মিউচুয়াল ফান্ডের প্রসারের জন্য এ বার ভারতীয় ডাকঘরের সঙ্গে হাত মেলাল ফান্ড সংস্থাগুলির সংগঠন অ্যাম্ফি। স্থির হয়েছে, ডাককর্মীদের (পিয়োন বা পোস্টম্যান) প্রশিক্ষণ দিয়ে মিউচুয়াল ফান্ড ডিস্ট্রিবিউটার করা হবে। যাতে সব প্রান্তে ফান্ড প্রকল্প ছড়ানো যায়।
শনিবার কলকাতায় ইন্ডিয়ান চেম্বার আয়োজিত মিউচুয়াল ফান্ড নিয়ে সভায় অ্যাম্ফির সিইও বেঙ্কটেশ নাগেশ্বর চালাসানি জানান, ফান্ড প্রকল্প বিক্রির কাজে পিয়োনদের শামিল করতে চান তাঁরা। সে জন্য আর্থিক লেনদেনে শামিল হয়ে কী ভাবে সম্পদ তৈরি করা যায়, সেই প্রশিক্ষণ জরুরি। তিনি বলেন, “গ্রামে কাজের সূত্রে ডাককর্মীদের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হয়। অনেককেই তাঁরা ব্যক্তিগত ভাবে চেনেন। তাই সেই সব গ্রাহকের কাছে পিয়োনদের বিশ্বাসযোগ্যতাও রয়েছে। ফলে ফান্ড বিপণনে তাঁরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারবেন।’’ চালাসানির দাবি, ‘‘দেশে প্রায় ২.৫ লক্ষ পিয়োন আছেন। প্রথম পর্যায়ে ১ লক্ষ কর্মীকে ফান্ডের ডিস্ট্রিবিউটার হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। থাকবে ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকল্প বিপণনের প্রশিক্ষণও।’’ মাস দুয়েকে প্রকল্প চালুই অ্যাম্ফির লক্ষ্য।
এই প্রসঙ্গে চেলাসানি জানান, ভারতে বর্তমানে ফান্ডে লগ্নিকারী প্রায় ৫ কোটি। দেশের জনসংখ্যার তুলনায় যা যৎসামান্য। এই ক্ষেত্রে লগ্নিও জিডিপি-র ২১%। বিশ্বের গড় ৬৫%, উন্নত দেশে ১০০%। আগামী ২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে কেন্দ্র। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ফান্ডে লগ্নিও দ্রুত বাড়ানো দরকার। সেই লক্ষ্যে ডাককর্মী মারফত প্রকল্প প্রসার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। তার উপরে এখন ফান্ডের ৬৫ শতাংশই ক্ষুদ্র লগ্নিকারী। তা বাড়ছে। সেবি-র নির্দেশে তাঁদের সচেতনতা বাড়াতেও উদ্যোগী হয়েছে অ্যাম্ফি।
দেশের সব মানুষকে আর্থিক পরিষেবায় শামিল করতে মিউচুয়াল ফান্ডের ভূমিকার কথা মনে করিয়েছেন ইন্ডিয়ান চেম্বারের ব্যাঙ্কিং ও আর্থিক পরিষেবা কমিটির চেয়ারম্যান অতনু সেনও। বলেন, ‘‘ফান্ডে মোট তহবিল ৭২ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। পাঁচ বছরে তা আড়াই গুণ বাড়তে পারে।’’
সভায় বাজার নিয়ন্ত্রক সেবি-র এগ্জ়িকিউটিভ ডিরেক্টর মনোজ কুমার বলেন, “বাজার নিয়ন্ত্রণের আইন সরলের কাজ শুরু হয়েছে। যে নিয়মগুলির প্রয়োজন নেই, সেগুলি বাদ যাবে। অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনা শেষ হলে আলোচনাপত্র প্রকাশ করা হবে। যাতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ মত দিতে পারে। তার পরই নতুন ব্যবস্থা কার্যকর হবে।’’ কুমার জানান, ফান্ড সংস্থাগুলিকেও প্রকল্পের নিয়ম, শর্ত ইত্যাদি সরল করতে বলেছে সেবি। যাতে তা সহজে বোঝা যায়। নিয়ন্ত্রক চায়, সংস্থাগুলির স্বাধীনতা বজায় রেখেই লগ্নিকারীদের আস্থা বাড়াতে। এতে ভুল বুঝে ফান্ড কেনা বা ভুল বুঝিয়ে তা বিক্রির অভিযোগ কমবে।
ভাবনা
ডাককর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে মিউচুয়াল ফান্ড ডিস্ট্রিবিউটার করা হবে।
লক্ষ্য, গ্রাম-সহ দেশের সব প্রান্তে ফান্ডের প্রসার।
প্রথম ধাপে এক লক্ষ পিয়োন-পোস্টম্যানকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
থাকবে ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকল্প বিপণনের পাঠও।
মাস দুয়েকে পরিকল্পনা কার্যকরের ভাবনা।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)