Advertisement
E-Paper

‘হাড়ভাঙা খাটুনি’ সইতে না পেরে তরুণীর মৃত্যু! বহুজাতিক সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্তে কেন্দ্র

কেরলবাসী ২৬ বছরের চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট অ্যানা সেবাস্টিয়ানের মৃত্যুতে বহুজাতিক সংস্থা ‘আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ং’কে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে চিঠি দিয়েছেন তাঁর মা। যা ভাইরাল হতেই এ বার ঘটনার তদন্তে নেমেছে কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রক।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৪:৪৯
Anna Sebastian 26 year old employee of Ernst & Young in Pune died due to excessive workload says her mother

—প্রতীকী ছবি।

বহুজাতিক সংস্থার ‘কাজের চাপ’ সহ্য করতে না পারায় মর্মান্তিক পরিণতি। মহারাষ্ট্রের পুণেয় ২৬ বছরের তরুণীর মৃত্যু ঘিরে দানা বেঁধেছে বিতর্ক। এই ইস্যুতে সংস্থাটিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে হৃদয় ভারী করা চিঠি পাঠিয়েছেন মৃতার মা। সেখানে চার মাস ধরে মেয়ের উপর মানসিক অত্যাচার চলেছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। ওই চিঠি ভাইরাল হওয়ায় বহুজাতিক সংস্থাটির শাস্তির দাবিতে অনেকেই সুর চড়াতে শুরু করেছেন। বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছে সংস্থা। তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রকও।

কেরলের ওই মৃতা তরুণীর নাম অ্যানা সেবাস্টিয়ান। পেশায় তিনি ছিলেন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। চলতি বছরের মার্চে পুণের বিখ্যাত হিসেব নিরীক্ষণ সংস্থা ‘আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ং’-এ যোগ দেন অ্যানা। সম্প্রতি তাঁর মৃত্যুতে ওই সংস্থার কাজের পরিবেশ নিয়ে উঠেছে অনেক প্রশ্ন।

মেয়েকে হারানোর পর আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ংয়ের চেয়ারম্যান রাজীব মেমানিকে চিঠি পাঠান অ্যানার মা অনিতা অগাস্টাইন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘‘ওর শেষকৃত্যের সময় সংস্থার তরফে কেউ আসেননি। মেয়ের উপর ক্ষোভের কারণে বা তাঁর সংস্কৃতিকে অপছন্দ করার জন্য হয়তো এই সিদ্ধান্ত।’’

অ্যানার মা অনিতা আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ংয়ের চেয়ারম্যানকে এই চিঠি পাঠানোর পরই সংস্থার তরফে একটি বিবৃতি জারি করা হয়। সেখানে তরুণীর অকালমৃত্যুর জন্য শোকপ্রকাশ করা হয়েছে। পাশাপাশি, তাঁর পরিবারকে সমস্ত রকমের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে এই বহুজাতিক সংস্থা।

মৃতার পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ংয়েই প্রথম চাকরি পেয়েছিলেন অ্যানা। তাঁর মা চিঠিতে লিখেছেন, “কাজে যোগ দেওয়ার সময়ে ও যথেষ্ট উত্তেজিত ছিল। আমার মেয়ে ছিল যোদ্ধা। স্কুল-কলেজের মেধাতালিকায় সব সময় নাম থাকত ওর। ক্লান্তিহীন ভাবে আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ংয়ে কাজ করে গিয়েছে ও।’’

অনিতা অগাস্টাইনের অভিযোগ, চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর নতুন জায়গায় অ্যানাকে দীর্ঘ ক্ষণ কাজ করতে হচ্ছিল। ফলে শারীরিক, মানসিক ও আবেগগত দিক থেকে তিনি ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যাচ্ছিলেন। ফলে অ্যানা উদ্বেগজনিত সমস্যায় ভুগতে শুরু করেন। কাজের চাপে নিদ্রাহীন রাত কাটছিল তাঁর, চিঠিতে স্পষ্ট করেছেন মেয়েকে হারানো অনিতা অগাস্টাইন।

পরিবারের দাবি, কাজের চাপে একেবারেই ভেঙে পড়েননি অ্যানা। কারণ, তিনি বিশ্বাস করতেন কঠোর পরিশ্রমই সাফল্যের চাবিকাঠি। আর তাই দিনের পর দিন মুখ বুজে আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ংয়ে চাকরি করে যাচ্ছিলেন কেরলের এই তরুণী। পুণেয় সংস্থার চার্টার্ড অ্যাকাউন্টদের (সিএ) সমাবর্তনের সময় থেকেই তাঁর শরীর ভাঙতে শুরু করে।

‘‘জুলাই মাসের ৬ তারিখে স্বামীর সঙ্গে পুণেয় অ্যানার সঙ্গে সমাবর্তনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলাম। ওই সময়ে সপ্তাহখানেক রাত একটায় ফিরত আমার মেয়ে। ওর বুকে ব্যথা হচ্ছিল। আর তাই আমরা ওকে পুণের হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। অ্যানার ইসিজি রিপোর্টে কোনও গোলমাল ছিল না। হৃদ্‌রোগ চিকিৎসক আমাদের বলেন, ও ঠিক মতো ঘুমোচ্ছে না। অনেকটা দেরি করে খাবার খাচ্ছে। তিনি কিছু অ্যান্টাসিড দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, চিন্তার কিছু নেই। আমরা অ্যানাকে কোচিতে ফিরে যেতে বলেছিলাম। কিন্তু ডাক্তার দেখানোর পরই ও কাজে ফিরে যায়। বলেছিল, এখন অনেক কাজ বাকি। আর এই অবস্থায় কিছুতেই ছুটি পাবে না।’’ জানিয়েছেন অ্যানার মা অনিতা।

পরিবার সূত্রে খবর, এর পর ৭ জুলাই ফের রাত করে ঘরে ফেরেন কেরলের ওই তরুণী। সেটা ছিল সমাবর্তনের দ্বিতীয় দিন। গভীর রাতে বাড়ি ফেরার পর অ্যানা ফের সকালে কাজ করতে শুরু করে। দুপুরের আগে কাজ থেকে তিনি উঠতেই পারেননি। ফলে তাঁর মা-বাবার অনুষ্ঠানের জায়গায় পৌঁছতে দেরি হয়েছিল।

সমাবর্তন ঘিরে একাধিক স্বপ্ন দেখেছিলেন অ্যানা। অনুষ্ঠানে মা-বাবাকে আনতে নিজেই বিমানের টিকিট বুকিং করেছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রক।

Work Stress employee death Pune
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy