দেশের সমস্ত স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে কাঁচাপাট এবং কিছু পাটজাত পণ্য আমদানি বন্ধের নির্দেশ জারি করেছে কেন্দ্র। শনিবার থেকে তা কার্যকর হয়েছে। এতে দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর পেট্রাপোলের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়বে বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট মহলের। কাঁচাপাট না এলে সমস্যায় পড়বে দেশের চটকলগুলিও।
সাম্প্রতিক সময়ে পড়শি দেশটির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক জটিল হয়েছে। তার উপরে পহেলগামে জঙ্গি হামলার পরে ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষের জেরও বাণিজ্যে পড়েছিল। শুল্ক দফতরের এক কর্তা জানান, পেট্রাপোল দিয়ে দিনে প্রায় ৩০ ট্রাক কাঁচাপাট ও পাটজাত পণ্য আসত। ব্যবসায়ীদের মতে, তা আরও কমা সময়ের অপেক্ষা। পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তীর দাবি, আগেই বাণিজ্য কমেছিল। এ বার আরও ব্যাপক প্রভাব পড়তে চলেছে। ইতিমধ্যেই ধাক্কা লেগেছে পেট্রাপোলকে ঘিরে তৈরি হওয়া আর্থিক কর্মকাণ্ডে। ট্রাকে পণ্য ওঠানো-নামানোর কাজে যুক্ত শ্রমিক, ট্রাক মালিক, ব্যবসায়ী, ক্লিয়ারিং এজেন্ট সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
বিধিনিষেধে খুশি নন চটকল মালিকরাও। তাঁদের সংগঠন আইজেএমএ জানিয়েছে, কেন্দ্রকে চিঠি লিখবে তারা। সংগঠনের চেয়ারম্যান রাঘবেন্দ্র গুপ্ত বলেন, ‘‘কাঁচা পাট আসা বন্ধ করায় পণ্যটির দাম বাড়লে সমস্যায় পড়বে ভারতের চটকলগুলি। পাটজাত পণ্যের জন্য উচ্চ মানের পাট আসে বাংলাদেশ থেকে। তা ভারতে কম উৎপন্ন হয়। এ দিকে পাটের তৈরি ব্যাগ ও চট আমদানিতে বিধিনিষেধ আনা হয়নি। সেগুলি আনায় কড়াকড়ি হোক। কাঁচাপাট আসুক।’’
গত অগস্টে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরে পেট্রাপোল-বেনাপোল বন্দর দিয়ে বাণিজ্যে প্রভাব পড়েছিল। পরবর্তী সময়ে তা স্বাভাবিক হলেও, ফের ধাক্কা লেগেছে। এ জন্য দু’দেশের সুতো, তৈরি পোশাক আমদানি-রফতানিতে কড়াকড়ির মতো কিছু পদক্ষেপকেও দায়ী করছে একাংশ। তাদের মতে, এতে আগেই পেট্রাপোল দিয়ে বাণিজ্য কমেছে। এ বার যুক্ত হল কাঁচাপাট ও কিছু পাটজাত পণ্য।
বন্দর সূত্রের খবর, গত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন পেট্রাপোল দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ৩০,০০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। তা আরও বাড়াতে পেট্রাপোলে পরিকাঠামো উন্নত করছে কেন্দ্র। কিন্তু এক দিকে বাংলাদেশে পণ্য পাঠিয়ে টাকা না পাওয়ার আশঙ্কা। অন্য দিকে সেখান থেকে জিনিস আনতে প্রায় ৯০% আমদানিকারীকে আগাম টাকা দিতে হয়। ফলে অনেকে পণ্য পাঠাতে বা তা আনতে চাইছেন না। ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, এরই মধ্যে পরিস্থিতি আরও অবনতি হলে বন্ধ হতে পারে বাণিজ্য।
আশঙ্কা
দেশের সব স্থল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে কাঁচাপাট, কিছু পাটজাত পণ্য আনা যাবে না।
এতে পেট্রাপোলের মতো বন্দর দিয়ে বাণিজ্য ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কা।
প্রভাব পণ্য ওঠা-নামার কাজে যুক্ত কর্মীর উপরে।
চটকলগুলির দাবি, বাড়তে পারে কাঁচাপাটের দাম।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)