চিন্তা বাড়িয়ে মে মাসে দেশে মাথা তুলল বেকারত্বের হার। সোমবার সরকারের পরিসংখ্যান জানাল, গত মাসে ভারতে বেকারত্ব দাঁড়িয়েছে ৫.৬%। এপ্রিলে কেন্দ্রের প্রকাশিত প্রথম মাসিক কাজের বাজারের সমীক্ষায় যা ছিল ৫.১%। মূলত রবি শস্যের ফলন শেষে গ্রামাঞ্চলে কৃষিকাজ কমা এবং গ্রীষ্মে সামগ্রিক ভাবে শ্রমনির্ভর কাজে ভাটাই এর কারণ বলে জানানো হয়েছে। গ্রামে মানুষ কৃষি ছেড়ে পরিষেবা বা অন্যান্য ক্ষেত্রে পা রেখেছেন। সেই ছবি দেখা গিয়েছে মহিলা, পুরুষ উভয়ের মধ্যেই। তবে চিন্তা থাকছে শহরের বেকারত্বের হার নিয়েও। মে মাসে যা এপ্রিলের ৫.৮% থেকে বেড়ে পৌঁছে গিয়েছে ৬.২ শতাংশে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, মোদী সরকার যখন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে ওঠার বার্তা দিচ্ছে, তখন এই পরিসংখ্যান তাদের স্বস্তিতে রাখবে না।
গত মাসের হিসাব অনুযায়ী, ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সি ব্যক্তিদের বেকারত্ব পৌঁছে গিয়েছে ১৫ শতাংশে। এপ্রিলে যা ছিল ১৩.৮%। আর তাদের ক্ষেত্রে শহরে কাজ না পাওয়ার হার চমকে ওঠার মতো, ১৭.৯%। গ্রামে সেই হার ১৩.৭%। সব ক্ষেত্রেই মহিলারা যে পুরুষদের থেকে পিছিয়ে রয়েছেন, সেটাও প্রমাণ হয়েছে তাঁদের বেকারত্বের হারে (৫.৮%)।
এই পরিসংখ্যান সামনে আসতেই ফের সংশ্লিষ্ট সব মহলের তোপের মুখে পড়ছে মোদী সরকার। অভিযোগ, কেন্দ্রের দেওয়া কর্মসংস্থানের সমস্ত প্রতিশ্রুতি কতটা ফাঁকা, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে শহরাঞ্চলে ১৭ শতাংশের বেশি বেকারত্ব। অনেকে মনে করাচ্ছেন, এর আগে ২০১৬-১৭ সালে সরকার প্রকাশ না করা সত্ত্বেও ফাঁস হয়ে যাওয়া কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান দেখিয়েছিল সেই সময় দেশে বেকারত্বের হার ৬.১%। যা ছিল ৪৫ বছরের মধ্যে সব থেকে বেশি। সেই নিরিখে ৫.৬% কম হলেও, ফারাক খুব বেশি নয় বলে আঙুল উঠেছে। অচিরেই তা ৬ শতাংশের সীমা ছাড়াবে কি না, সেই আশঙ্কাও চোখ রাঙাচ্ছে।
অর্থনীতিবিদ অজিতাভ রায়চৌধুরীর অবশ্য বক্তব্য, বেকারত্ব দু’ধরনের হয়। স্বল্পকালীন এবং দীর্ঘকালীন। একটা চাষের মরসুম শেষ ও পরেরটি শুরুর মাঝে গ্রামে স্বল্প মেয়াদে বেকারত্ব বাড়ে। তবে তিনি বলছেন, ‘‘শিল্পোৎপাদনে এখনও তেমন গতি আসেনি। নির্মাণ শিল্পও ধীর গতিতে চলছে। শহরে বেকারত্ব বাড়ার এটাই কারণ। তা সাময়িক হলেও, বর্তমানে ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা ও শুল্ক যুদ্ধের জেরে বিশ্ব জুড়েই পরিস্থিতি ঘোরালো। তাতে দেশের রফতানি মার খেতে পারে। তার প্রভাব পড়তে পারে উৎপাদন শিল্পে। দেখতে হবে আগামী দিনে কী হয়। দীর্ঘকালীন ভিত্তিতে বেকারত্ব বাড়লে তা অর্থনীতির পক্ষে চিন্তার।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)