শ্রম আইনে বড় বদল এনেছে কেন্দ্র। ইতিমধ্যেই বিজ্ঞপ্তি জারি করে নতুন নিয়মের চারটি বিধি জানিয়ে দিয়েছে সরকার। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এর জেরে কমবে বেসরকারি সংস্থার কর্মীদের হাতে পাওয়া বেতনের অঙ্ক। তবে এর ফলে ভবিষ্যৎ তহবিল কলেবরে বাড়তে চলেছে বলেও আশ্বস্ত করেছেন তাঁরা। একটি উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি বুঝে নেওয়া যেতে পারে।
বেসরকারি কর্মীদের বেতনের পোশাকি নাম ‘কস্ট টু কোম্পানি’ বা সিটিসি। একটি অর্থবর্ষে প্রতি কর্মীর জন্য নিয়োগকারী সংস্থা একটি সুনির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে থাকে। একেই বলা হয় সিটিসি। কর্মীদের মূল বেতন বা বেসিক পে ছাড়াও এর অন্তর্ভুক্ত থাকে বিভিন্ন ভাতা, গ্র্যাচুইটি এবং এমপ্লোয়িজ় প্রভিডেন্ট ফান্ড (ইপিএফ)। শ্রম আইনের নতুন নিয়মে সিটিসির হিসাবে বদল আনতে বলেছে কেন্দ্র। আর তাই কর্মীদের হাতে পাওয়া বেতনের অঙ্ক হ্রাস পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
শ্রম আইনের নতুন বিজ্ঞপ্তিতে বেসরকারি কর্মীদের মোট সিটিসির ৫০ শতাংশ বাধ্যতামূলক ভাবে মূল বেতন বা বেসিক পে করতে বলা হয়েছে। বর্তমানে কোনও ব্যক্তির বার্ষিক সিটিসি ১২ লক্ষ হলে মাসে এক লাখ টাকা আয় করছেন তিনি। এত দিন পর্যন্ত অধিকাংশ সংস্থাই মোট সিটিসির ২৫ শতাংশ মূল বেতন বা বেসিক পে হিসাবে ধার্য করে আসছিল। সেই হিসাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মূল বেতন হিসাবে পাচ্ছিলেন ২৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া ইপিএফ ও গ্র্যাচুইটি বাবদ তিন হাজার এবং ভাতা বাবদ তাঁকে ৭২ হাজার টাকা দিচ্ছিল নিয়োগকারী সংস্থা।
কিন্তু নতুন নিয়মে মূল বেতন বাধ্যতামূলক ভাবে সিটিসির ৫০ শতাংশ হওয়ায় ওই ব্যক্তির ক্ষেত্রে সেটা বেড়ে দাঁড়াবে ৫০ হাজার টাকা। এর উপরে পিএফ ও গ্র্যাচুইটি বাবদ ছ’হাজার এবং ভাতা বাবদ তাঁকে আরও ৪৪ হাজার টাকা দেবে নিয়োগকারী সংস্থা। মূল বেতন বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই পড়বেন আয়করের আওতায়। তা ছাড়া বেসিক পে বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই পিএফ বাবদ বেশি টাকা দিতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে। এর জেরে মাসের শেষে আগের তুলনায় কম টাকা হাতে পাবেন তিনি।
বেসরকারি সংস্থার কর্মীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা হল ‘এমপ্লোয়িজ় প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্গানাইজ়েশন’ বা ইপিএফও। তাদের তৈরি করা নিয়মে বলা আছে, কোনও কর্মীর জন্য নিয়োগকারী সংস্থা যতটা অর্থ পিএফ তহবিলে জমা করবে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বেতন থেকে কেটে নিয়ে সমপরিমাণ টাকা সেখানে দিতে হবে। তা ছাড়া মূল বেতনের ১২ শতাংশ বাধ্যতামূলক ভাবে প্রভি়ডেন্ট ফান্ড তহবিলে জমা করতে বলা হয়েছে। আর তাই বেসিক পে বৃদ্ধিতে কর্মীদের পিএফের ভবিষ্যৎ তহবিলে জমা করতে হবে বেশি টাকা।