ইরান-ইজ়রায়েল যুদ্ধে বিশ্ব জুড়ে অশনি সঙ্কেত ছড়িয়েছিল। তা দীর্ঘায়িত না হওয়ায় উদ্বেগ কিছুটা কমেছে। যুদ্ধ বন্ধের ফলে শেয়ার বাজার লাফিয়ে বেড়েছে। বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম মাথা নামিয়েছে। ডলারের সাপেক্ষে টাকার দাম উঠেছে। ইরান হরমুজ় প্রণালী বন্ধ না করায় বৈদেশিক বাণিজ্যে ধাক্কা লাগেনি। অনিশ্চয়তা কিছুটা কমায় নেমেছে সোনার দামও।
তবে দুশ্চিন্তায় সুদ-নির্ভর মানুষেরা। আজ জুলাই-সেপ্টেম্বরের জন্য স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলির সুদের হার জানাবে কেন্দ্র। মূল্যবৃদ্ধির হার অনেকটা নামায় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক তিন বারে রেপো রেট (যে হারে আরবিআই ব্যাঙ্কগুলিকে ধার দেয়) মোট ১০০ বেসিস পয়েন্ট ছেঁটেছে। এর জেরে ব্যাঙ্কে ঋণ এবং জমায় সুদ কমেছে বিভিন্ন ব্যাঙ্কে। এ বার দেখার স্বল্প সঞ্চয়ে সুদ কমে কি না। কমলে, কতটা। আশঙ্কা, সুদ কমতে পারে পিপিএফ (বর্তমান সুদ ৭.১%), সিনিয়র সিটিজেন্স সেভিংস স্কিম (৮.২%), মাসিক আয় প্রকল্প (৭.৪%), এনএসসি (৭.৭%), ৫ বছর মেয়াদি টাইম ডিপোজ়িট (৭.৫%) ইত্যাদিতে। ৫০ বেসিস পয়েন্ট বা তারও বেশি কমার আশঙ্কাও করা হচ্ছে। তা সত্যি হলে, ৫১ বছর পরে পিপিএফের সুদ ৭ শতাংশের নীচে নামবে। ১৯৭৪-এ তা ছিল ৫.৮%, এর পরে ৭ শতাংশে ওঠে। ১৯৮৬-৮৭ থেকে কয়েক বছর ১২% ছিল। প্রকল্পটিতে সুদের হার ঠিক হয় আগের তিন মাসে ১০ বছর মেয়াদি সরকারি ঋণপত্রের গড় ইল্ডের সঙ্গে ২৫ বেসিস পয়েন্ট যোগ করে। সেই হিসাবে, সুদ নামতে পারে ৬.৫৭ শতাংশের কাছে। সুদ কমলে বিপাকে পড়বেন সুদ-নির্ভর প্রবীণ নাগরিকেরাও। এনএসসি-তে সুদ কমলে, তা কমবে ভারত সরকারের ‘ফ্লোটিং রেট সেভিংস বন্ডে’-ও। অর্থাৎ যাঁরা বাজারের ঝুঁকি এড়িয়ে স্থির আয় প্রকল্পে টাকা রেখে নিশ্চিন্তে থাকতে পছন্দ করেন, তাঁদের উদ্বেগ বাড়ছে।
ঝুঁকির লগ্নিতে অবশ্য ছবি বদলাচ্ছে। যুদ্ধের আবহে শেয়ারে পুঁজি ঢালতে ভয় পাচ্ছিলেন অনেকে। এখন তাঁরা ঝাঁপিয়েছেন। ফলে সূচক ন’মাসের সর্বোচ্চ হয়েছে। আগের চারটি লেনদেনে সেনসেক্স টানা ২১৬৭ পয়েন্ট বেড়ে হয়েছে ৮৪,০৫৯ অঙ্ক। যা সর্বোচ্চ শিখর ৮৫,৮৩৬ (২৬ সেপ্টেম্বর’২৪) থেকে ১৭৭৭ দূরে। এতে সুদিন ফিরেছে মিউচুয়াল ফান্ডেও। চাঙ্গা হচ্ছে প্রথমবার শেয়ার ছেড়ে অর্থ সংগ্রহের (আইপিও বা নতুন ইসু) বাজার। এইচডিবি ফিনান্সের ১২,৫০০ কোটি টাকার আইপিও-তে লগ্নির আবেদন জমা পড়েছে ১৬.৭ গুণ। শেয়ার বণ্টন হবে এক দু’দিনের মধ্যেই। তবে মেঘ কাটেনি। একটি যুদ্ধ সাময়িক বন্ধ। কিন্তু পৃথিবীর নানা প্রান্তে যুদ্ধের আশঙ্কা বহাল। যে কারণে বহু দেশ প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়াচ্ছে। ন্যাটো গোষ্ঠীর দেশগুলি তা বাড়িয়ে জাতীয় উৎপাদনের ৫% করছে। অর্থনীতির জন্যে এটা ভাল নয়। প্রতিরক্ষা শিল্প তেজী থাকবে।
আজ চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকের শেষ দিন। শীঘ্রই সংস্থার ফল প্রকাশ শুরু হবে। ভাল বর্ষা এসে গিয়েছে। বাজারের নজর থাকবে ভারত-আমেরিকার বাণিজ্য চুক্তি এবং শুল্কের দিকেও। ৯ জুলাই পর্যন্ত চড়া শুল্ক বসানো স্থগিত রেখেছে তারা। আমেরিকার পরের পদক্ষেপের প্রভাব থাকবে ভারতীয় অর্থনীতি ও শেয়ার বাজারে। পরোক্ষে প্রভাব ফেলবে আমেরিকা-চিন চুক্তিও।
আশার ছবি
বাজার চড়ছে। সর্বোচ্চ শিখর থেকে সেনসেক্স মাত্র ১৭৭৭ পয়েন্ট দূরে।
সুদিন ফিরেছে ফান্ডে।
খুচরো পাকা সোনার (১০ গ্রাম, ২৪ ক্যারাট) দাম নেমেছে ৯৬,৪০০ টাকায়।
৬৭.৩৯ ডলারে নেমেছে বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম।
বহু সংস্থা প্রথমবার শেয়ার ছেড়ে টাকা তুলছে।
নজর যে দিকে
এপ্রিল-জুনে সংস্থার আর্থিক ফল।
বর্ষার গতিপ্রকৃতি।
৯ জুলাইয়ের পরে আমেরিকার শুল্ক-সিদ্ধান্ত।
স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পের সুদ।
(মতামত ব্যক্তিগত)
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)