সুদ আরও কমার জায়গা আছে। কমা দরকারও। কিন্তু কতটা কমবে কিংবা আদৌ আর কমবে কি না, সেই প্রশ্নে বাড়ছে সংশয়। চড়ছে বিতর্কও।
চলতি বছরে ইতিমধ্যেই দু’বার রেপো রেট (যে সুদে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে ধার দেয় আরবিআই) কমিয়েছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। ফেব্রুয়ারি এবং এপ্রিলের ঋণনীতি মিলিয়ে ৫০ বেসিস পয়েন্ট। তার জেরে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক বাড়ি-গাড়ি সমেত বিভিন্ন খুচরো ঋণে সুদ ছেঁটেছে একটু। তবে সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, তা যথেষ্ট নয়। সুদের খরচ যেটুকু কমেছে, তাতে ঋণগ্রহীতা গৃহস্থের উদ্বেগ কমেনি। তাঁদের সুরাহা দিতে এই বোঝা আরও কিছুটা হালকা করা জরুরি। বিশেষত আমেরিকার শুল্ক, পহেলগাম জঙ্গী হানার ঘটনাকে ঘিরে পাকিস্তানের সঙ্গে ফের মাথা তোলা উত্তেজনার মতো নানা কারণে চারপাশের পরিবেশ-পরিস্থিতি যেহেতু অস্থির। আগামী দিনে মূল্যবৃদ্ধির ফের মাথা তোলার আশঙ্কাও পুরো কাটেনি।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, শীর্ষ ব্যাঙ্কের ঋণনীতি কমিটির বহিরাগত সদস্য সৌগত ভট্টাচার্যের মতে, আরও সুদ কমানোর জায়গা রয়েছে। কারণ খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার কমছে ও আর্থিক বৃদ্ধি নিয়ে অনিশ্চয়তা বেড়েছে। তবে সেই পথে হাঁটার ব্যাপারে আরবিআই সতর্ক। ধীরে চলো নীতি নিয়ে ধাপে ধাপে এগোতে চায়। কারণ, একমাত্র তাতেই আর্থিক বৃদ্ধি এবং মূল্যবৃদ্ধির মধ্যে ভারসাম্য আনা সম্ভব হবে। বিশেষত আর্থিক বৃদ্ধি মাথা তুলতে শুরু করায় যেহেতু মূল্যবৃদ্ধি চড়ার ঝুঁকিও বেড়েছে।
ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের প্রাক্তন সিএমডি দেবব্রত সরকারের মতে, রেপো রেট কমানোই সমস্যার বিষয় হতে পারে শীর্ষ ব্যাঙ্কের পক্ষে। কারণ, তা ছাঁটলে, তার সঙ্গে যুক্ত বাড়ি-গাড়ি সমেত বিভিন্ন ঋণে দ্রুত সুদ কমবে। আর ঋণে সুদ কমলে ব্যাঙ্ককে আমানতেও সুদ কমাতে হবে। ফলে ব্যাঙ্কের পুঁজি সংগ্রহে সমস্যা হতে পারে। বিশেষত এমনিতেই যেহেতু মূল্যবৃদ্ধির চাপে মানুষের মধ্যে ব্যাঙ্কের বদলে মিউচুয়াল ফান্ড বা শেয়ারে টাকা রাখার প্রবণতা বেড়েছে। কারণ, ঝুঁকি বেশি হলেও ব্যাঙ্ক জমার চেয়ে এই সব ক্ষেত্রের রিটার্ন বেশি হওয়ার সম্ভাবনা। তাই রেপো ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমলেও বহু ব্যাঙ্ক ঋণের সুদে হাত দিতে পারেনি।
অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকারের আবার দাবি, সাধারণত মূল্যবৃদ্ধি মাথা নামালে সুদ কমানোর জায়গা তৈরি হয়। কিন্তু এখনও মূল্যবৃদ্ধি এতটা কমেনি যে, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক আগ্রাসী ভাবে সুদ ছাঁটতে পারে। তার উপর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা আরও চড়লে মূল্যবৃদ্ধির ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার আশঙ্কা। তাঁর কথায়, ‘‘আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস ছাঁটছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে শুরু করে সব আর্থিক সংস্থা। ফলে সুদ কমাই উচিত। কিন্তু এই সব টানাপড়েনে আদতে কতটা সুদ কমানো সম্ভব হবে,তা নিয়ে সংশয় থাকছেই।’’
বন্ধন ব্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠাতা চন্দ্রশেখর ঘোষের অবশ্য মত, মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানা গিয়েছে। সুদও একটু কমেছে। তবে ঋণের চাহিদা সে ভাবে বাড়েনি। অথচ তা না বাড়লে দেশে কর্মসংস্থানও বাড়বে না। সুতরাং ঋণের চাহিদা বাড়াতে সুদ দ্রুত আরও কিছুটা কমা জরুরি। তাতে মধ্যবিত্তও স্বস্তি পাবেন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)