Advertisement
E-Paper

অফিসারদের শাস্তির হুমকি কর্তৃপক্ষের

এই প্রথম ধর্মঘট নিয়ে কড়া মনোভাব দেখিয়ে ইউনিয়নের আওতায় থাকা অফিসারদের ব্যক্তিগত ভাবে সতর্ক করলেন বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। সোমবারই তাঁরা ওই হুঁশিয়ারি জারি করে এ ধরনের ধর্মঘটকে ‘অযৌক্তিক ও বেআইনি’ তকমা দেন।

প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৭ ০২:০২
সুনসান: ব্যাঙ্ক ধর্মঘটের জেরে ঝাঁপ বন্ধ এটিএমেরও। মঙ্গলবার শহরে। এ দিন এই ছবি অবশ্য দেখা গিয়েছে দেশ জুড়েই। —নিজস্ব চিত্র।

সুনসান: ব্যাঙ্ক ধর্মঘটের জেরে ঝাঁপ বন্ধ এটিএমেরও। মঙ্গলবার শহরে। এ দিন এই ছবি অবশ্য দেখা গিয়েছে দেশ জুড়েই। —নিজস্ব চিত্র।

সারা দেশে ব্যাঙ্ক ধর্মঘটের জেরে মঙ্গলবার দিনভর ভুগতে হল সাধারণ মানুষকে। ইউনাইটেড ফোরাম অব ব্যাঙ্ক ইউনিয়ন্স (ইউএফবিইউ)-এর ছাতার তলায় থাকা ন’টি কর্মী ও অফিসার সংগঠনের ডাকা এই ধর্মঘটে বেশির ভাগ এটিএমেরও ঝাঁপ বন্ধ ছিল বলে অভিযোগ গ্রাহকদের। তবে এই প্রথম ধর্মঘট নিয়ে কড়া মনোভাব দেখিয়ে ইউনিয়নের আওতায় থাকা অফিসারদের ব্যক্তিগত ভাবে সতর্ক করলেন বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। সোমবারই তাঁরা ওই হুঁশিয়ারি জারি করে এ ধরনের ধর্মঘটকে ‘অযৌক্তিক ও বেআইনি’ তকমা দেন।

অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক অফিসার্স কনফেডারেশন (এআইবিওসি)-এর সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় দাশ জানান, প্রতিটি অফিসারকে আলাদা ভাবে ই-মেল পাঠিয়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ বলেছেন, ধর্মঘটে অংশ নিলে চাকরির শর্ত ভাঙার দায়ে তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। চাকরি থেকে বরখাস্ত বা চাকরিতে ছেদও পড়তে পারে। এলাহাবাদ ব্যাঙ্ক অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক তপন সরকারও তাঁদের ব্যাঙ্কে এ ধরনের বার্তা পাঠানোর কথা জানিয়েছেন। তিনি অবশ্য বলেন, ‘‘আমরা ওই চিঠি গ্রহণ করিনি।’’ সঞ্জয়বাবুও বলেন, কর্তৃপক্ষের আদেশ উপেক্ষা করেই তাঁরা ধর্মঘটের পথে হেঁটেছেন।’’

অফিসারদের সাবধান করে দিয়ে এলাহাবাদ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ বলেছেন, ধর্মঘটে পরিষেবা ব্যাহত হলে সেটা হবে ব্যাঙ্কিং আইন ভাঙার সামিল। আগেও অফিসারদের ধর্মঘটে যোগ না-দেওয়ার আর্জি সাধারণ ভাবে নোটিস দিয়ে জানানো হত। তবে ব্যক্তিগত ভাবে এই প্রথম তাঁদের সাবধান করা হল বলে জানিয়েছেন ইউনিয়নে থাকা ব্যাঙ্ক অফিসাররা।

পশ্চিমবঙ্গ-সহ কিছু রাজ্যও বন্‌ধ বেআইনি ঘোষণা করেছে। ফলে কোনও রাজনৈতিক দল বন্‌ধ ডাকলে সরকারি অফিসারদের একই রকম শাস্তির মুখে পড়তে হয়। এ বার বিভিন্ন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষও একই পথে হাঁটছেন বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

একটি ব্যাঙ্কের সঙ্গে অন্য ব্যাঙ্ককে মিশিয়ে দেওয়া, বাইরের লোক দিয়ে ব্যাঙ্কের কাজ করানো বা আউটসোর্সিং, গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া ব্যাঙ্ক চার্জ বৃদ্ধি, ব্যাঙ্কিং বোর্ড ব্যুরো গঠন ইত্যাদির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে ইউএফবিইউ। ধর্মঘটের আওতায় ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত, গ্রামীণ ব্যাঙ্ক, বেসরকারি এবং বিদেশি ব্যাঙ্কও। বেঙ্গল প্রভিন্সিয়াল রিটায়ার্ড ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনও ধর্মঘটকে সমর্থন জানিয়েছিল। তবে সমবায় ব্যাঙ্ক এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এর আওতায় ছিল না।

পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির প্রায় ৮৫০০টি ও বেসরকারি ব্যাঙ্কের ১০০০টি শাখা রয়েছে। এ ছাড়া ১০,৫০০টি এটিএমও রয়েছে। ইউএফবিইউ-র আওতায় অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন (এআইবিইএ)-এর প্রেসিডেন্ট রাজেন নাগরের দাবি, গোটা দেশের মতোই এ রাজ্যেও সর্বাত্মক ধর্মঘট হয়েছে। প্রায় ৯০ শতাংশ এটিএম-ও বন্ধ ছিল। তবে হাসপাতালের এটিএম চালু ছিল। অবশ্য সন্ধ্যার পরে কিছু এটিএম চালু হয়। যদিও আমজনতার অধিকাংশেরই অভিযোগ, পরিস্থিতি আদৌ স্বাভাবিক হয়নি।

সারা দেশে দৈনিক প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার চেক লেনদেন হয়। রাজ্যে তা ১৪০০-১৫০০ কোটি টাকার মতো। সেই পরিষেবা পুরোটাই এ দিন বন্ধ ছিল। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের সমস্যা ও ব্যবসার এই ক্ষতির কথা মানলেও রাজেনবাবুর দাবি, এর দায় কেন্দ্রীর নীতিরই। তাঁর অভিযোগ, ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের চেষ্টা চলছে, গ্রাহক পরিষেবার খরচ লাফিয়ে বাড়ছে, ন্যূনতম জমার অঙ্কও বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বড় সংস্থাকে দেওয়া বিপুল ঋণ অনাদায়ী থাকছে। রাজেনবাবুর দাবি, ‘‘এ সবের প্রতিবাদ জানাতেই ধর্মঘট ডেকেছিলাম।’’

Bank Strike Nationalized Banks ATM AIBOC অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক অফিসার্স কনফেডারেশন
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy