সুদ নির্ভর মানুষের জন্য সুখবর ছিল এ বারের বাজেটেও। প্রতীকী ছবি।
চলতি বছরের গোড়া থেকে ধাপে ধাপে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে সুদ নির্ভর মানুষের মনে। গত মে মাস থেকে শুরু করে প্রতি দু’মাস অন্তর রেপো রেট (যে সুদে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অন্যান্য ব্যাঙ্কগুলিকে ধার দেয়) নাগাড়ে বাড়তে থাকায় ঋণে ভালই সুদ বাড়ছিল। তবে সেই অনুপাতে জমায় তার হার বাড়ানো হচ্ছিল না। জমায় সুদ গত বছরের শেষ দিকে একটু আকর্ষণীয় হারে বাড়াতে শুরু করে ব্যাঙ্কগুলি, যখন ঋণের চাহিদা মাথা তোলে। কারণ, সেই চাহিদা মেটাতে প্রয়োজন হয় বড় তহবিলের। সুদ বৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিও (এনবিএফসি)। অন্য দিকে, রেপো বৃদ্ধি পাওয়ায় বাড়তে থাকে বন্ডের ইল্ড। চড়া মূল্যবৃদ্ধির বাজারে সব দিকে সুদ যখন ঊর্ধ্বমুখী, তখন মানুষের মনে আশা জেগেছিল বহু মাস একই জায়গায় থাকার পরে এ বার হয়তো কয়েকটি স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে সুদ বাড়ানো হবে। গত মাসে খানিকটা আশা বাস্তবায়িত হয়েছে। সুদ বাড়ানো হয়েছে কিছু ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পে।
সুদ নির্ভর মানুষের জন্য সুখবর ছিল এ বারের বাজেটেও। মহিলাদের জন্য বাজারে ছাড়ার কথা বলা হয়েছে একটি নতুন প্রকল্প। নাম মহিলা সম্মান বচত পত্র। এই প্রকল্পে ৭.৫০% সুদে ২ বছর পর্যন্ত সর্বাধিক ২ লক্ষ টাকা রাখা যাবে। প্রবীণ নাগরিকদের জন্য বিশেষ প্রকল্প সিনিয়র সিটিজেন্স সেভিংস স্কিমে এখন সর্বাধিক ১৫ লক্ষ টাকা রাখা যায়। এপ্রিল থেকে জমার সর্বাধিক পরিমাণ বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩০ লক্ষ টাকা। এই প্রকল্পে ডিসেম্বর পর্যন্ত সুদ পাওয়া যাচ্ছিল ৭.৪০% হারে। জানুয়ারি থেকে তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৮%। স্বভাবতই বয়স্ক মানুষেরা সরকারের এই দুই সিদ্ধান্তে খুশি।
জাতীয় সঞ্চয়পত্র বা এনএসসি-তে সুদ ৬.৮% থেকে বাড়িয়ে ৭% করার কারণে ভারত সরকারের ফ্লোটিং রেট বন্ডেও সুদ ৭.১৫% থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৭.৩৫%। এ ছাড়া এখন ৭% বা তার বেশি সুদ মিলছে ডাকঘর মাসিক আয় প্রকল্পে (৭.১%), ৫ বছর মেয়াদি ডাকঘর জমা প্রকল্পে (৬.৬% থেকে ৭.০%), কিসান বিকাশ পত্রে (৭.২%), পিপিএফে (৭.১%) এবং সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনায় (৭.৬%)।
বেশ কিছু মাঝারি ও বড় ব্যাঙ্ক সর্বাধিক সুদ দিচ্ছে ৭.০০%-৭.৫০%, প্রবীণদের ৭.৫০%-৮.০০%। কোনও কোনও এনবিএফসিতে প্রবীণেরা পাচ্ছেন ৭.৭৫%-৮.৫০% পর্যন্ত। অনেক দিন বাদে বেশিরভাগ জমা প্রকল্পের সুদ এখন খুচরো মূল্যবৃদ্ধির (৬.৫২%) তুলনায় বেশি। এই অবস্থায় ভাল প্রকল্পে বড় মেয়াদে কিছুটা উঁচু সুদ পেলে তাতে লগ্নি করাই এখন বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
ভারত সরকারের পেনশন প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী বয়ো বন্দনা খোলা আছে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। ১০ বছর মেয়াদি এই প্রকল্পে ৭.৪% রিটার্ন মেলে মাসিক কিস্তিতে। ৩১ মার্চের পরে এই প্রকল্পের মেয়াদ ও সুদের হার বাড়ানো হয় কি না, সে দিকে চোখ রয়েছে অনেকেরই। সর্বত্র সুদ বাড়ায় রিটার্ন কিছুটা বাড়ানো হয়েছে জীবন বিমা সংস্থার বিভিন্ন অ্যানুইটি প্রকল্পেও।
তবে যাঁরা ৩১.২% (৩০% করের উপরে সেস ধরে) আয়করের আওতায় পড়েন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই সব সুদ তত বেশি আকর্ষণীয় না-ও দেখাতে পারে। কারণ, কোনও প্রকল্পে ৮% সুদ পাওয়া গেলেও, তা থেকে তাঁদের কর বাদ দিলে প্রকৃত আয় দাঁড়ায় ৫.৫০%। এই শ্রেণির মানুষ বিকল্প হিসেবে ডেট অর্থাৎ ঋণপত্র নির্ভর ফান্ডে ৩ বছরের বেশি মেয়াদে টাকা রাখার কথা ভাবতে পারেন। এই ধরনের ফান্ডে এখন ৭.৫০% পর্যন্ত আয় হতে পারে। সঙ্গে পাওয়া যাবে মূল্যবৃদ্ধি সূচক (কস্ট ইনফ্লেশন ইনডেক্স) প্রয়োগের সুবিধা। ফলে কর ধার্য হবে অনেক কম টাকার উপরে এবং তা-ও মাত্র ২০% হারে। একই কারণে কেনা যেতে পারে টার্গেট ম্যাচিয়োরিটি ফান্ডের ইউনিট। এ ক্ষেত্রে লগ্নির সময়েই জানা যাবে রিটার্ন কী হতে পারে। যেহেতু মেয়াদ শেষে এই ইউনিট ভাঙানো হবে, সেই কারণে মধ্যবর্তী সময়ে বন্ড বাজারে দামের ওঠাপড়ায় মেয়াদ শেষে রিটার্নের উপর তার কোনও প্রভাব পড়বে না।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy