজেটের পর থেকেই দুর্বল হয়ে থাকা বাজার দ্রুত ‘বেয়ার’ বলয়ে চলে আসে একসঙ্গে এতগুলি খারাপ খবরের প্রভাবে। মার্চের গোড়ায় ক্ষণিকের জন্য যে-সেনসেক্স প্রথম বার ৩০,০০০ স্পর্শ করেছিল, তা গত শুক্রবার নামে ২৭,৪৩৮ অঙ্কে। অর্থাৎ সর্বোচ্চ জায়গা থেকে তা পড়েছে কমবেশি ২৫০০ অঙ্ক। শতাংশের হিসেবে ৮.৫%। অল্প সময়ে এতটা পতনে মুষড়ে পড়েছেন লগ্নিকারীরা। বেশির ভাগ ইকুইটি নির্ভর ফান্ডের ন্যাভও পড়েছে। অন্য দিকে, কমেছে ব্যাঙ্কের মেয়াদি জমায় সুদও। অর্থাৎ মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে গোটা বিনিয়োগের বাজারেই। মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরে যে-আশার সঞ্চার হয়েছিল তা এখন অনেকটাই স্তিমিত।
রাজ্যসভায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিল আটকে যাওয়ায় মন্থর হয়ে পড়েছে আর্থিক সংস্কার। দিন দশেক হল বিভিন্ন সংস্থার আর্থিক ফলাফল প্রকাশ হতে শুরু করেছে। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা টিসিএস, এইচসিএল ইনফোটেক এবং উইপ্রোর পরে গত সপ্তাহে বেশ হতাশা জাগানো ফল প্রকাশ করেছে ইনফোসিস। চতুর্থ ত্রৈমাসিকে তাদের নিট মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় মাত্র ৩.৫% বেড়ে পৌঁছেছে ৩০৯৭ কোটি টাকায়। তবে তৃতীয় ত্রৈমাসিকের তুলনায় কিন্তু লাভ কমেছে ১৫৩ কোটি। এতে ইনফোসিসের শেয়ার দর ৬% কমে ১৯৯৬ টাকায় নামে। শেয়ারহোল্ডারদের খুশি রাখার চেষ্টাতেও ত্রুটি রাখেনি সংস্থা। খুবই ছোট ব্যবধানে কোম্পানি আবার ১:১ অনুপাতে বোনাস শেয়ার ইস্যুর কথা ঘোষণা করেছে। একই অনুপাতে এর আগে বোনাস শেয়ার ইস্যু করা হয়েছিল গত অক্টোবরে, যদিও বিশেষজ্ঞরা এত অল্প ব্যবধানে বোনাস ইস্যুর পক্ষে যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন না। শেয়ারহোল্ডারদের জন্য আর একটি ভাল খবর, শেয়ার পিছু তাঁরা এ বার চূড়ান্ত ডিভিডেন্ড পাবেন ২৯.৫০ টাকা। সংস্থার আশা ২০২০-র মধ্যে তাদের আয় ২০০০ কোটি ডলারে পৌঁছবে।
এখনও পর্যন্ত অবশ্য বেশ ভাল ফলাফল প্রকাশ করেছে বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলি। বছরের শেষ তিন মাসে এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের মোট আয় ১২,৭৯০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে পৌঁছেছে ১৫,৫৭০ কোটিতে। নিট লাভ ২৩২৬ কোটি থেকে বেড়ে ২৮০৭ কোটি টাকা। এ দিকে, বছরের শেষ তিন মাসে নিট লাভ ২৮% বাড়াতে পেরেছে ইয়েস ব্যাঙ্ক। লগ্নির জায়গা হিসেবে নজর রাখা যেতে পারে এই দু’টি ব্যাঙ্কের উপরেই।
আর কিছু দিনের মধ্যেই বাজারে আসছে করমুক্ত বন্ড। এক বছর বিরতির পরে আবার উঁচু হারের করদাতারা সুযোগ পাবেন আকর্ষণীয় এই বন্ডে লগ্নি করার। ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি (এনএইচএআই) ও রেলওয়ে ফিনান্স কর্পোরেশনকে এই বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে মোট ৩০,০০০ কোটি টাকা সংগ্রহের অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্র। এর মধ্যে ২৪,০০০ কোটি টাকা তুলতে চায় একা এনএইচএআই। তবে এ বার সুদ অবশ্যই ততটা আকর্ষণীয় হবে না। কমবেশি ৯% পর্যন্ত সুদে ২০১৩-’১৪ সালে ইস্যু করা হয়েছিল করমুক্ত বন্ড। এ বার সুদ বড়জোর ৭.৫% হবে বলে মনে করা হচ্ছে। সুদ এতটা কম হলে অনেকেই হয়তো একটু প্রিমিয়ামে বাজার থেকে উঁচু সুদযুক্ত পুরনো করমুক্ত বন্ড কিনতে চাইবেন। ফলে বাড়বে সেই সব বন্ডের বাজার দর। ২০১১-’১২ থেকে শুরু হয় করমুক্ত বন্ড ইস্যু। ছেদ পড়ে ২০১৪-’১৫ সালে। সঙ্গের সারণিতে এক নজরে দেখা যাবে আগের ইস্যুগুলির আকার।
এ বার তাকানো যাক গত সপ্তাহের অন্য গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলির দিকে।
• প্রভিডেন্ড ফান্ডে বার্ষিক নতুন জমার ৫% তহবিল ইকুইটিতে লগ্নির প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। আনুমানিক ৫ হাজার কোটি টাকা লগ্নি করা হবে এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড বা ইটিএফে। এর জেরে বাজারও শক্তি পাবে।
• বাজারে ১৫,০০০ কোটি টাকা মূল্যের শেয়ার ছাড়তে উদ্যোগী ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক। জুন মাসে বা তার পরে আসতে পারে এই শেয়ার।
• ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে সোনা আমদানি বেড়েছে আড়াই গুণ। ১৯৮ কোটি থেকে বেড়ে তা হয়েছে ৪৯৮ কোটি ডলার। জানুয়ারিতে আমদানি ছিল ১৫৫ কোটি ডলার। সোনা আমদানি এতটা বেড়ে যাওয়া বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ার বড় কারণ। তেলের দর এতটা কমা সত্ত্বেও মার্চ শেষে ঘাটতি ছিল ১১৭৯ কোটি ডলার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy