Advertisement
E-Paper

হাতে থাকা জমি ছাড়ছে রিলায়্যান্স

এ এক উলট পুরাণ ! রাজ্য থেকে ন্যানো বিদায়ের পরবর্তী পর্যায়ে জমি জটে লগ্নি আটকে থাকা নতুন নয়। কিন্তু জমি হাতে আছে। অথচ তার বাণিজ্যিক সম্ভাবনা তলানিতে। আর, সে কারণেই পশ্চিমবঙ্গ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে ওই জমি ছেড়ে দিচ্ছে রিলায়্যান্স রিটেল।

গার্গী গুহঠাকুরতা

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:২২

এ এক উলট পুরাণ !

রাজ্য থেকে ন্যানো বিদায়ের পরবর্তী পর্যায়ে জমি জটে লগ্নি আটকে থাকা নতুন নয়। কিন্তু জমি হাতে আছে। অথচ তার বাণিজ্যিক সম্ভাবনা তলানিতে। আর, সে কারণেই পশ্চিমবঙ্গ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে ওই জমি ছেড়ে দিচ্ছে রিলায়্যান্স রিটেল।

সময় মতো খুচরো ব্যবসার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত না-হওয়ায় এ রাজ্যে আর বড় জমি ধরে রাখতে চায় না মুকেশ অম্বানী গোষ্ঠীর রিলায়্যান্স রিটেল। ইতিমধ্যেই আসানসোলে ২ নম্বর জাতীয় সড়কের কাছে প্রায় ১০০ একর জমি রাজ্য সরকারকে ফিরিয়ে দিয়েছে সংস্থা। একর প্রতি ১২ লক্ষ টাকা দরে এই জমি কিনেছিল তারা।

শুধু আসানসোলেই নয়। ফলতা ও মালদহে ১০০ একরের কাছাকাছি জমি রয়েছে রিলায়্যান্সের হাতে। সেই জমিও কাজে লাগাতে আগ্রহী নয় তারা। সংস্থা সূত্রের খবর, ২০০৬ সালের যে-ব্যবসায়িক পরিকল্পনার ভিত্তিতে এ সব জমি কেনা হয়েছিল, তা কার্যকর করা যায়নি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গিয়েছে বাজার ও সংস্থার ব্যবসায়িক কৌশলও। অথচ খুচরো ব্যবসার বাজার ধরতেই পশ্চিমবঙ্গে জমি কিনে সংশ্লিষ্ট পরিকাঠামো গড়তে বিনিয়োগ করতে চেয়েছিল সংস্থা।

২০০৬ সালে তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে বৈঠক করে মুকেশ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এ রাজ্যে খুচরো ব্যবসায় রিলায়্যান্স প্রায় ২০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। এবং ২০০৭ সালেই শুরু হয়ে যাবে ব্যবসা।

কিন্তু রাজনৈতিক বাধায় ভেস্তে যায় প্রকল্প। বামফ্রন্টের শরিক দল ফরোয়ার্ড ব্লক রিলায়্যান্সের তীব্র বিরোধিতা করে। ফরওয়ার্ড ব্লকের অভিযোগ ছিল, রিলায়্যান্সের মতো সংস্থা সরাসরি কৃষকদের থেকে কৃষিপণ্য কিনলে, মার খাবেন ছোট ব্যবসায়ীরা। লাভবান হবেন না ছোট চাষিরাও। বিষয়টি নিয়ে বামফ্রন্টের অন্দরমহলেও বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। এবং পিছিয়ে যায় প্রকল্পটি।

পরে রাজনৈতিক বিরোধিতা কিছুটা কমে এলে ছোট আকারে রাজ্যে পা রাখে রিলায়্যান্স রিটেল। রাজনৈতিক বাধা ও ব্যবসায় লাভ-ক্ষতির হিসেব কষেই এগোনোর সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থা। বাতিল করে দেয় রাজ্যে বড় মাপের দোকান খোলার পরিকল্পনা। ২০০৮-এ প্রথম বিপণি খুললেও রফাসূত্র হিসেবে দোকানে কৃষিপণ্য বিক্রি স্থগিত রাখে তারা।

প্রাথমিক পরিকল্পনায় রিলায়্যান্স রিটেলের প্রকল্পের আওতায় ৬টি বণ্টন কেন্দ্র খোলার কথা ছিল হাওড়া, আসানসোল, খড়্গপুর, হলদিয়া, মালদহ ও শিলিগুড়িতে। এ ছাড়াও চালু করার কথা ছিল রাজ্যের সব জেলায় দু’টি করে খুচরো বিক্রয়কেন্দ্র। প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজন ছিল ১০ একর জমি। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী হলদিয়া, শিলিগুড়ি, দুর্গাপুর, বর্ধমান, কল্যাণী, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, বারাসত, চন্দননগর ও বালুরঘাটে জমি কেনার পথে এগিয়েওছিল সংস্থা।

পাশাপাশি পরিকল্পনায় ছিল ‘রুরাল বিজনেস হাব’ বা গ্রামীণ ব্যবসা কেন্দ্র। প্রতিটি গ্রামীণ কেন্দ্রের সঙ্গে একটি বণ্টন কেন্দ্রের যোগসূত্র গড়ে তুলতে চেয়েছিল সংস্থাটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, কাটোয়া, কালনা, পাণ্ডুয়া, হরিপাল, কাঁথি ও তমলুক-সহ ১১টি জায়গায় ১০ একর করে জমি কিনেছিল সংস্থা।

অধিকাংশ জমি সরাসরি মালিকদের থেকে কেনে রিলায়্যান্স রিটেল। কিছু জমি কেনা হয় সরকারি সংস্থার কাছ থেকে। রাজ্য সরকারি সংস্থা নর্থ বেঙ্গল স্টেট ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের কাছ থেকে শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি ও বহরমপুরে প্রায় সাড়ে আট একর জমি কেনে রিলায়্যান্স। সেই জমি অবশ্য আইনি জটিলতার কারণে আজও হাতে পায়নি সংস্থা। সব মিলিয়ে জমি খাতে ১০০ কোটির বেশি টাকা আটকে রয়েছে সংস্থার।

রিলায়্যান্স রিটেলের প্রথম ব্যবসায়িক ছকে গুজরাত, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং পঞ্জাবের সঙ্গে ছিল পশ্চিমবঙ্গও। বাকি রাজ্যগুলিতে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে ব্যবসা চালু হয়ে গেলেও রাজনৈতিক জটিলতার কারণে সমস্ত পরিকল্পনাই ভেস্তে যায় এ রাজ্যে। শিল্পমহলের মতে, তার খেসারতই রাজ্যকে দিতে হচ্ছে। এক শিল্প-কর্তার দাবি, বিনিয়োগের প্রাথমিক শর্তই নির্দিষ্ট সময়ে ব্যবসা শুরু করে লাভের টাকা ঘরে তোলা। এ রাজ্যে সেই শর্ত পূরণ হয়নি রিলায়্যান্সের। আর সময়ের সঙ্গেই বদলে গিয়েছে সংস্থার ব্যবসায়িক পরিকল্পনাও।

তবে ব্যবসার হিসেব কষার পাশাপাশি সম্ভাব্য রাজনৈতিক বাধার হিসেব-নিকেশও করে নিতে চায় সংস্থা। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলেও খুচরো ব্যবসা সম্পর্কে মতামতের পরিবর্তন কতটা হয়েছে তা না-জেনে এই ব্যবসা বাড়াতে চায় না মুকেশ অম্বানী গোষ্ঠী।

খুচরো ব্যবসায়ে বিদেশি বিনিয়োগের বিরোধিতায় সোচ্চার হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। খুচরো ব্যবসা ছাড়া আরও একটি বিষয়ে বর্তমান শাসক দলের অবস্থান সকলের জানা। পুর বাজারগুলি চাঙ্গা করতে বেসরকারি লগ্নির হাত ধরেছিল বিগত সরকার। সেই সূত্রেই পার্ক সার্কাস বাজার হাতে নিতে চেয়েছিল রিলায়্যান্স। কিন্তু ক্ষমতা বদলের পরে কলকাতা পুরসভার সেই পরিকল্পনাও ভেস্তে যায়।

ফলে, টেলিকমের বাইরে রাজ্যে অন্যান্য ব্যবসায়িক পরিকল্পনা নিয়ে আপাতত আগ্রহী নয় মুকেশ অম্বানী গোষ্ঠী। জমি হাতে আছে ঠিকই। কিন্তু তা নিয়ে বিনিয়োগের নয়া ভাবনা-চিন্তা নেই তাদের।

reliance retail west bengal government reliance land gargi guha thakurata falta asansole malda reliance land problem
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy