আবারও একটা যুদ্ধ পরিস্থিতি। আর ফের বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দর মাথাচাড়া দেওয়া। গত প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে একের পর এক ভূ-রাজনৈতিক সংঘর্ষের ক্ষেত্রে এই ছবি দেখেছে সারা বিশ্ব। ব্যতিক্রম হল না এ বারও। শুক্রবার ইরানের উপরে ইজ়রায়েল হামলা চালানোর পরেই আন্তর্জাতিক বাজারে বিপুল মাথাচাড়া দিয়েছিল অশোধিত তেলের দাম। শনিবারও বজায় রইল সেই ধারা। এ দিনও ব্রেন্ট ক্রুড ঘোরাফেরা করছে ব্যারেলে ৭৬ ডলারের আশেপাশে। ডব্লিউটিআই রয়েছে ৭৩ ডলারে। ফলে প্রশ্ন উঠছে বিশ্ব বাজারে তেলের দর ৬০ ডলারের ঘরে নামার পরেও যখন দেশের সাধারণ মানুষের ঘরে তার সুবিধা পৌঁছয়নি, তখন এ বার বিশ্ব বাজারে দাম বৃদ্ধির যুক্তি দেখিয়ে দেশে পেট্রল-ডিজ়েলের দাম ফের মাথাচাড়া দেবে না তো?
তেলমন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী অবশ্য শুক্রবারই এক্স-এ দাবি করেছেন, ইতিমধ্যেই তিনি তেল সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ভারতে তেলের ভান্ডারে যথেষ্ট পরিমাণ জ্বালানিমজুত রয়েছে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে কলকাতায় ইন্ডিয়ান অয়েলের পাম্পে পেট্রলের দাম লিটারে ১০৫.০১ টাকা। ডিজ়েল বিক্রি হচ্ছে ৯১.৮২ টাকায়। গত বছর লোকসভা ভোটের আগে, মার্চে দু’ক্ষেত্রেই লিটারে দাম ২ টাকা করে কমেছিল। ২০২২-এর মে মাসের পরে দামে এটুকু ছাড়া বিশেষ রদবদল হয়নি। অথচ চলতি বছরেরই এক সময় বিশ্ব বাজারে তেল ৫৯ ডলারে নেমেছিল। গত চার বছরে যা ছিল সর্বনিম্ন। এর আগে ২০২২ সালেরই ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়া হামলা করার পরে মার্চে বিশ্ব বাজারে তেলের দাম ছুঁয়েছিল ১৩৯ ডলার। পরে তা অনেকটাই নেমে আসে। গত বছর এই সময়েও অবশ্য দর ছিল ব্যারেলে ১০০ ডলারের কাছাকাছি।
সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, ইরান সারা বিশ্বের অন্যতম বড় তেল উৎপাদক এবং রফতানিকারী দেশ। ইতিমধ্যেই পরমাণু প্রকল্প নিয়ে তাদের উপরে পশ্চিমী দুনিয়ার নিষেধাজ্ঞা চেপে রয়েছে। কিন্তু তার পরেও তাদের উত্তোলন কম নয়। ফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে সেখান থেকে তেল উত্তোলন ও রফতানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে সারা বিশ্বে জ্বালানি সঙ্কট দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। দাম বাড়বে অশোধিত তেলের। প্রভাব পড়তে পারে দেশেও। সত্যিই সেটা হলে যে মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানতে গত কয়েক মাস ধরে সফল হয়েছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক, তা ফের হাতের বাইরে চলে যেতে পারে।
তার উপরে ইরান সংলগ্ন হরমুজ প্রণালী দিয়ে বিশ্বের পণ্য সরবরাহকারী জাহাজগুলির বড় অংশ চলাচল করে। ফলে ইরান-ইজ়রায়েল যুদ্ধ আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের জেরে সেখানে জাহাজ চলতে না পারলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ধাক্কা খাওয়ার সম্ভাবনাও থাকছে। শুল্ক যুদ্ধের আবহে যা দেশগুলিকে স্বস্তি দেবে না বলে মত বিশেষজ্ঞদের। এই অবস্থায় তাঁদের অনেকেই বলছেন, দেশে তেলের দাম কমার যে সুবিধা সাধারণ মানুষকে দেওয়া যেত, সেই সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। এখন মন্ত্রীর দাবি অনুসারে দেশের তেল-ভান্ডারে যথেষ্ট মজুত থাকলে অন্তত কয়েক মাসের জন্য নিশ্চিত থাকতে পারবে ভারত। যাদের তেলের চাহিদার ৮৫ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)