গত বছর রাজ্য উত্তাল ছিল আর জি করে চিকিৎসক পড়ুয়ার খুন-ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদ-বিক্ষোভে। পুজোর বাজারেও তার ধাক্কা লাগে। আর এ বার ব্যবসা জমার মুখেই অঙ্ক কিছুটা বদলে দিয়েছে জিএসটির হার পরিবর্তনের ঘোষণা। অন্তত কলকাতার বাজারের একাংশ সেই ছবিই তুলে ধরছে। নিউ মার্কেট থেকে গড়িয়াহাট বা হাতিবাগান বাজারের বহু ব্যবসায়ীরই বক্তব্য, ২২ সেপ্টেম্বর থেকে কর কমার জন্য বসে পুজো বাজারের সবচেয়ে বড় ক্রেতা, সাধারণ রোজগেরে মধ্যবিত্তেরা। কারণ তখন বহু জিনিসের দাম কমবে। তবে একাংশের দাবি, পুজোর আগের পাঁচ-ছ’দিনে বিক্রি বিপুল বাড়বে ঠিকই। কিন্তু অভিজ্ঞতা বলছে, অনেক দিন ধরে কেনাকাটা চললে ব্যবসা হয়।
নিউ মার্কেটে একটি বহুব্র্যান্ডের পোশাক বিপণির আধিকারিক বুধবার জানান, অগস্ট থেকে বিক্রি ভালই চলছিল। সেপ্টেম্বরের ৪-৫ তারিখের পরে যেন খানিকটা থমকে গিয়েছে। কিছু বিক্রি হচ্ছে, কিন্তু ভিড় নেই। বিশ্বকর্মা পুজোর দিনেও এই চত্বর ছিল ফাঁকা ফাঁকা। পুজোর মাসেও একই ছবি গড়িয়াহাটে। ফুটপাতের দোকানগুলিতে কিছু দরাদরি চলেছে। কিন্তু অনেক বড় বিপণিতেই ক্রেতা হাতে গোনা। ব্যবসায়ীদের একাংশের মতে, সাধারণ সময়ের সঙ্গে পুজোর আগের কেনাকাটার ফারাক থাকে। সেই উন্মাদনাটা জিএসটি না কমা পর্যন্ত দেখা যাবে না। হাতিবাগান মার্কেটের একটি পোশাক বিপণির কর্ণধার রবীন দাসের কথায়, ‘‘বিক্রি গত ১৫ দিনে পড়ে গিয়েছে। যে রকম আশা করেছিলাম, হচ্ছে না। ফলে গত বারের পরে এ বারও আশঙ্কায় ভুগছি, কী হবে।’’ যদিও তা মানতে নারাজ প্রিয় গোপাল বিষয়ীর ডিরেক্টর সৌম্যজিৎ লাহা। তাঁর মন্তব্য, ‘‘শাড়িতে জিএসটি ৫%। কিছু বদল হয়নি। ফলে বিক্রিতে কোনও প্রভাব দেখতে পাচ্ছি না।’’
এক বাঙালি জুতো তৈরির সংস্থার আধিকারিকের দাবি, শনি-রবিবার বিক্রি কিছুটা বাড়লেও, অন্যান্য দিনের কেনাকাটা দেখে মনে হবে না এটা পুজোর মরসুম। তিনি জানান, অগস্টের শেষ দু’টি সপ্তাহে যেখানে বিক্রি বেড়েছিল ৩০%-৩২%, সেখানে গত শনি-রবিবারের বৃদ্ধি সাকুল্যে ১০%। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক দিন ধরে ক্রেতারা দোকানে ঘুরে কেনাকাটা করলে আমাদের ব্যবসা অনেক বেশি হয়। ছোট-মাঝারি দোকানগুলোও বঞ্চিত হয় না। পুজোর সপ্তাহে ব্যবসা হয়তো উপচে পড়বে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সকলের আশা পূরণ হবে তো?’’ সোদপুরের বাসিন্দা আকাশ দে ইতিমধ্যেই বেশ কিছুটা বাজার সেরে অপেক্ষা করছেন। বলেন, ‘‘২২ তারিখ দেখি কতটা দাম কমে। তারপর আবার বেরোব।’’ তবে শ্রীলেদার্সের ডিরেক্টর রচিতা দে বলছেন, ‘‘পুজোর বিক্রি ১০০ দিন আগে শুরু হয়। তাতে গতি বহাল। তেমন বড় বদল দেখছি না। ধর্মতলার মূল বিপণিতে এ মাসের প্রথম ১৫ দিনের বিক্রি ছিল গত বারের থেকে ৮.৫৬% বেশি।’’ তাঁর দাবি, নতুন দামে জুতো বেচতে তৈরি তাঁরা।
থমকে গাড়ি এবং টিভি-ফ্রিজ়ের মতো ভোগ্যপণ্যের বিক্রিও। টাটা মোটরসের বিক্রেতা (ডিলার) টিসি মোটরসের কর্ণধার রোহিত চৌধুরীর কথায়, ‘‘অনেক বুকিং হচ্ছে। কিন্তু ক্রেতারা ২২ সেপ্টেম্বরের পরে ডেলিভারি নেবেন। ফলে আমরা ওই দিনের পরে বিল করব।’’ কলকাতায় মারুতির এক বিক্রেতা সংস্থার দাবি, ক্রেতার হাতে গাড়ি তুলে দেওয়া গত এক মাসে অনেক কমেছে। সবাই দাম কমার সুবিধা নিতে বসে। একই দাবি শহরের বড় বৈদ্যুতিন বিক্রেতাদের। খোসলা, রায়পুর কিংবা গ্রেট ইস্টার্নের কর্মীরা জানাচ্ছেন, ‘‘সকলে আসছেন, দরদাম করছেন, কিন্তু চলে যাচ্ছেন। মাসের শেষে ভিড় বাড়বে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)