E-Paper

শুল্ক বৃদ্ধিতে গয়না-বস্ত্র রফতানিতে কোপ, আশঙ্কায় পরিযায়ী শ্রমিকরা

ছোট সংস্থাগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার প্রভাব পড়বে কাজেও। একাংশ মনে করাচ্ছেন, গুজরাত এবং মহারাষ্ট্রের বস্ত্র ও গয়না তালুকে পশ্চিমবঙ্গের অনেক পরিযায়ী শ্রমিক কাজ করেন। তাঁদের রুজি-রুটির অনিশ্চয়তা বাড়ল।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২৫ ০৭:১৪
বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বস্ত্র, গয়নার মতো ক্ষেত্রে।

বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বস্ত্র, গয়নার মতো ক্ষেত্রে। —প্রতীকী চিত্র।

ভারতীয় পণ্যে আমেরিকা আরও ২৫% শুল্ক বাড়ানোর ফলে এ দেশের রফতানি বাণিজ্যে বড় ধাক্কা লাগবে বলে মনে করছে শিল্প মহল। তারা জানাচ্ছে, ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় তার বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বিশেষত বস্ত্র, গয়না, দামি পাথর, চামড়া, চিংড়ির মতো ক্ষেত্রে। এ দেশের রফতানি পণ্যের উল্লেখযোগ্য অংশ আসে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প (এমএসএমই) থেকে। যেখানে কাজ করেন বহু মানুষ। ফলে ছোট সংস্থাগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার প্রভাব পড়বে কাজেও। একাংশ মনে করাচ্ছেন, গুজরাত এবং মহারাষ্ট্রের বস্ত্র ও গয়না তালুকে পশ্চিমবঙ্গের অনেক পরিযায়ী শ্রমিক কাজ করেন। তাঁদের রুজি-রুটির অনিশ্চয়তা বাড়ল।

সুরাত ডায়মন্ড বোর্স আয়তনের নিরিখে বিশ্বের বৃহত্তম অফিস। ভারতের উন্নয়নের অন্যতম প্রতীক হিসেবে যাকে তুলে ধরে কেন্দ্র। সূত্রের খবর, মঙ্গলবার থেকেই সেখানকার পরিস্থিতি থমথমে। কিছু সংস্থা ইতিমধ্যেই উৎপাদন স্থগিত রেখেছে। বিশ্বের ৮০% কাঁচা হিরে পালিশ করা হয় এখানে। বেশ কিছু সংস্থা তাদের কর্মকাণ্ড বৎসোয়ানার মতো দেশে সরানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। যেখানে আমেরিকার শুল্কের হার ১৫%। গয়না শিল্পের হিসাব, হাওড়া, হুগলি এবং দুই মেদিনীপুর থেকে এক লক্ষের বেশি কারিগর মুম্বইয়ে সোনা এবং হিরের গয়না তৈরির কাজ করেন। বাড়িতে পাঠান টাকা। তাঁরা প্রবল চাপে। কেউ কেউ কাজ করতে করতে নিজেদের কারখানাও খুলে বসেছেন। পশ্চিমবঙ্গ থেকে যাওয়া বাঙালি কারখানা মালিক ও কারিগরদের সংগঠনের কর্তা সনৎ নাবাজ্জা বলেন, ‘‘আমরা যে সংস্থার হয়ে গয়না তৈরি করি, তারা রফতানি করে। আমেরিকার শুল্কে সমস্যা হতে পারে বলে আমাদের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে কারিগরদের কাজ দেওয়া কঠিন হবে।’’

হাওড়ার অঙ্কুরহাটি জেম অ্যান্ড জুয়েলারি পার্কের চেয়ারম্যান অশোক বেঙ্গানি জানাচ্ছেন, ওই তালুকে তৈরি গয়না মূলত পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলিতে যায়। ফলে সেখানে প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে না। সমস্যায় পড়বে মহারাষ্ট্র এবং গুজরাতের সংস্থাগুলি। বেঙ্গানির দাবি, ওই সব সংস্থার থেকে আমেরিকার প্রায় ৭০,০০০ ছোট-বড় বিপণি হিরে ও গয়না কেনে। ট্রাম্প-শুল্কের কোপ পড়তে পারে তাদের বরাতে। অল ইন্ডিয়া জেম অ্যান্ড জুয়েলারি ডোমেস্টিক কাউন্সিলের ডিরেক্টর সমর দে জানান, আমেরিকায় গয়না রফতানিকারীদের অনেকেই ভারত থেকে দুবাইয়ে দফতর সরাতে পারেন। সে ক্ষেত্রে কারিগরেরা কাজ হারাবেন। শিল্পের একটি অংশের অবশ্য বক্তব্য, আমেরিকা হিরের বৃহত্তম বাজার। ফলে সাময়িক ধাক্কা সামলে দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পারবে হিরে রফতানি শিল্প।

রফতানি শিল্পের সংগঠন ফিয়ো-র সভাপতি এস সি রালহান বলেন, ‘‘তিরুপুর, নয়ডা এবং সুরাতের মতো বৃহৎ বস্ত্র তালুকের বস্ত্র ও পোশাক উৎপাদনকারীরা ইতিমধ্যেই উৎপাদন বন্ধ করেছে।’’ তাঁর বার্তা, দেশে বেকারত্ব বাড়তে পারে। অবিলম্বে সরকারি সাহায্য দরকার। বণিকসভা ভারত চেম্বারের বস্ত্র কমিটির সদস্য বিজয় কেরিওয়াল বস্ত্র শিল্পে শুল্কের প্রভাব নিয়ে চিন্তিত। অ্যাপারেল এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিলের সেক্রেটারি জেনারেল মিথিলেশ্বর ঠাকুরের মতে, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনামের মতো দেশের কাছে বাজার হারাতে পারে ভারতের বস্ত্রকে। ফলে মান বাড়াতে হবে পণ্যের। বস্ত্র রফতানির সঙ্গে যুক্ত এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘২৫% পর্যন্ত শুল্কের ধাক্কা সামাল দিতে আমরা তৈরি ছিলাম। কিন্তু ৫০% মাত্রাতিরিক্ত। এই শুল্ক আমাদের আমেরিকার বাজার থেকে ছিটকে দেবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

migrant labour Sharee Jewellery

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy