Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কেন্দ্রীয় নীতি নিয়েই প্রশ্ন মুডি’জের, অর্থনীতিতে আরও লম্বা ঝিমুনির বার্তা

ইতিমধ্যেই অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ করেছে কেন্দ্র। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এ দিন তার সারবত্তা ও কার্যকারিতা নিয়েই প্রশ্ন তুলল মুডি’জের সমীক্ষা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:০৩
Share: Save:

নোট বাতিলের তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে অর্থনীতি নিয়ে মোদী সরকারের অন্দরে কাঁপুনি ধরাল মুডি’জ। উদ্বেগ বাড়িয়ে ভারতের অর্থনীতি সম্পর্কে ‘নেতিবাচক’ দৃষ্টিভঙ্গি নিল আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন সংস্থাটি। এতদিন যা ছিল ‘স্থিতিশীল’ বা ‘স্টেবল’। শুধু তাই নয়, পূর্বাভাসে মুডি’জের আশঙ্কা, এ দেশে বৃদ্ধির হার অতীতের থেকেও কমে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে অর্থনীতির ঝিমুনি। শুধু মুডি’জই নয়, অর্থনীতি নিয়ে সতর্ক করেছে ব্রোকারেজ সংস্থা নোমুরাও। তাদের পূর্বাভাস, চলতি অর্থবর্ষে বৃদ্ধির হার দাঁড়াতে পারে ৪.৯%।

ইতিমধ্যেই অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ করেছে কেন্দ্র। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এ দিন তার সারবত্তা ও কার্যকারিতা নিয়েই প্রশ্ন তুলল মুডি’জের সমীক্ষা। তবে এই মূল্যায়নের পরেও কেন্দ্রের দাবি, সব ঠিকই রয়েছে। অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তা। যদিও খোদ সংস্থাটির যুক্তি, তাদের এই মূল্যায়ন অর্থনীতি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা কাটাতে কেন্দ্র ও তার নীতির কার্যকারিতা কমে যাওয়ারও আংশিক প্রতিফলন। যার জেরে বাড়তে পারে ধার। যা এখনই যথেষ্ট বেশি। ব্যবসায় লগ্নি বাড়াতে, বৃদ্ধিকে টেনে তুলতে এবং আয়করের উৎস বাড়াতে সংস্কারের সম্ভাবনাও কমেছে। মুডি’জের সতর্কবার্তা, বৃদ্ধি মাথা না তুললে রাজকোষ ঘাটতি ও ঋণ কমাতে গিয়ে চাপে পড়বে কেন্দ্র। বিশেষত বাজারে চাহিদা বাড়াতে যেখানে সম্প্রতি কর্পোরেট কর ছেঁটেছে তারা। বিপুল রাজস্ব ক্ষতি মেনেই।

বিশেষজ্ঞদের দাবি, বৃদ্ধিতে গতি এনে অর্থনীতিকে অক্সিজেন জোগাতে আরও সুদ কমাক রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। কিন্তু অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, সেটা হলে মূল্যবৃদ্ধি মাথা তুলে ‘স্ট্যাগফ্লেশন’-এর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। যেখানে বৃদ্ধির হারের চেয়ে মূল্যবৃদ্ধি বেশি হবে।

আরও পড়ুন: প্রযুক্তি নিয়ে হইচই, মৌলিক বিজ্ঞান আড়ালেই

এমনিতেই ব্যাঙ্ক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান মারফত বাজারে ঋণের জোগানে টান পড়েছে। অক্টোবরে ঋণ বৃদ্ধির হার ২ বছরে সর্বনিম্ন। মুডি’জের আশঙ্কা, তা আরও কমবে। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের কটাক্ষ, ‘‘মুডি’জ মোদীর নতুন ভারতে লগ্নি সম্পর্কে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিল, তা-ও নোটবন্দির তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে। কী করে পারল? এত সাহস!’’

সমীক্ষা বলছে
• ভারতীয় অর্থনীতির হাল মোটেই ভাল নয়।
• ‘স্থিতিশীল’ থেকে কমে অর্থনীতির দৃষ্টিভঙ্গি এখন ‘নেতিবাচক’।
• বৃদ্ধির হার অতীতের থেকে কমে যাওয়ার ঝুঁকি আরও বেড়েছে।
• অর্থনীতির ঝিমুনি আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে।
• মূল্যায়নে অর্থনীতির দুর্বলতা কাটাতে সরকার ও তাঁর নীতির কার্যকারিতা কমে যাওয়ার আংশিক প্রতিফলন স্পষ্ট।
• ফলে ঋণের বোঝা আরও বাড়তে পারে।
• কমেছে সংস্কারের সম্ভাবনা।
• রাজকোষ ঘাটতি ছুঁতে পারে ৩.৭%। কেন্দ্রের লক্ষ্য, তা ৩.৩ শতাংশে বাঁধার।
• বাড়ার বদলে আরও কমতে পারে ঋণের জোগান।

অর্থ মন্ত্রক অবশ্য পরে বিবৃতি দিয়ে দাবি করেছে, অর্থনীতির ভিত মজবুত। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ফরিদাবাদে শুল্ক অফিসারদের এক অনুষ্ঠানে যান। সেখানে অনুষ্ঠানের মধ্যে অফিসারদের বাচ্চারা কান্নাকাটি শুরু করলেও
তিনি রাগ করেননি। যেন দেখাতে চেয়েছেন, অর্থনীতি নিয়ে স্নায়ুর চাপে ভুগছেন না। তাঁর মন্ত্রকেরও দাবি, ভারত এখনও বৃদ্ধির নিরিখে প্রথম সারির দেশগুলির অন্যতম। অথচ বাস্তব হল, এপ্রিল-জুনে বৃদ্ধি নেমেছে ৫ শতাংশে। যা ছ’বছরে সবচেয়ে কম। কেনাকাটা এতটাই কমেছে যে, জুলাই-সেপ্টেম্বরে তা ৫ শতাংশেরও নীচে নামতে পারে বলে আশঙ্কা।

অর্থ মন্ত্রক সূত্রের যুক্তি, মুডি’জ অর্থনীতি সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি (আউটলুক) বদলেছে মাত্র। লগ্নি নিয়ে মূল্যায়ন ছাঁটেনি। কিন্তু অর্থনীতিবিদদের দাবি, নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সে দিকেই প্রথম পদক্ষেপ। পরে সত্যিই মূল্যায়ন কমলে বিপুল বিদেশি লগ্নি ভারত ছাড়তে পারে। মন্ত্রকের পাল্টা, বিশ্ব জুড়েই অর্থনীতি ঝিমিয়ে। বরং মোদী সরকার সক্রিয় হয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে দেশি-বিদেশি লগ্নি আসবে। ভারত সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব আছে আইএমএফ-সহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

India Economy Moody's Corporation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE