আর মাত্র দু’দিন। তার পরেই শুক্রবার সরকার জানাবে জুলাই-সেপ্টেম্বরে (চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক) দেশের অর্থনীতি কী রকম গতিতে বেড়েছে। প্রথম ত্রৈমাসিক অর্থাৎ এপ্রিল-জুনে আর্থিক বৃদ্ধির হার প্রত্যাশা ছাপিয়ে ৭.৮% ছোঁয়ার পরে এ বার তার গতি শ্লথ হওয়ার আশঙ্কা বলে মনে করছে বিভিন্ন আর্থিক এবং মূল্যায়ন সংস্থা। এমনকি খোদ রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কও অক্টোবরের ঋণনীতিতে তা ৭ শতাংশে রেখেছে। এই অবস্থায় সময় যত এগোচ্ছে, ততই বাড়ছে জল্পনা।
আর সেই চর্চাকে আরও উস্কে দিয়ে মঙ্গলবার সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের এক সমীক্ষা জানাল, সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির হার দাঁড়াতে পারে ৭.৩%। অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে কথা বলে এই রিপোর্ট তৈরি করেছে তারা। বেশির ভাগই বলেছেন, দেশে বেসরকারি লগ্নিতে এখনও খরা। শহরে চাহিদাও তেমন ছন্দে ফেরেনি। তবে এই সব ক্ষত কিছুটা মেরামত করতে পারে গ্রামে খরচ বৃদ্ধি। অপর এক দাওয়াই সরকারি খরচ। ৬১ জন অর্থনীতিবিদদের মধ্যে এই সমীক্ষা চালানো হয় গত ১৮-২৪ নভেম্বর। সেখানে সব মিলিয়ে আর্থিক বৃদ্ধির যে পূর্বাভাস উঠে এসেছে, তার বিস্তার ৬.০% থেকে ৮.৫ শতাংশের মধ্যে।
এর আগে মূল্যায়ন সংস্থা ইন্ডিয়া রেটিংস বলেছিল, সেপ্টেম্বরের আর্থিক বৃদ্ধি দাঁড়াতে পারে ৭.২%। স্টেট ব্যাঙ্কের গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, তা হবে ৭.৫%। আর ইক্রার ধারণা, তা সীমাবদ্ধ থাকবে ৭ শতাংশে। এ দিন মূল্যায়ন বহুজাতিক মুডি’জ়-এর দাবি, আয়কর ছাঁটাই এবং জিএসটি-র হার কমানোর সিদ্ধান্তের জেরে সরকারের রাজস্ব আদায় কমতে পারে। ফলে অর্থনীতিতে গতি আনার জন্য পুঁজি ঢালার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে পারে তারা। সেপ্টেম্বরের পূর্বাভাস তারা দেয়নি। শুধু বলেছে, সব মিলিয়ে পরের অর্থবর্ষে কিছুটা ধাক্কা খেতে পারে আর্থিক বৃদ্ধির হার। ভারতের পণ্যে আমেরিকার চাপানো ৫০% শুল্ক যে দেশের অর্থনীতিকে দোলাচলে রাখছে, তা-ও মনে করাচ্ছে মুডি’জ়। যদিও এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে জিডিপি-র হারে গতি আসা এবং আমেরিকার শুল্কের ততটা প্রভাব না পড়ায় চলতি অর্থবর্ষে ভারতের বৃদ্ধির পূর্বাভাস বাড়িয়েছে ইন্ডিয়া রেটিংস। তাদের বক্তব্য, এ বছর তা হবে ৭%। জুলাইয়ে পূর্বাভাস ছিল ৬.৩%।
ভারতে ডয়েশ ব্যাঙ্কের মুখ্য অর্থনীতিবিদ কৌশিক দাস বলেছেন, ‘‘দেশের আর্থিক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মূল চালিকাশক্তি হবে বাজারের চাহিদা এবং কেন্দ্রীয় সরকারের মূলধনী খরচই। এই দু’টিতে ভর করেই বৃদ্ধির হার নির্ধারিত হবে। তবে আন্তর্জাতিক অনিশ্চয়তার জেরে সরকারের মূলধনী খরচ বৃদ্ধির গতি শ্লথ হতে পারে।’’ অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন, মধ্যবর্তী মেয়াদে আর্থিক বৃদ্ধির হার অবশ্য মন্থরই হতে পারে। তৃতীয় ত্রৈমাসিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) তা দাঁড়াতে পারে ৬.৮% আর আগামী জানুয়ারি-মার্চে আরও কমে ৬.৩%।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)