Advertisement
E-Paper

বাজার দিন গুনছে বর্ষার সুফল দেখার অপেক্ষায়

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর হিসেবে শেষ বারের মতো মাঠে নেমে একই ছন্দে ব্যাট করলেন রঘুরাম রাজন। সুদ কমানোর জন্য বিভিন্ন মহল থেকে চাপ ছিল তাঁর উপর। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম আগামী দিনে আরও মাথা তুলতে পারে, এই আশঙ্কায় এ বারের ঋণনীতিতেও সুদের হারকে একই জায়গায় রেখে দিলেন তিনি।

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৩৭

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর হিসেবে শেষ বারের মতো মাঠে নেমে একই ছন্দে ব্যাট করলেন রঘুরাম রাজন। সুদ কমানোর জন্য বিভিন্ন মহল থেকে চাপ ছিল তাঁর উপর। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম আগামী দিনে আরও মাথা তুলতে পারে, এই আশঙ্কায় এ বারের ঋণনীতিতেও সুদের হারকে একই জায়গায় রেখে দিলেন তিনি। রাজনের আশঙ্কা যে অমূলক ছিল না, ইতিমধ্যে সেই প্রমাণও মিলেছে। শুক্রবার প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যান দেখিয়েছে, জুলাইয়ে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার বেড়ে হয়েছে ৬.০৭%, যা অনেকের কাছেই বেশ চিন্তার কারণ।

একটু পিছনে ফিরলে দেখা যাবে রাজন বরাবরই সচেষ্ট ছিলেন সুদ ও টাকার জোগানকে একটি গণ্ডির মধ্যে রেখে মূল্যবৃদ্ধির হারকে বেঁধে রাখতে। গত ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের শীর্ষ পদের দায়িত্ব নেন রাজন। পরিসংখ্যানে চোখ রাখলে দেখা যাবে, তাঁর জমানায় আর্থিক দিক থেকে দেশ কঠিন পরিস্থিতি সামলে বেশ অনেকটাই এগিয়ে যেতে পেরেছে। যে কারণে তাঁর বিদায় ভাবাচ্ছে লগ্নিকারীদের। রাজনের উত্তরসূরি হিসেবে শীর্ষ ব্যাঙ্কের গভর্নর পদে কে আসেন, তা জানার অপেক্ষায় অধীর আগ্রহে দিন গুনছেন বহু মানুষ।

সুদ যে এই দফায় কমবে না, তা বাজারের এক রকম জানাই ছিল। তবুও বিদায়ের আগে ৯ অগস্ট রাজনের শেষ ঋণনীতি ঘোষিত হওয়ার পরে লগ্নিকারীদের অনেকেই শেয়ার বেচে লাভ ঘরে তুলেছেন। ফলে বাজার কিছুটা নামে। তবে সপ্তাহের শেষে তা ফের ঘুরে দাঁড়ায়। সেনসেক্স দৌড় শেষ করে ২৮ হাজারের উপরেই। পরিস্থিতি কিছুটা সদর্থক থাকায় সূচক কিন্তু এই জায়গা থেকে খুব একটা নামতে চাইছে না। বরং ভবিষ্যতে আশা অনুযায়ী ঘটনাগুলি ঘটলে আরও এগোনোর জন্য পা বাড়িয়ে রেখেছে।

পরিস্থিতি ঠিক কেমন তা একবার দেখে নেওয়া যাক—

জুনে শিল্প বৃদ্ধি বেড়ে হয়েছে ২.১%। অর্থনীতির পক্ষে যা ভাল খবর। রফতানি কমলেও (৬.৮৪%), আমদানি আরও বেশি নেমে আসায় (১৯.০৩%) বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে। যা অর্থনীতির পক্ষে ভাল।

গাড়ি শিল্পেরও ভাল কেটেছে জুলাই মাসটি। এই সময় দেশে যাত্রী গাড়ির বিক্রি বেড়েছে ১৬.৭৮%। সামগ্রিক ভাবে গাড়ি শিল্পের বিক্রিও বেড়েছে ১৩.২২%। এই বৃদ্ধির সুফল বর্তাবে বিভিন্ন সহায়ক শিল্পের উপর।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কিং শিল্পকে বাদ দিলে এই অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে বিভিন্ন সংস্থার আর্থিক ফল আশার তুলনায় ভালই হয়েছে। সান ফার্মার লাভ ৫৫৬ কোটি টাকা থেকে বেড়ে পৌঁছেছে ২,০৩৪ কোটিতে। হিন্দালকোর নিট মুনাফা ৬১ কোটি থেকে উঠে এসেছে ২৯৪ কোটিতে। তবে স্টেট ব্যাঙ্কের মুনাফা কমেছে ৩২%। এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের লোকসান পৌঁছেছে ৫৬৫ কোটি টাকায়।

তবে বাজারকে আগামী দিনে আরও বেশি তাতিয়ে তোলার ক্ষেত্রে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে বর্ষা। এই মুহূর্তে দেশজুড়ে চলছে ভরপুর বৃষ্টি। হিসেব বলছে, ১ জুন থেকে এখনও পর্যন্ত বর্ষা স্বাভাবিকের তুলনায় ৩% বেশি হয়েছে। দেশের ৯২% অঞ্চল স্বাভাবিক বা তার থেকে বেশি বৃষ্টি পেয়েছে। এই খবর গোটা অর্থনীতির পক্ষে অত্যন্ত ভাল। এতে কৃষি গতি পাবে, খাদ্যপণ্যের দাম কমবে, গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রাণ ফিরবে এবং বাড়বে বহু পণ্যের চাহিদা। চাঙ্গা হবে শিল্প এবং বাড়বে কর্মসংস্থান। যে কারণে শেয়ার বাজার এখন বর্ষার সুফল দেখার অপেক্ষায় মুখিয়ে রয়েছে।

সব থেকে বড় বাধা উতরে গিয়েছে জিএসটি-ও। সংসদের দুই কক্ষেই পাশ হয়ে গিয়েছে তার সংবিধান সংশোধনী বিল। পরোক্ষ কর ব্যবস্থায় আমূল বদল আসা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। এটি বাস্তবায়িত হলে তা বেশির ভাগ বাণিজ্যের পক্ষে সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

নতুন অর্থবর্ষের প্রথম চার মাসে ভাল রকম বেড়েছে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর সংগ্রহ। এটি শিল্পের উন্নতির ইঙ্গিত দেয়।

দুশ্চিন্তা শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির পাহাড়-প্রমাণ অনুৎপাদক সম্পদ নিয়ে। পরিস্থিতি সামলাতে ব্যাঙ্ক-গুলিতে নতুন মূলধন ঢালবে কেন্দ্র। ভাল বর্ষার কল্যাণে কৃষি ও শিল্পের হাল ফিরলে অনাদায়ী ঋণের বোঝা কিছুটা হাল্কা হতে পারে বলে আশা।

তবে সব মিলিয়ে দেখলে অর্থনীতির জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকেই ভাল বার্তা আসছে। তাই শেয়ার সূচক বাঁধন ছেঁড়ার অপেক্ষায়। বর্ষার সুফল ফলতে শুরু হলেই তা হবে এই বাঁধন ছেঁড়ার ‘ট্রিগার’। লগ্নিকারীদের অনেকেরই ধারণা ‘বুল রান’ শুরু এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। তবে বাজার সম্পর্কে কখনওই নিশ্চিত কোনও পূর্বাভাস করা যায় না। এখানে সব সময়েই রাজত্ব করে অনিশ্চয়তা।

Raghuram Rajan Market Monsoonal shower
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy