ইজ়রায়েল-ইরান মহাসংঘাতে অশনি সঙ্কেত দেখছে নয়াদিল্লি। দু’টি দেশের সঙ্গেই ভারতের বাণিজ্যিক এবং কৌশলগত ঘনিষ্ঠতা থাকার ফলে ভারসাম্য রেখে চলা কঠিন হবে বলে কূটনৈতিক মহল মনে করছে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপূ্ঞ্জের ভোটে ভারত নিজেকে সরিয়ে নেওয়ায় ঘরোয়া রাজনীতিতে মোদী সরকারকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। ইজ়রায়েল-ইরান সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হলে বাণিজ্য ক্ষেত্রে, বিশেষত তেল ও গ্যাস আমদানিতে সমস্যা বাড়বে বলে মোদী সরকার মনে করছে। আজ কেন্দ্রীয় বাণিজ্যসচিব সুনীল বার্থওয়াল জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহেই জাহাজ সংস্থা, জাহাজের কন্টেনার মালিকদের সংগঠন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক ও অংশীদারদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রকের এক শীর্ষকর্তা বলেন, ‘‘আমরা জানি না, এই সংঘাত কতদিন চলবে। কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী হলে তেল, গ্যাসের দাম বাড়বে। জাহাজ চলাচলে বাধা তৈরির ফলে বাড়বে পণ্য আমদানি, রফতানির খরচ। ফলে দেশের বাজারে মূল্যবৃদ্ধি, বাণিজ্য ঘাটতি, রাজকোষ ঘাটতির আশঙ্কা তৈরি হবে।’’
ভারতের সঙ্গে ইজ়রায়েল, ইরানের বাণিজ্যের পরিমাণ ৩৮০ কোটি ডলার। ইরান থেকে দেশে সরাসরি তেল আমদানি করা হয় না। কিন্তু তেল আমদানির তিন ভাগের একভাগ ও প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির অর্ধেক হরমুজ় প্রণালী হয়ে ভারতে আসে। ইরান এই সমুদ্র পথ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। জাহাজ ঘুরপথে আসলে তার খরচ বাড়বে। বাড়বে পণ্য পরিবহণের বিমার খরচও। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে এতদিন লোহিত সাগরের বদলে উত্তমাশা অন্তরীপ হয়ে জাহাজ চলাচল করার ফলে এমনিতেই পণ্য পরিবহণে বেশি খরচ লাগছিল। সেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করতেই পশ্চিম এশিয়ার দুই দেশ সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। হরমুজ় প্রণালী হয়ে গোটা বিশ্বের ২০%-২৫% তেল পরিবহণ হয়। পণ্য পরিবহণেও তা গুরুত্বপূর্ণ। এই পথেই কাতার থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস ভারতে আসে। লম্বা পথে জাহাজ আসলে অশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৯০ ডলারে পৌঁছে যেতে পারে। মে মাসে খুচরো মূল্যবৃদ্ধি তিন শতাংশের নীচে নেমেছে। জ্বালানির দাম বাড়লে মূল্যবৃদ্ধিও ফের বাড়বে।
বিদেশ মন্ত্রকের হিসাব অনুযায়ী, ইজ়রায়েলে এখন ১৮ থেকে ২০ হাজার ভারতীয় রয়েছেন। তাঁদের একটা বড় অংশ ছাত্রছাত্রী। প্রায় ৮৫ হাজার ভারতীয় বংশোদ্ভূত ইহুদিও রয়েছেন। আর ইরানে ১০,৭৬৫ জন ভারতীয়ের বসবাস। তাঁদের অনেকেই ব্যবসায়ী, শিক্ষাকর্মী বা অন্য পেশার। কাশ্মীরের নতুন প্রজন্মের একটা অংশ কর্ম এবং শিক্ষাসূত্রে ইরানে রয়েছেন।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)