Advertisement
E-Paper

দিশা দেখছে না ছোট শিল্পমহল

ঋণ হয়তো এ বার সহজলভ্য হবে। কিন্তু বাজারে নগদের জোগান না-বাড়লে চাহিদার হাল ফিরবে কী করে? আর নোট বাতিলের পরে চাহিদার অভাবেই তো ভুগছে ছোট ও মাঝারি শিল্প।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:০১

ঋণ হয়তো এ বার সহজলভ্য হবে। কিন্তু বাজারে নগদের জোগান না-বাড়লে চাহিদার হাল ফিরবে কী করে? আর নোট বাতিলের পরে চাহিদার অভাবেই তো ভুগছে ছোট ও মাঝারি শিল্প। শনিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্য শোনার পরে এই শিল্পের অনেকেরই প্রশ্ন, চাহিদা বৃদ্ধির বিষয়ে আশ্বাস মিলল কই? ব্যাঙ্ক থেকে ক্রেতার হাতে টাকা পৌঁছনোর রাস্তা সহজ করার কোনও দিশা প্রধানমন্ত্রী দিতে না-পারায় এখনই ব্যবসায় মন্দার দুষ্টচক্র থেকে বেরোনোর আশা দেখছে না শিল্পমহল।

গত ৮ নভেম্বর ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল করা ও ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলার উপর নিয়ন্ত্রণ আনার জেরে কেনাকাটায় রীতি মতো প্রভাব পড়ে বলেই দাবি ছোট-মাঝারি শিল্পের। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, একেবারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনা ছাড়া বাড়তি খরচ করার ক্ষেত্রে দ্বিধায় ছিলেন প্রায় সকলেই। এর ফলে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হয় ছোট-মাঝারি শিল্প ও অসংগঠিত ক্ষেত্রের। চাহিদার অভাবে উৎপাদন কমিয়ে দেয় অনেক সংস্থাই। ছাঁটাই হন বহু কর্মী।

প্রধানমন্ত্রী এ দিন কী বলেন, সে দিকে আর সকলের সঙ্গেই তাকিয়ে ছিল ছোট-মাঝারি শিল্পও। মোদী জানিয়েছেন, ‘ক্রেডিট গ্যারিন্টি’ প্রকল্পে ব্যাঙ্ক থেকে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণের ক্ষেত্রে এই শিল্পকে কিছু বন্ধক রাখতে হবে না। পাশাপাশি, ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক সংস্থাও এ বার এই প্রকল্পের আওতায় আসবে। ব্যাঙ্কে প্রকল্প জমা দেওয়ার সময়ে কার্যকরী মূলধনের হিসেব এখন থেকে মোট ব্যবসার ২০ শতাংশের বদলে ৩০ শতাংশ হবে। ফলে শিল্প সংস্থার হাতে কার্যকরী মূলধনের জোগান বাড়বে। এ ছা়ড়া নগদহীন লেনদেন করলে সংস্থার করের হার আগেই কমানোর কথা জানিয়েছিল কেন্দ্র। মোদী এ দিন সেটি ফের উল্লেখ করেছেন।

বন্ধক ছাড়া ঋণের অঙ্ক ও বহর বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন ছোট-মাঝারি শিল্পের সংগঠন ফিসমি-র সেক্রেটারি জেনারেল অনিল ভরদ্বাজ, ফসমি-র প্রেসিডেন্ট বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য, এমসিসি চেম্বারের প্রেসিডেন্ট হেমন্ত বাঙ্গুর প্রমুখ। তাঁদের বক্তব্য, দীর্ঘদিন ধরেই এই দাবি করছিল ছোট ও মাঝারি শিল্প।

অবশ্য অর্থ জোগানের নিশ্চয়তা বৃদ্ধি পাওয়ার এই স্বস্তির মধ্যেও অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন অর্থনীতির চাকা ঘোরা এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে বাজারে চাহিদা বৃদ্ধির নিশ্চয়তা নিয়ে। যেমন অনিলবাবুর দাবি, নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের পর থেকে চাহিদার সঙ্কোচনে ভুগছিল ছোট ও মাঝারি শিল্প। সেই চাহিদা কী ভাবে বাড়বে, তা নিয়ে কোনও দিশা এ দিন মেলেনি বলেই মত তাঁর। তিনি বলেন, ‘‘এই শিল্প চাহিদার হাল নিয়ে এখনও চিন্তায়। হয়তো বাজেটে অর্থমন্ত্রী কোনও করছাড়ের সিদ্ধান্ত নিলে মানুষের হাতে টাকা আসবে। চাহিদা বাড়বে।’’ পাশাপাশি, নোট বাতিলের জেরে কী কী সাফল্য এল, তার স্পষ্ট কোনও ছবি এ দিন না-পাওয়ার জন্যও হতাশ তিনি।

চাহিদার সঙ্কোচন এখনও চলবে বলে মনে করেন ভারত চেম্বারের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এন জি খেতান-ও। তাঁর কথায়, ‘‘সামাজিক উন্নয়নই এ দিন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের মূল সুর ছিল। শিল্পের জন্য তেমন কিছু ছিল না। ব্যাঙ্কে টাকা থাকলেও মানুষের হাতে টাকা কোথায়? ফলে চাহিদা এখনই বাড়বে না।’’

এ নিয়ে অবশ্য পুরোপুরি সহমত নন বিশ্বনাথবাবু। তাঁর মতে, গোড়ায় নগদের টানের প্রভাব ছিল। তবে মূলত ভোগ্যপণ্যের চাহিদা কমায় যে-সব ছোট-মাঝারি সংস্থা সেগুলি তৈরি করে, তাদের বেশি সমস্যায় পড়তে হয়। কিন্তু অন্যান্য পণ্যের চাহিদা তেমন কমেনি। ফলে তাঁর দাবি, মূলত বড় শিল্পের জন্য কাঁচা মাল তৈরি করে এমন ছোট বা মাঝারি সংস্থায় চাহিদার সঙ্কট নেই।

মন্দার পুরোটা কাটতে যে সময় লাগবে, তা অবশ্য মানছেন হেমন্তবাবু। তবে তাঁর যুক্তি, সুদের হারে ছাড়-সহ মোদীর অন্যান্য ঘোষণার জেরে ছোট ও মাঝারি শিল্পের খরচ কমবে। যা তাদের নিট মুনাফা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। এর ফলে মন্দার প্রভাব কিছুটা পুষিয়ে যাবে।

নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের পরে নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ও আমলারা দাবি করেছিলেন, এর প্রভাব স্বল্প মেয়াদি। দীর্ঘ মেয়াদে সুফল মিলবে। ছোট ও মাঝারি শিল্প সেই দীর্ঘমেয়াদি সুফলের দিকেই আপাতত তাকিয়ে।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy