সব সংশয় ঝেড়ে ফেলে ভাগ্যিস মাসখানেক আগে সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলেন উত্তরপাড়ার মাছ ব্যবসায়ী রমেশ সাউ।
নোট বাতিলের জেরে যখন দোকান-বাজারে কেনাকাটা নিয়ে সংশয়ের পারদ চড়ছে, তরজা চলছে ধার-বাকি নিয়ে, তখন নিশ্চিন্তে ব্যবসা করছেন রমেশবাবু। কারণ, আধুনিক জীবনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ‘পেটিএম’-এ অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন তিনি। বাজারে যখন নগদের টানাটানি, তখন ওই ‘মোবাইল-মানিব্যাগ’ ব্যবহার করেই নগদহীন লেনদেন চালিয়ে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১২ হাজার টাকার ব্যবসা করেছেন। আর পাঁচটা দিনের চেয়ে যা ২০% বেশি। যা দেখে এখন হাত কামড়াচ্ছেন তাঁর পড়শি ব্যবসায়ীরা।
আর দিনের শেষে পেটিএম-এর দাবি, তাদের মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে লেনদেন বেড়েছে প্রায় ৪০০%!
বস্তুত, নগদ লেনদেন নিয়ে আমজমতার শঙ্কাই ব্যবসার দরজা খুলেছে পেটিএম, অক্সিজেন, আইটিজেড ক্যাশ, ওলা-মানির মতো মোবাইল ওয়ালেট পরিষেবায় যুক্ত সংস্থার সামনে। বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপ তারা আগেই এনেছিল। যেমন শহরে বেশ কিছু রুটের অটোচালক পেটিএমে ভাড়া নিতেন। তবে তা ছিল খুচরোর সমস্যার জন্য।
কিন্তু বুধবার থেকে কার্যত ঝড়ের দাপট এই সব সংস্থার দরজায়। পেটিএম সূত্রের খবর, মোদীর ঘোষণার পরেই বিপুল লেনদেনের সম্ভাবনা আঁচ করে তাঁরা বিজ্ঞাপনী কৌশল স্থির করতে ঝাঁপান। কেন্দ্র বলেছিল, দু’দিন এটিএম বন্ধ থাকবে। পেটিএমের প্রতিষ্ঠাতা-কর্ণধার বিজয় শেখর শর্মার মাথায় আসে এ দিন বিভিন্ন সংবাদপত্রে তাঁদের দেওয়া বিজ্ঞাপনী ‘ক্যাচলাইন’-যেখানে এটিএম, নয়, পেটিএম ব্যবহারের জন্য সকলের কাছে আর্জি জানানো হচ্ছে। তাঁদের মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে যেমন লেনদেন বেড়েছে, তেমনই পেটিএম-অ্যাকাউন্টে টাকা ভরার অঙ্ক বেড়েছে ১০০০%। আর পেটিএম-অ্যাপ ডাউনলোডের হার বেড়েছে ২০০%।
অর্থাৎ, অনেকেই কিন্তু এখন পা রাখছেন মোবাইল-মানিব্যাগের দরজায়। এমনকী স্মার্টফোন না-থাকলেও পুরনো ফিচার ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে এ ধরনের লেনদেনে সুবিধা দেয় কিছু সংস্থা।
আইটিজেড ক্যাশ জানাচ্ছে, মঙ্গলবার থেকে তাদের ব্যবসা বেড়েছে ৩০-৪০%। এমডি নবীন সূর্য পরিষেবাটির নাম দিয়েছেন, ‘ফিজিটাল’— ‘ফিজিক্যাল ক্যাশ’ বা নগদ ঢুকে যাচ্ছে ডিজিটাল দুনিয়ায়। ভাল ব্যবসা করেছে ওলা মানি-ও। এই ওয়ালেটে ‘রিচার্জ’ করা বা টাকা ভরানোর বহর বেড়েছে ১৫ গুণ। ছোট শহরে তা কোথাও কোথাও ৩০ গুণও।
সব মিলিয়ে হাতের মুঠো-ফোন কার্যত বেশি ভরসা দিচ্ছে মানিব্যাগের চেয়ে। তথ্য সহায়তা: গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়