Advertisement
১১ মে ২০২৪
Business News

খুচরো মূল্যসূচকও ৬ বছরে সর্বোচ্চ, পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির জের, বলছেন অর্থনীতিবিদরা

উল্লেখযোগ্য ভাবে খাদ্যদ্রব্য ছাড়া বাকি সব ক্ষেত্রেই মূল্যসূচক কমেছে।

প্রতীকী চিত্র

প্রতীকী চিত্র

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২০ ২০:০৭
Share: Save:

বেড়েই চলেছে মধ্যবিত্তের বোঝা। অর্থনীতির বেহাল দশার সঙ্গে দোসর এ বার রেকর্ড খুচরো মূল্যসূচক। চলতি আর্থিক বছরে জিডিপি আগেই গত ছ’বছরে সর্বনিম্ন মাত্রা ছুঁয়েছে। এ বার ছ’বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড করে ফেলল কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (সিপিআই) বা খুচরো মূল্যসূচকও। শুধু তাই নয়, সিপিআই ছাড়িয়ে গিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভবিষ্যদ্বাণীর ঊর্ধ্বসীমাও। ডিসেম্বরের সিপিআই ৭.৩৫ শতাংশ, যা নভেম্বরের চেয়ে প্রায় ২ শতাংশ বেশি। কিন্তু এর মধ্যেও সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ বাড়িয়েছে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার জেরেই সিপিআই-এ এই প্রতিফলন।

২০১৯-’২০ অর্থবর্ষে ডিসেম্বরের সিপিআই-এর তথ্য সোমবারই সামনে এনেছে জাতীয় পরিসংখ্যান দফতর (এনএসও)। প্রতি মাসেই এই সূচক প্রকাশ করে এনএসও। এই খুচরো মূল্যসূচকের মধ্যে থাকে খাদ্যদ্রব্য, গৃহস্থালির জিনিসপত্র ও পরিষেবা, চিকিৎসা-স্বাস্থ্য, আবাসন, জ্বালানির মতো ক্ষেত্র। আমজনতার উপর দ্রব্যমূল্যের বোঝা কতটা বাড়ল বা কমল, সেটাই নির্ধারণ করে এই সূচক। জিনিসপত্রের দাম বাড়া-কমার সঙ্গে সমানুপাতিক এই সূচক।

নভেম্বরে খুচরো মূল্যসূচক (৫.৫৪ শতাংশ) ৪০ মাসে পৌঁছে গিয়েছিল সর্বোচ্চ। তখনই কিছুটা ইঙ্গিত মিলেছিল। তার এক মাস পরেই সিপিআই বেড়ে দাঁড়াল ৭.৩৫ শতাংশ। এক মাসের মধ্যে যে এতটা ঊর্ধ্বমুখী হয়ে যাবে সিপিআই, তা কার্যত আগাম আঁচ করতে পারেননি অর্থনীতিবিদরা। শেষ ২০১৪ সালের জুলাইয়ে এই খুচরো মূল্যসূচক পৌঁছেছিল ৭.৩৯ শতাংশে। তার পর গত ছ’বছরে আর এত ব্যাপক হারে সিপিআই দেখেনি দেশ।

খুচরো মূল্যসূচকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছাপ ফেলেছে খাদ্যদ্রব্য। নভেম্বরে এই ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধি ছিল ১০.০১ শতাংশ। ডিসেম্বরে সেটাই বেড়ে হয়েছে ১৪.১২ শতাংশ। অর্থাৎ ৪ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি, যা মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিরাট পার্থক্য। অন্য দিকে, ২০১৮-র ডিসেম্বরে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যসূচক ছিল ১১.৪৭ শতাংশ। এর মধ্যে আরও উল্লেখযোগ্য হল, সব্জি-আনাজের খুচরো মূল্যসূচক বেড়ে হয়েছে ৬০.৫ শতাংশ। নভেম্বরে এই সূচক ছিল ৩৬ শতাংশ।

তবে উল্লেখযোগ্য ভাবে খাদ্যদ্রব্য ছাড়া বাকি সব ক্ষেত্রেই মূল্যসূচক কমেছে। যেমন গৃহস্থালির জিনিসপত্র নভেম্বরের ২.২ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ১.৭৫। চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য খাতে ডিসেম্বরের মূল্যসূচক ৩.৩৮%, যা নভেম্বরে ছিল ৫.৫%। একই ভাবে আবাসন ক্ষেত্রে ডিসেম্বরের সূচক ৪.৩%, নভেম্বরে ছিল ৪.৫% এবং জ্বালানিতে ডিসেম্বরে হয়েছে ০.৭ শতাংশ, নভেম্বরে ছইল ১.৯%।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

এনএসও-র এই পরিসংখ্যান সামনে আসার পরেই দুশ্চিন্তা বেড়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এবং কেন্দ্রের। কারণ সাধারণত শীতের সময় সবজি ও আনাজের দাম পড়তির দিকে থাকে। কিন্তু এ বছর অসময়ের বৃষ্টির জেরে পেঁয়াজের ফলন ব্যাপক ভাবে মার খেয়েছে এবং তার জেরে অস্বাভাবিক হারে দাম বেড়েছে। অকাল বর্ষণে অন্যান্য শীতের সবজির ফলনেও প্রভাব পড়েছে। তার প্রভাবেই সূচক কার্যত লাফিয়ে বেড়েছে বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সাধারণত খুচরো মূল্যসূচক সর্বোচ্চ কত বাড়তে পারে, তার আগাম আঁচ করে একটি সংখ্যা জানায়। চলতি আর্থিক বছরে শীর্ষ ব্যাঙ্কের সেই ভবিষ্যদ্বাণী ছিল ২-৬ শতাংশ। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে সেই নির্ধারিত সূচককেও ছাপিয়ে গেল ডিসেম্বরে, যা গত সাড়ে তিন বছরে হয়নি। ডিসেম্বরেও এই মূল্যসূচকের লাগামছাড়া বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Consumer Price Index CPI Inflation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE