মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
এ যেন উলটপূরাণ। খোদ বাণিজ্য মন্ত্রকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, মে মাসের হিসাবে গুজরাত, তামিলনাড়ু, কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশের মতো রাজ্যকে পিছনে ফেলে লগ্নি প্রস্তাবে এগিয়ে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। তবে একই সঙ্গে পরিসংখ্যানে উঠছে কিছু প্রশ্নও। কারণ, দেখা যাচ্ছে যে দুই সংস্থার প্রস্তাবে ভর করে রাজ্যের এই এগিয়ে যাওয়া, তারা মূলত পশ্চিমবঙ্গেরই। ফলে শিল্পের একাংশের প্রশ্ন, তা হলে কি ভিন্ রাজ্য থেকে এখানে লগ্নিতে অনীহা দেখা যাচ্ছে?
বাণিজ্য মন্ত্রক জানাচ্ছে, মে মাসে পশ্চিমবঙ্গ ২টি সংস্থা থেকে পেয়েছে ১৫১৪ কোটি টাকার শিল্প প্রস্তাব। যেগুলিতে কর্মসংস্থান হতে পারে ৩৪১৯ জনের। সেখানে এই সময়ে গুজরাত পেয়েছে ১,০৫৩ কোটি, তামিলনাড়ু ২৭৩ কোটি, অন্ধ্রপ্রদেশ ৭৮২ কোটি ও কর্নাটক ১১৭ কোটির প্রস্তাব। বাংলার আগে তালিকায় রয়েছে মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, ওড়িশা ও উত্তরপ্রদেশ। তথ্য অনুসারে, এ রাজ্যে আসা প্রকল্পের একটি পিয়ারলেস গোষ্ঠীর ৫০০ শয্যার হাসপাতাল। অন্যটি জুপিটার রিনিউবল্সের ১৮০০ মেগাওয়াটের সোলার সেল কারখানা।
আর এখানেই শিল্পের একাংশ বলছে, তা হলে কি সত্যিই রাজ্যের বাইরে থেকে নতুন কোনও সংস্থা এখানে বড় লগ্নি করতে এগিয়ে আসছে না? জানুয়ারি-এপ্রিলে যখন বড় প্রস্তাব এসেছিল, তখনও তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ক্যাপ্টেন স্টিল, ইন্ডিয়ান অয়েল, এপিজে সুরেন্দ্র গোষ্ঠীর মতো রাজ্যে ইতিমধ্যেই পুঁজি ঢালা সংস্থাগুলির নতুন প্রস্তাব। এই প্রসঙ্গে ভারত চেম্বারের সভাপতি এন জি খেতান আগেই জানিয়েছিলেন, বাংলা নিয়ে বাইরের লগ্নিকারীদের মনোভাব ইতিবাচক নয়। রাজ্যের জমি নীতি, উৎসাহ প্রকল্প শিল্প স্থাপনের সহায়ক নয়। তাই যারা এখানে আগেই টাকা ঢেলেছেন, তারাই সাধারণত লগ্নির প্রস্তাব দেন।
যদিও এই দাবি মানতে নারাজ অর্থনীতিবিদ অজিতাভ রায়চৌধুরী। তিনি বলেন, “যে সব সংস্থা লগ্নি করে মুনাফা করেছে, তারাই ফের রাজ্যে পুঁজি ঢালছে। এটা তো ভাল বিষয়। এই গতি বজায় থাকলে রাজ্যেরই মঙ্গল। কারণ, এক সংস্থাই একাধিকবার লগ্নি করে ব্যবসা সম্প্রসারণ করলে বাইরের লগ্নিকারীদের কাছে ইতিবাচক বার্তাই যাবে।” অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকার অবশ্য জোর দিচ্ছেন রাজ্যের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে লগ্নিকারীদের মনোভাব বদল ও শিল্প ক্ষেত্রে শান্তি বজায় রাখার উপরে। তিনি বলেন, “ধর্মঘট বন্ধ বা আইন-শৃঙ্খলার উন্নতির কারণেই এই ইতিবাচক সাড়া। তবে ফল মিলতে সময় লাগে। সরকার আগে যে সব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এই লগ্নি প্রস্তাবে তারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে।”
উল্লেখ্য, জানুয়ারিতে রাজ্যে প্রস্তাব এসেছিল ১৬,২৬১ কোটি টাকার। ফেব্রুয়ারি ও মার্চে যথাক্রমে ২২৬৯ কোটি ও ৫৭০ কোটির। এপ্রিলে মাত্র ১৯৩ কোটি। মে-তে সেটা অনেকটাই বেশি। শিল্পপতি হর্ষ নেওটিয়ার কথায়, “এটা রাজ্যের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক ঘটনা। তবে শুধু বড় শিল্প নয়। মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পেও বাংলা অন্য বহু রাজ্যের চেয়ে এগিয়ে। প্রস্তাবগুলি বাস্তবায়িত হলে এখানে কর্মসংস্থানের চেহারা অনেকটাই বদলাবে।’’ আর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের এক শিল্পকর্তা বলছেন, বছর শেষে লগ্নি প্রস্তাবের সামগ্রিক চিত্রটা স্পষ্ট হবে। তখনই মন্তব্য করা ঠিক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy